বৈধ অভিবাসনে উৎসাহ এবং অবৈধ মানবপাচার মোকাবিলা করার জন্য মাইগ্রেশন অ্যান্ড মবিলিটি সমঝোতা নিয়ে ইতালির সঙ্গে আলোচনা করছে সরকার। সব কিছু ঠিক থাকলে ইতালির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ম্যাতেও পিয়ান টেডিওসের ঢাকা সফরের সময়ে এই সমঝোতা স্মারক সই হতে পারে। সোমবার (৫ মে) তিনি দুই দিনের সফরে ঢাকায় এসে পৌঁছাবেন এবং প্রধান উপদেষ্টা, স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা ও পররাষ্ট্র উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠক করবেন।
এ বিষয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা বলেন, ‘আমরা অনেক দিন ধরে এই চুক্তি নিয়ে ইতালির সঙ্গে আলোচনা করছি। আমাদের পক্ষ থেকে প্রস্তুতি সম্পন্ন আছে।’
এই সমঝোতার মাধ্যমে বৈধ পথে দক্ষ কর্মী পাঠানোকে উৎসাহিত করা হয়েছে। একইসঙ্গে অবৈধ পথে মানবপাচার বন্ধে দুই দেশ কীভাবে কাজ করতে পারে, সে বিষয়ে সমঝোতা থাকবে বলে তিনি জানান।
আরেক কর্মকর্তা বলেন, ‘এর আগে ২০২২ সালে গ্রিসের সঙ্গে মাইগ্রেশন অ্যান্ড মবিলিটি চুক্তি হয়েছে। যদিও ওই চুক্তিতে গ্রিসে অবৈধভাবে অবস্থানকারী বাংলাদেশিদের বৈধ করে নেওয়ার বিষয় রয়েছে।’
কী আছে মাইগ্রেশন সমঝোতায়
বৈধ পথে মানুষ পাঠানো দুই দেশের জন্য উপকারী এবং ইতালিতে কর্মীর অভাব রয়েছে। অন্যদিকে বাংলাদেশের রয়েছে দক্ষ শ্রমিক।
মাইগ্রেশন অ্যান্ড মবিলিটি সমঝোতার মাধ্যমে নিরাপদ ও সঠিকভাবে অভিবাসনকে উৎসাহিত করা হয়েছে এবং অবৈধ পথে মানবপাচার বন্ধে দুই দেশের একত্রে কাজ করার কথা বলা হয়েছে। একইসঙ্গে কর্মীদের দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য প্রশিক্ষণ ও সহায়তা দেওয়ার বিষয়টি উল্লেখ করা হয়েছে।
বিদেশি কর্মী
২০২৩ থেকে ২০২৫-এর মধ্যে ফ্লুসি অ্যারেঞ্জমেন্টের আওতায় ৪ লাখ ৫২ হাজার বিদেশি কর্মী নেবে ইতালি। এর মধ্যে বাংলাদেশ থেকে কয়েক হাজার দক্ষ কর্মী নেওয়ার বিষয়ে একমত হয়েছে দেশটি। একইসঙ্গে বাড়তি কিছু মৌসুমি কর্মীও নেবে।
এ বিষয়ে একটি কূটনৈতিক সূত্র জানায়, ইতালিতে দক্ষ কর্মীর অভাব রয়েছে। ফলে ইতালি বিভিন্ন দেশ থেকে শ্রমিক নিয়ে থাকে। এছাড়া কৃষিকাজের জন্য মৌসুমি কর্মীও নিয়ে থাকে। উভয় ক্ষেত্রে বাংলাদেশ থেকে কর্মী নেয় ইতালি।
তিনি বলেন, ‘সাম্প্রতিক সময়ে ইতালিতে ৬০ হাজার কর্মী ভিসার জন্য আবেদন করে এবং এর একটি বড় অংশ জাল কাগজ নিয়ে আবেদন করার কারণে বর্তমানে ভিসা জটিলতা দেখা দিয়েছে।’
ইতালির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে এ বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হবে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমাদের পক্ষ থেকে বিষয়টি দ্রুত সুরাহা করার জন্য অনুরোধ করা হবে। ইতোমধ্যে ভিসার কাগজপত্র জাল কিনা সেটি পরীক্ষা করার জন্য বাংলাদেশে ইতালির দূতাবাসে লোকবল বৃদ্ধি করা হচ্ছে বলে আমাদের জানানো হয়েছে।’
ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা
বৈধ পথে দক্ষ কর্মী পাঠানো হলে উভয় দেশই লাভবান হবে। একদিকে যেমন ইতালির মতো উন্নত দেশে কাজ করে অধিক পরিমাণ রেমিট্যান্স দেশে পাঠানো সম্ভব হবে, অন্যদিকে অভিবাসীরা দেশে ফেরত আসার সময় নতুন নতুন আইডিয়া নিয়ে আসতে পারবে।’
এ বিষয়ে আরেকজন কর্মকর্তা বলেন, ‘আমরা চাইছি বৈধ পথে পাঠানোর জন্য বিভিন্ন দেশের সঙ্গে অ্যারেঞ্জমেন্ট তৈরি করতে। সিঙ্গাপুর, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়াসহ আরও কয়েকটি দেশে দক্ষ শ্রমিক পাঠানোর জন্য দ্বিপাক্ষিক অ্যারেঞ্জমেন্ট আছে এবং সেগুলো সুন্দরভাবে কাজ করছে। আমরা ইতালির সঙ্গেও এ ধরনের একটি অ্যারেঞ্জমেন্ট তৈরি করতে চাইছি।’