বিশ্বের সাত বিচিত্র উৎসব

উৎসব মানেই আনন্দের বহিঃপ্রকাশ। কিন্তু একটি উৎসব আরেকটির সঙ্গে মেলে না। কিছু উৎসব আপনাকে হাসাবে, কিছু উৎসব আপনার চোখ তুলে দেবে কপালে। বিশ্বের এমন কিছু বিচিত্র উৎসব নিয়ে এ আয়োজন।

 

পানির নিচে সংগীত উৎসব, যুক্তরাষ্ট্র

ঝরনার নিচে গান গাওয়া অনেকেরই পছন্দের বিনোদন। তবে অবাক হতে হয়, যখন দেখি পানির নিচে কোনও সংগীত উৎসবের আয়োজন করা হয়েছে। এমনই উৎসব দেখা যায় যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডার কয়েকটি।

song

রাজ্যটির কি’স প্রবাল প্রাচীর সংরক্ষণের জন্য সচেতনতা বাড়াতে ১৯৮০ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল ইভেন্টটি। ডুবুরি ও স্নরকেলাররা প্রতি বছর জুলাইতে পানিতে নামেন মাছ ও জলকন্যা সেজে। এরপর তারা ‘ফ্লুক-এ-লেলে’ ও ‘ট্রম-বোনফিশ’-এর মতো জলজ-থিমের বাদ্যযন্ত্র বাজান। পানির নিচে থাকা বিশেষ যন্ত্রপাতির মাধ্যমে সেই সংগীত চলে যায় স্থানীয় রেডিও স্টেশনে। এরপর উপভোগ করেন সবাই।

song2

 

আন্তর্জাতিক কেঁচো উৎসব, যুক্তরাজ্য

ইংল্যান্ডের ডেভনের ব্ল্যাকঅটন গ্রামে প্রতিবছর মে মাসে অনুষ্ঠিত হয় এক বিচিত্র উৎসব। যার নাম ‘ইন্টারন্যাশনাল ফেস্টিভ্যাল অব ওয়ার্ম চার্মিং।’ এই ওয়ার্ম মানে কেঁচো। উৎসবটির শর্ত হলো এতে ব্যক্তিগতভাবে যোগ দেওয়া যাবে না, দলগতভাবে যোগ দিতে হবে।

worm

প্রতিটি দলকে আবাদযোগ্য এক বর্গমিটার জমি এবং ১৫ মিনিট সময় দেওয়া হয়। এই ১৫ মিনিটে তারা সব ধরনের কৌশল প্রয়োগ করতে পারবে, কেবল মাটি খুঁড়তে পারবে না। ১৫ মিনিটে যে দল সবচেয়ে বেশি কেঁচো মাটির ওপর নিয়ে আসতে পারবে, তারাই বিজয়ী। প্রশ্ন হলো মাটি খনন না করে কীভাবে কেঁচো বের করে আনে তারা? সেটাই দেখার বিষয়।

কেউ মধুর সুরে বাঁশি বাজান কেঁচোদের আকৃষ্ট করতে, কেউবা মাটিতে ড্রাম রেখে বাজাতে থাকেন; যেন অতিষ্ঠ কেঁচোরা ওপরে উঠে আসে। কেউ আবার নির্ধারিত জায়গার একপাশে আগুনের তাপ দিতে থাকেন, যেন অন্য পাশে উঠে আসে কেঁচোরা। আবার অনেকে ধীরে ধীরে ঝিরিঝিরি পানি বর্ষণ করে মাটিতে, যেন কেঁচোদের কাছে মনে হয় বৃষ্টি নেমেছে।

 

বানরের ব্যুফে, থাইল্যান্ড

১৯৮৯ সালের দিকে থাইল্যান্ডের রাজধানী ব্যাংককের অদূরে থাকা একটি ছোট্ট শহর লোপবুরির ছোট প্রাকৃতিক বনে হাজারখানেক বানরের বাস ছিল। তখন পর্যন্ত পর্যটন শিল্প গড়ে ওঠেনি শহরটিতে। শহরটিকে জনপ্রিয় করতে ওই বছরের নভেম্বরে স্থানীয় এক ব্যবসায়ী শহরের হাজারখানেক বানরের জন্য এক বিশাল ব্যুফের আয়োজন করেন। যার নাম দেন মাংকি ব্যুফে! প্রথম বছরেই বাজিমাত করে উৎসবটি। পরের বছর থেকে বাড়তে থাকে মাংকি ব্যুফেতে বিনিয়োগকারী আর দর্শকের পরিমাণ।

monkey buffet festival

২০০০ সালে এই ব্যুফে পরিণত হলো জনপ্রিয় উৎসবে। এখন শহরটিতে ২-৩ হাজার বানরের বসবাস।   প্রতিবছর নভেম্বর মাসের প্রথম সপ্তাহের যেকোনও একদিন উদযাপিত হয় উৎসবটি। যেখানে বানরদের জন্য সাজিয়ে দেওয়া হয় পঞ্চাশোর্ধ্ব ফলমূল, কেক, চকলেট ইত্যাদি।

একদিকে উৎসবমুখর পরিবেশে বানররা ‘মাংকি ব্যুফে’ উপভোগ করে। অপরদিকে স্থানীয়রা বানরের মতো সেজে নৃত্য পরিবেশন করেন। এভাবেই আনন্দঘন পরিবেশে উদযাপিত হয় উৎসবটি।

 

গোবর নিক্ষেপ, ভারত

cowdung festival

গোবর উড়ে এসে শরীরে লাগলে সেটাকে পরম সৌভাগ্য মনে করা হয় ভারতের উত্তরপ্রদেশের একটি এলাকায়। প্রতি বছরের এপ্রিলে কাইরুপ্পালা শহরের বাসিন্দারা তাদের ‘উগাদি’ উৎসবের শেষে একে অপরের দিকে গোবর নিক্ষেপ করে। এই লড়াইকে স্বাস্থ্য, সমৃদ্ধি এবং বৃষ্টি নিয়ে আসার প্রতীক মনে করা হয়।

 

চুল-বরফ প্রতিযোগিতা, কানাডা

আরেক বিচিত্র কিন্তু গা কাঁপানো উৎসব আছে কানাডায়। নাম ‘হেয়ার ফ্রিজিং ডে’। শীত যাদের খুব প্রিয়, এ উৎসব তাদের জন্য। এই উৎসবের জনপ্রিয়তাও অনেক। কানাডার হোয়াইটরোজের তাকহিনি হোটেলের পুলে প্রতি বছর ফেব্রুয়ারিতে হয় এই উৎসব।

Capture

মাইনাস ৫ ডিগ্রি থেকে মাইনাস ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় পুলের পানিতে দাঁড়িয়ে থাকতে হবে। হবে হাড় কাঁপানো প্রতিযোগিতাও। চুলগুলো বরফের মতো জমে গেলে জিতবেন প্রতিযোগী।

Hair Freezing Contest

বাইরে একটু বেশি ঠান্ডা পড়লে পুলে গরম পানি রাখা হয়। নিয়ম হলো সেই পুলে ডুব দিয়ে চুল ভেজাতে হবে আগে। এরপর ভেজা চুলে দাঁড়িয়ে থাকতে হবে। বাকি কাজটা করে দেবে আবহাওয়া। দাঁড়ানোর কিছু সময় পরই দেখা যাবে চুল জমে বরফ হয়ে গেছে।

 

কাদা উৎসব, দক্ষিণ কোরিয়া

দক্ষিণ কোরিয়ার বোরিয়ং শহরে জুলাই মাসে পর্যটক এবং স্থানীয়রা কাদায় সবচাইতে বেশি খুশি হন। দুই সপ্তাহ ধরে চলা বোরিয়ং মাড ফেস্টিভাল। সারা বিশ্বের লাল লাখ দর্শকদের আকর্ষণ করে এটি।

mud festival 2

উৎসবটি ’৯০ দশকের শেষের দিকে ওই অঞ্চলের কাদা-ভিত্তিক প্রসাধনীর প্রচারের জন্য শুরু হয়। পরে এটি পর্যটন আকর্ষণ হয়ে যায়। ডাইচন সৈকতে মাটির ট্রাক বোঝাই করা হয়। যেখানে উৎসবে অংশগ্রহণকারীরা কাদা-কুস্তি, কাদা-স্কিইং, কাদা-স্লাইড, এমনকি রঙিন কাদা দিয়ে বডি পেইন্টিংও করেন।

 

নাইট অব দ্য র‌্যাডিশ, মেক্সিকো

মেক্সিকোর ওয়াক্সাকা শহরে প্রতি বছরের ২৩ ডিসেম্বর পালিত হয় ‘নাইট অব দ্য র‌্যাডিশ’। শুরু হয়েছিল ১৯ শতকে। ওই সময় প্রথম সবজির তালিকায় লাল মুলার সন্ধান পায় স্প্যানীয়রা। এরপর থেকে তারা মুলা খোদাই করে নানা জিনিসপত্র বানিয়ে । ১৮৯৭ সালের ২৩ ডিসেম্বরকে আনুষ্ঠানিকভাবে এটাকে র‌্যাডিশের রাত হিসেবে ঘোষণা করা হয়।

night of the radish

প্রতিবছর ঐতিহাসিক স্থানীয় সংস্কৃতির থিমযুক্ত খোদাইয়ের প্রশংসা করতে পর্যটক এবং স্থানীয়রা ভিড় করেন। অনুষ্ঠানের জন্য মূলা প্রাথমিকভাবে স্থানীয় কৃষকদের কাছ থেকে নেওয়া হয়।

এখন এই প্রতিযোগিতা খুব জনপ্রিয়। যে কারণে প্রতিযোগীরা তাদের ভাস্কর্যের জন্য শহরের বাইরে বিশাল একটি মুলা বাগানও গড়ে তুলেছে। উৎসবে সেরা খোদাই করা মুলার মালিকের জন্য পুরস্কারও আছে।