শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের তদন্ত প্রতিবেদন অ্যাটর্নি অফিসে

শ্যামল কান্তির বিরুদ্ধে ছাত্রের বক্তব্য অসংলগ্ন




শিক্ষক শ্যামল কান্তি ভক্তনারায়ণগঞ্জে লাঞ্ছনার শিকার স্কুলশিক্ষক শ্যামল কান্তি ভক্তের বিরুদ্ধে ধর্ম অবমাননার অভিযোগ আনা শিক্ষার্থী অসংলগ্ন তথ্য দিয়েছে বলে উল্লেখ করেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের এ সংক্রান্ত তদন্ত কমিটি। কমিটির প্রতিবেদনে তার বিষয়ে ‘একেক সময় একেক কথা বলেছে’ বলে উল্লেখ করা হয়েছে বলে জানা গেছে।
ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মোতাহার হোসেন জানান, চার দফা সুপারিশসহ কমিটির ওই প্রতিবেদন তাদের হাতে এসেছে। হলফনামা করে প্রতিবেদন আকারে তা আদালতে জমা দেওয়া হবে। আগামী ২৯ মে বিষয়টি আদালতে উঠবে।
এর আগে ১৯ মে রাজধানীর সেগুনবাগিচায় আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ জানান, নারায়ণগঞ্জে পিয়ার সাত্তার লতিফ উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শ্যামল কান্তি ভক্তের বিরুদ্ধে ইসলাম ধর্মের প্রতি কটূক্তির যে অভিযোগ করা হয়েছিল, তার সত্যতা পায়নি মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতরের (মাউশি) তদন্ত কমিটি। একই সঙ্গে ওই শিক্ষককে বরখাস্তের সিদ্ধান্তকে আইন বহির্ভূত আখ্যায়িত করে স্বপদে বহাল রাখার সুপারিশ করেছে তদন্ত কমিটি।
তদন্ত কমিটির দেওয়া প্রতিবেদনকে ঘিরে অনুষ্ঠিত ওই সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দেওয়ার মতো কিছু আমরা পাইনি। ভিন্ন একটি বিষয়কে কেন্দ্র করে এ ঘটনা সাজানো হয়েছিল। যে সভায় পরিচালনা পর্ষদ বরখাস্তের সিদ্ধান্ত নেয়, সে সভার এজেন্ডাতেই এ বিষয়টি ছিল না।’

আদালতে জমা দেওয়া প্রতিবেদনে বলা আছে, শ্যামল কান্তির কাছ থেকে জোর করে পদত্যাগপত্র আদায় করে পরিচালনা পর্ষদ তাতে সই নিয়েছিল। বৃহস্পতিবার অ্যাটর্নি জেনারেলের কার্যালয়ে জমা পড়া তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, যে ছাত্রের বক্তব্যের ভিত্তিতে বন্দর উপজেলার পিয়ার সাত্তার লতিফ উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধন শিক্ষক শ্যামল কান্তিকে যে প্রক্রিয়ায় বরখাস্ত করা হয়েছিল তা বিধি বহির্ভূত হওয়ায় ওই শিক্ষককে পুনর্বহাল করা হয়েছে।

এর আগে ১৮ মে দোষীদের বিরুদ্ধে কেন ব্যবস্থা নয়, জানতে চেয়ে রুল জারি করেছেন সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগ। বিচারপতি মইনুল ইসাম চৌধুরী ও বিচারপতি মোহাম্মদ ইকবাল কবির লিটনের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন। রুলে দুই সপ্তাহের মধ্যে স্বরাষ্ট্রসচিব, পুলিশের মহাপরিদর্শক, নারায়ণগঞ্জের জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার-এসপি, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা-ইউএনও, সংশ্লিষ্ট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা-ওসিকে রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে।

এ ছাড়া আদেশে শিক্ষক লাঞ্ছনার ঘটনা তদন্ত করে দোষী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে ৩ দিনের মধ্যে তার প্রতিবেদন জমা দিতে নারায়ণগঞ্জের জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারকে নির্দেশ দেন আদালত।

সুপ্রিম কোর্টের সিনিয়র আইনজীবী এম কে রহমান ও মহসীন রশিদ কয়েকটি পত্রিকায় প্রকাশিত শিক্ষক লাঞ্ছনা-সংক্রান্ত সংবাদ আদালতের নজরে আনেন। এরপর আদালত স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে রুল জারি করেন। এ সময় রাষ্ট্রপক্ষে উপস্থিত ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মোতাহার হোসেন।

প্রসঙ্গত, গত ১৩ মে বিকালে ধর্ম অবমাননার অভিযোগ রটিয়ে নারায়ণগঞ্জের কলাগাছিয়া ইউনিয়নের কল্যাণদি এলাকায় পিয়ার সাত্তার লতিফ উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শ্যামল কান্তি ভক্তকে সবার সামনে কান ধরে উঠ-বস করিয়ে ক্ষমা চাওয়ান স্থানীয় সংসদ সদস্য ও বিকেএমইএ নেতা সেলিম ওসমান।
আরও পড়ুন: বাংলাদেশের রিজার্ভ চুরির হোতারা ভারতে!



/ইউআই/এফএস/এজে