যে কাঠ হীরার চেয়েও দামি!

কিছু গাছ আছে যেগুলো থেকে পাওয়া যায় সুগন্ধি তৈরির প্রাকৃতিক উপকরণ। প্রজাতিটা আগর গাছ নামে বেশি পরিচিত। বাণিজ্যিকভাবেও এ গাছের বাগান করা হয়। বিশেষ প্রক্রিয়ায় ছত্রাকের সংক্রমণ ঘটিয়ে এ ধরনের গাছে তৈরি করা হয় কালচে-বাদামি রঙের ‘আগর কাঠ’। বুনো পরিবেশে যদি এমন ‘আগর কাঠ’ পাওয়া যায় তবে সেটার দাম বেড়ে যায় বহুগুণ। এমনকি দামের দিক দিয়ে এটি হীরাকেও ছাড়িয়ে যেতে পারে। তেমনই এক ধরনের আগর কাঠ হলো জাপানের ‘কিনাম’। যার এক গ্রাম বিক্রি হয়েছে ৮ লাখ টাকায়ও!

কিনাম মূলত কোনও গাছের নাম নয়। আকুইলারিয়া গোত্রের ১৫টি প্রজাতির গাছে প্রাকৃতিক উপায়ে তৈরি হতে পারে ‘কিনাম কাঠ’। বনে-জঙ্গলে ওই কিনাম কাঠ খুঁজে পাওয়া মানে গুপ্তধন পাওয়া। কেননা, কিনাম থেকে যে সুগন্ধি তেল সংগ্রহ করা হয়, বিশ্বের যাবতীয় সুগন্ধির মধ্যে সেটাকেই সবচেয়ে দুর্লভ ও দামি গণ্য করা হয়। চীনের সাংহাইতে তিন বছর আগে একবার দুই কেজি কিনাম বিক্রি হয়েছিল এক কোটি ৮০ লাখ ডলারে। অর্থাৎ প্রতি গ্রামের দাম পড়েছিল ৯ হাজার ডলার।

কিনাম কাঠ

বুনো আকুইলারিয়া একসময় জাপানের জঙ্গলে পাওয়া গেলেও আগর কাঠশিকারিদের কারণে এটি এখন দেশটিতে পাওয়াই যায় না। ক্যাম্বোডিয়ার একটি মন্দিরে আছে ২০০ বছরের পুরনো একটি আকুইলারিয়া গাছ। কয়েক বছর আগে সেখানে কিনাম পাওয়া গিয়েছিল। সেই খবর পেয়ে জাপানি ক্রেতারা ২ কোটি ৩০ লাখ ডলারে কিনতে চেয়েছিল গাছটি। কিন্তু মন্দির কর্তৃপক্ষ তাদের প্রস্তাব ফিরিয়ে দেয়। উল্টো ‘বিশ্বের সবচেয়ে দামি গাছ’ তকমা পাওয়ায় দেশটির সরকার ওই গাছের সুরক্ষায় একটি মিলিটারি চেকপোস্ট বসায়।

কিনাম কাঠ দুষ্প্রাপ্য হওয়ার আরেকটি কারণ হলো এটি খালি চোখে শনাক্ত করা যায় না। ঠিক কোন গাছে কিনাম থাকতে পারে সেটা বুঝতে হলে ওই গাছের ছত্রাক আক্রান্ত অংশটি আগুনে পুড়িয়ে পরীক্ষা করতে হয়। পোড়ানোর আগ পর্যন্ত কিনাম কাঠ কোনও সুগন্ধও ছড়ায় না।

এ কারণেই মূলত জাপানসহ এশিয়ার আরও অনেক দেশের জঙ্গলে থাকা বুনো ও প্রাচীন আকুইলারিয়া প্রজাতির গাছগুলো হারিয়ে যেতে বসেছে। স্থানীয় অনেকেই কিনাম-এর লোভে কেটেছে অজস্র গাছ। যে কারণে কিনামও দিনে দিনে হয়ে উঠছে আরও দামি।