ঘটনাটি ২১ এপ্রিল বৃহস্পতিবারের। ইন্ডিগোর সিক্স ই-৩২৬ যে বিমানটি বিকেল পৌনে তিনটে নাগাদ কলকাতা থেকে ছেড়ে মুম্বাইতে আসে– সেটিতেই যাত্রী ছিলেন অসীম কুমার ভৌমিক। বিমান আকাশে ওড়ার পর থেকেই প্লেনের ভেতর চার যাত্রীর একটি দল তাদের মোবাইলফোন বের করে বিমানবালাদের ছবি তুলতে শুরু করে বলে জানা গেছে। প্রথমে বিরক্ত বিমানসেবিকারা তাদের নিষেধ করেন, কিন্তু চারজনের কেউই তাতে কান দেননি।
এই চারজনেরই অন্যতম ছিলেন অসীম ভৌমিক। বাকি তিনজন একসঙ্গেই টিকিট কেটেছিলেন কিংবা একই গ্রুপের অংশ ছিলেন কিনা সেটা স্পষ্ট নয়, কিন্তু বিমানের সহযাত্রীরা বলেছেন, চারজন মিলেই বিমানবালাদের ছবি তুলে যাচ্ছিলেন এবং কোনও নিষেধে কর্ণপাত না করে উচ্চস্বরে হেসেও চলছিলেন।
পরিস্থিতি এর পরই বেশ খারাপে মোড় নেয়। বিরক্ত বিমানবালারা সরাসরি নালিশ জানান বিমানের পাইলটকে – যার নির্দেশে ক্রু মেম্বারদের একজন এসে জোর করে ওই চারজনের কাছ থেকে মোবাইলফোন কেড়ে নেন। তখন বিমানের নিয়মকানুন পড়ে শুনিয়ে ওই চারজনকে জানিয়েও দেওয়া হয় এবং মুম্বাইতে এয়ারপোর্ট কন্ট্রোল রুমে তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগও দায়ের করা হচ্ছে বলে জানানো হয়।
যে কথা সেই কাজ। বিকেল সাড়ে পাঁচটা নাগাদ সিক্স ই-৩২৬ মুম্বাইতে ল্যান্ড করার পরই অভিযুক্ত চার যাত্রীকে আটক করতে যান নিরাপত্তারক্ষীরা। কিন্তু তাদের মধ্য থেকে একজন কোনওভাবে পালিয়ে যান। বাকি তিনজনকে ডোমেস্টিক টার্মিনালের পুলিশ নিজেদের বুথে যায়। সেখানে ওই বিমানের এয়ারহোস্টেসদের একজন এসে লিখিত অভিযোগও দায়ের করেন। সেই এফআইআরের ভিত্তিতেই তিনজনের মধ্য থেকে পরে মাত্র একজনকে গ্রেফতার করা হয়। মুম্বাই পুলিশ জানিয়েছে, তিনি বাংলাদেশি নাগরিক অসীম কুমার ভৌমিক, তার বয়স ৩৮ বছর।
আরও পড়ুন:
মুম্বাই পুলিশের ডেপুটি কমিশনার বীরেন্দ্র মিশ্র বৃহস্পতিবার বাংলা ট্রিবিউনের কাছে এই গ্রেফতারের খবর নিশ্চিত করে জানিয়েছেন, ৩৫৪ ধারাতেই অসীম কুমার ভৌমিকের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে। এই ধারায় কোনও নারীকে লাঞ্ছিত করার অভিযোগে সর্বোচ্চ দুই বছর মেয়াদের জেল ও জরিমানা, কিংবা দুটোই হতে পারে। তবে মি. ভৌমিককে ঠিক কখন আদালতে পেশ করা হচ্ছে তা মি. মিশ্র জানাতে পারেননি, যদিও এজন্য ২৪ ঘণ্টা সময়সীমার মেয়াদ এখনও শেষ হয়নি।
তবে এ ঘটনায় কোনও মন্তব্য করতে রাজি হয়নি ইন্ডিগো এয়ারলাইন্স কর্তৃপক্ষ। তাদের এক মুখপাত্র শুধু জানিয়েছেন, ‘মুম্বাই পুলিশ বিষয়টির তদন্ত করছে, আমাদের এই মুহূর্তে কিছু বলার নেই’!
তবে পুরো ঘটনায় এখনও অনেক প্রশ্নের জবাব মেলেনি। চারজন মিলে বিমানবালাদের ছবি তুলছিলেন, তার মধ্যে শুধু কেন অসীম কুমার ভৌমিককেই গ্রেফতার করা হলো? বাকি তিনজন কি ভারতীয় নাগরিক, নাকি তারাও বাংলাদেশের? এরা কি একসঙ্গে একটা দলে ছিলেন? প্লেন ল্যান্ড করার পর বিমানবন্দরের সুরক্ষিত এলাকায় কড়া নজরদারির ভেতরেও অভিযুক্তদের একজন কিভাবে সরে পড়তে পারলেন? মুম্বাই পুলিশ বা ইন্ডিগো কর্তৃপক্ষের কেউ এখনও এসবের কোনও জবাব দেননি।
আরও পড়ুন:
/এএইচ/