কিছু ইস্যুতে নেতিবাচক হলেও প্রথম বছরে দুই মেয়রের কাজে সন্তুষ্ট রাজধানীবাসী

13এক বছরে নগরের সমস্যা সমাধানে মেয়রদের কার্যক্রমে ‘সন্তুষ্ট’ বলে জানিয়েছেন ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের বাসিন্দারা। দুই মেয়র দায়িত্ব নেওয়ার এক বছর পর বাংলা ট্রিবিউন পরিচালিত জরিপে এমন চিত্র পাওয়া গেছে। জরিপে অংশ নেন দুই সিটি করপোরেশনের ১৮০০ জন করে মোট ৩ হাজার ৬শ’ বাসিন্দা। জরিপে দেখা যায়, উত্তর সিটি করপোরেশন মেয়রের কার্যক্রমে ৬৯.৩৩ শতাংশ মানুষ খুশি। তবে দক্ষিণে এই হার তুলনামূলক কিছুটা কম, তবে এখানেও ৬০ শতাংশ নগরবাসী মেয়রের এক বছরের কার্যক্রমে সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন।

ফুটপাতগুলোও হাঁটার উপযোগী নয়
4

ফুটপাতে অবৈধ স্থাপনা, ছিন্নমূলদের দোকান, ময়লা আবর্জনা নগরবাসীদের কাছে নিয়মিত চিত্র। ‘আপনার এলাকায় ফুটপাতগুলো হাঁটার উপযোগী কি না’- এমন প্রশ্নের জবাবে দুই নগরের বাসিন্দারাই অসন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন। জরিপে দেখা যায়-  ঢাকা উত্তরের অংশগ্রহণকারীদের ৫৩.৭৮ শতাংশ মনে করেন ফুটপাতগুলো হাঁটার উপযুক্ত নয়।

দক্ষিণে এই চিত্র আরও ভয়াবহ। এখানকার অংশগ্রহণকারীদের ৬৫.৭২ শতাংশ এই প্রশ্নে ‘না’ জবাব দিয়েছেন।
5
দুই সিটি করপোরেশনের অংশগ্রহণকারীরাই মনে করেন, ফুটপাত অবমুক্তকরণে সিটি করপোরেশন যথেষ্ট ভূমিকা নিতে পারেনি। ঢাকা উত্তরে ৫১.২৮ শতাংশ মনে করেন ফুটপাত অবমুক্তকরণে সিটি করপোরেশনের ভূমিকা যথেষ্ট নয়। দক্ষিণে এই হার ৬১.১৭ শতাংশ।

মশার উপদ্রব কমেনি
10

নগরবাসীর হাজারো সমস্যার মধ্যে অন্যতম মশার উপদ্রব। নির্বাচিত মেয়রদের নির্বাচনি ইশতেহারেও ছিল মশক নিধনের বিষয়ে সুনির্দিষ্ট প্রস্তাবনা। তবুও গত এক বছরে নগরের এই সমস্যার সমাধান খুব একটা হয়নি বলেই মনে করেন বেশিরভাগ মানুষ। জরিপে অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে উত্তরের ৫১.৮৯ শতাংশ ও দক্ষিণের ৫৮.১৭ শতাংশ মনে করেন, গত এক বছরের মশার উপদ্রব কমেনি।


জলাবদ্ধতা নিরসন ও বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় এগিয়ে উত্তর
1

গত এক বছরে জলাবদ্ধতা সমস্যার কিছুটা উন্নতি হয়েছে বলে মনে করেন ঢাকা উত্তরের প্রায় ৫৭.৯৪ শতাংশ অংশগ্রহণকারী। অপরদিকে একই প্রশ্নের জবাবে ঢাকা দক্ষিণের ৫১.৩৩ শতাংশ অংশগ্রহণকারী মনে করেন জলাবদ্ধতা সমস্যার কোনও উন্নতি হয়নি।
2

বর্জ্য ব্যবস্থাপনায়ও ঢাকা দক্ষিণের চেয়ে উত্তরের সাফল্য বেশি বলে জানিয়েছেন অংশগ্রহণকারীরা। ঢাকা উত্তরের ৫৮.৫০ শতাংশ মনে করেন, বর্জ্য ব্যবস্থাপনার উন্নতি হয়েছে। দক্ষিণে ৫৪.২৮ শতাংশ মনে করেন বর্জ্য ব্যবস্থাপনার কোনও উন্নতি হয়নি।

গণপরিবহনের অনিয়ম কমেনি
6

গণপরিবহনগুলো ঠিক জায়গায় থামছে না বলেও মত দিয়েছেন নগরবাসী। বাংলা ট্রিবিউন পরিচালিত জরিপে দুই সিটি করপোরেশনের একই চিত্র উঠে এসেছে। উত্তরে ৫৯.২৮ শতাংশ ও দক্ষিণে ৬২.৯৪ শতাংশের মত- গণপরিবহন সঠিক জায়গায় থামে না।
7

এক্ষেত্রে উল্লেখ্য, ঢাকা উত্তর থেকে জরিপে অংশগ্রহণকারীদের ৮৩.১৭ শতাংশ জানিয়েছেন বাস স্ট্যান্ডে যাত্রী ছাউনিগুলো বসার উপযোগী নয়। অন্যদিকে দক্ষিণে এই চিত্র আরও খারাপ। দক্ষিণের অংশগ্রহণকারীদের ৯০.৯৪ শতাংশ মনে করেন যাত্রী ছাউনিগুলো বসার উপযোগী নয়।

 

বাচ্চাদের খেলাধুলার জায়গা কিছু থাকলেও তা খেলাধুলার উপযোগী নয়
9
জরিপে অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে উত্তর সিটি করপোরেশনের ৫৪.৬৭ শতাংশ ও দক্ষিণের ৬১ শতাংশ অংশগ্রহণকারী জানিয়েছেন তাদের এলাকায় বাচ্চাদের খেলাধুলার জায়গা নেই। এদিকে উত্তরে ৪৫.৩৩ শতাংশ জানিয়েছেন তাদের এলাকায় বাচ্চাদের খেলাধুলার জায়গা আছে, যদিও তাদের মধ্যে ৫১.২৩ শতাংশ সেগুলোকে বাচ্চাদের খেলার উপযোগী বলে মনে করেন না।
11 
দক্ষিণে চিত্র আরও খারাপ। দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে ৬১ শতাংশই জানিয়েছেন, বাচ্চাদের খেলাধুলার কোনও জায়গা নেই। যে ৩৯ শতাংশ ‘আছে’ বলেছেন, তাদের মধ্যে ৫৫.৮৪ শতাংশের মনে করেন ওই জায়গাগুলো বাচ্চাদের খেলাধুলার উপযোগী নয়।

ঝুঁকিপূর্ণ গাছ বা গাছের ডাল কাটার দিকে নজর নেই
8

চলমান বৈশাখ মাসে ঝড়ে নগরবাসীর আরেকটি চিন্তার নাম ঝুঁকিপূর্ণ গাছ ও গাছের ডাল। চলতি বছরের ৭ মার্চ মাথায় গাছ পড়ে চলচ্চিত্র পরিচালক খালিদ মাহমুদ মিঠুর মৃত্যু হলে এই সমস্যাটি নগরবাসীর জীবনের ঝুঁকি হিসেবেও বিবেচিত হচ্ছে। তবে এক্ষেত্রে বেশ উদাসীন দুই সিটি করপোরেশনই। জরিপে অংশগ্রহণকারীদের জিজ্ঞেস করা হয়, আপনার এলাকায় ঝুঁকিপূর্ণ গাছ বা গাছের ডাল কাটা হয় কি না। উত্তরে ৪২.৮৩ শতাংশ অংশগ্রহণকারী জানিয়েছেন ঝুঁকিপূর্ণ গাছ বা গাছের ডাল কাটা হয় না। দক্ষিণে এই হার আরও বেশি। এখানকার ৫৮.৫৬ শতাংশ জানিয়েছেন ঝুঁকিপূর্ণ গাছ বা গাছের ডাল কাটা হচ্ছে না।

ওয়ার্ড কাউন্সিলরের নামই জানেন না প্রায় ৩০ শতাংশ
12

বাসিন্দাদের কোনও সমস্যায় প্রথম আশ্রয় ওয়ার্ড কাউন্সিলর। তবে দুই নগরের দুই সিটি করপোরেশনের ওয়ার্ড কাউন্সিলরদের নামই জানেন না বলে জানিয়েছেন ৩০ শতাংশের বেশি বাসিন্দা। উত্তরে এই হার দক্ষিণের চেয়ে বেশি। ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন থেকে অংশগ্রহণকারীদের ৩৬.৮৯ শতাংশ জানিয়েছেন তারা তাদের ওয়ার্ড কাউন্সিলরের নাম জানেন না। দক্ষিণে এই হার কিছুটা কম হলেও নেহায়েতই কম নয়। এখানকার ২৯.৬৭ শতাংশ অংশগ্রহণকারী জানেন না তার ওয়ার্ড কাউন্সিলরের নাম কী।

জরিপ পরিচালনা:  বাংলা ট্রিবিউন

জরিপ পরিচালনার সময়কাল: ২০ এপ্রিল- ২৫ এপ্রিল       

নমুনা (sample) সংগ্রহের প্রক্রিয়া:

১. প্রতিটি সিটি করপোরেশনে ১৮০০ জনের ওপর এই জরিপ পরিচালনা করা হয়।

২. সবগুলো ওয়ার্ড থেকে নমুনা সংগ্রহ করা হয়।

৩. নারী-পুরুষ অংশগ্রহণকারীর সংখ্যা সমান রাখা হয়েছে। অর্থাৎ নারী ৯০০ জন এবং পুরুষ ৯০০ জন।

৪. দৈবচয়ন পদ্ধতিতে নির্বাচিত প্রতি অংশগ্রহণকারীর উত্তর নেওয়ার পর ৫ মিনিট অন্তর অংশগ্রহণকারী নির্বাচন করা হয়।

৫. জরিপকারীরা একই স্থানে সর্বোচ্চ ১ ঘণ্টা অবস্থান করেছেন।