উদ্বোধন ১০ এপ্রিল

অনিয়ম দিয়েই চালু হচ্ছে কেরানীগঞ্জের কেন্দ্রীয় কারাগার!

 

কেরানীগঞ্জে নবনির্মিত ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার কেরানীগঞ্জে স্থানান্তরের আগেই বিভিন্ন অনিয়ম ও সমস্যায় আক্রান্ত হচ্ছে । কেরানীগঞ্জে নবনির্মিত ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারটির নির্মাণে নানা ত্রুটি ও অনিয়ম নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন কারা অধিদফতরের মহাপরিদর্শক (আইজি প্রিজন্স) ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সৈয়দ ইফতেখার উদ্দীন । স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অধীন সংস্থাগুলোর উন্নয়ন প্রকল্পগুলোর বাস্তবায়ন নিয়ে সর্বশেষ অনুষ্ঠিত অগ্রগতি পর্যালোচনা সভায় তিনি এ অসন্তোষ প্রকাশ করেন। এরইমধ্যে আগামী ১০ এপ্রিল কেরানীগঞ্জের নবনির্মিত কেন্দ্রীয় কারাগারটি প্রধানমন্ত্রী উদ্বোধন করতে পারেন বলে জানান সংশ্লিষ্টরা।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অধীন উন্নয়ন প্রকল্পগুলোর জুলাই ২০১৫ থেকে জানুয়ারি ২০১৬ পর্যন্ত বাস্তবায়ন অগ্রগতি নিয়ে মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে পর্যালোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয় গত ২৯ ফেব্রুয়ারি। সিনিয়র সচিব ড. মোজাম্মেল হক খানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত ওই সভায় মন্ত্রণালয়ের অধীন সংস্থাগুলোর শীর্ষ কর্মকর্তারা ছাড়াও প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়, অর্থ মন্ত্রণালয়, পরিকল্পনা কমিশন, পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়, গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় ও স্থাপত্য অধিদফতরসহ সংশ্লিষ্ট দফতরগুলোর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ওই বৈঠকে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার কেরানীগঞ্জে স্থানান্তর ও এর সামগ্রিক বিষয়ে আলোচনা হয়। জানতে চাওয়া হয় এর অগ্রগতির বিষয়েও। তখন কেরানীগঞ্জের প্রকল্প পরিচালক বলেন, একটি ব্যারাক ছাড়া সব ভৌত নির্মাণ কাজ শেষ হয়েছে। এছাড়া, নির্মাণ কাজের যে সব ত্রুটি-বিচ্যুতি ছিল, সেটাও সংশোধন করা হয়েছে।

এ সময় সভায় উপস্থিত আইজি প্রিজন্স ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সৈয়দ ইফতেখার উদ্দীন কারাগার নির্মাণের নানা অনিয়ম ও ত্রুটি-বিচ্যুতি তুলে ধরেন। তিনি বলেন, কারাগারের জন্য গণপূর্ত অধিদফতরের উড ওয়ার্কসপ থেকে আসবাবপত্র সরবরাহ করা হয়েছে। যার বেশির ভাগেরই গুণগত মান ও পরিমাপ সঠিক হয়নি। তখন আসবাবপত্রের গুণগত মান ও পরিমাপ সঠিক না করে দেওয়া পর্যন্ত তা গ্রহণ না করা এবং নির্মাণ প্রকল্পের ত্রুটি-বিচ্যুতি দ্রুত সংশোধনের জন্য সভার সভাপতি সংশ্লিষ্টদের নির্দেশনা দেন।

সূত্র আরও জানায়, কেরানীগঞ্জ নির্মাণাধীন কারাগারের অভ্যন্তরীণ ড্রেন সম্প্রসারণের লক্ষ্যে আইন ও পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিবকে সভাপতি করে একটি কমিটি গঠন করে ১৫ দিনের মধ্যে প্রতিবেদন দেওয়ার সিদ্ধান্ত থাকলে তিনি অন্যত্র বদলি হয়ে যাওয়ায় সেটারও কোনও অগ্রগতি হয়নি।

এসব বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের বক্তব্য জানা যায়নি। তবে কারা অধিদফতরের মহা-পরিদর্শক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সৈয়দ ইফতেখার উদ্দীন এ বিষয়ে বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, তিনি যে সব সমস্যার কথা সভায় উপস্থাপন করেছিলেন, সেগুলোর এখনও কোনও সমাধান হয়নি। তিনি বলেন, এতবড় একটি কেন্দ্রীয় কারাগারে যে ড্রেন নির্মাণ করা হয়েছে সেটি বাসা-বাড়ির ড্রেন হয়ে গেছে। কেন্দ্রীয় কারাগারের ড্রেন হয়নি। সেই ড্রেনের সম্প্রসারণের কাজও আগের অবস্থাতেই রয়েছে। আসবাবপত্রের বিষয়ে নেওয়া সিদ্ধান্তেরও কোনও অগ্রগতি হয়নি বলে জানান তিনি।

কারা অধিদফতর সূত্র জানায়, দক্ষিণ কেরানীগঞ্জের তেঘরিয়া ইউনিয়নের রাজেন্দ্রপুরে ১৯৪ একরের বেশি জমিতে তৈরি হয়েছে নতুন ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার। এরমধ্যে ৩০ একর জমিতে  বন্দিদের জন্য ভবন নির্মাণ কাজ চলছে। এসব ভবনে চার হাজার পুরুষ ও আলাদা ভবনে ২০০ নারী  বন্দির ধারণক্ষমতা রয়েছে। তবে, আট হাজারের মতো  বন্দি অনায়াসে থাকতে পারবেন। ১৭৮৮ সালে পুরান ঢাকার নাজিম উদ্দিন রোডে নির্মিত হওয়া বর্তমান ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের  বন্দি ধারণ ক্ষমতা রয়েছে ২ হাজার ৮২৬ জনের। আছেন প্রায় আট হাজার। নারী  বন্দি রয়েছেন দেড়শতাধিক। নতুন কারা ভবনগুলোতে  বন্দি রাখার সেল, নিরাপত্তা টাওয়ার, ফাঁসির মঞ্চ থেকে শুরু করে সবকিছুর ত্রুটি-বিচ্যুতি চিহ্নিত করার জন্য একটি কমিটিও রয়েছে কারা অধিদফতরের।

কারাগারের বাইরে কারা কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পরিবারের জন্য আলাদা ভবন, অফিসার্স ক্লাব, স্টাফ ক্লাব, স্কুল, মসজিদ, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানসহ সভার জন্য মিলনায়তনও নির্মাণ করা হচ্ছে বলে জানান সংশ্লিষ্টরা।

ছবি: ওমর ফারুক

/এমএনএইচ/আপ- এপিএইচ /