মুকুলের স্ত্রীর বড় ভাই এবিটি নেতা মুজিবুর ঢাকায় গ্রেফতার হন এপ্রিলে

মুকুলের স্ত্রীর ভাই হলেন মুজিবুর রহমানবন্দুকযুদ্ধে নিহত লেখক অভিজিৎ রায় হত্যায় অভিযুক্ত মুকুল রানা ওরফে শরিফুলের (২৫) স্ত্রীর বড়ভাই আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের (এবিটি) নেতা বিএম মুজিবুর রহমান গত এপ্রিলে পুরান ঢাকায় পুলিশের হাতে গ্রেফতার হন। তিনি বর্তমানে কারাগারে রয়েছেন।
মুজিবুর গ্রেফতার হওয়ার দেড়মাস পর মুকুল বন্দুকযুদ্ধে নিহত হলো। ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) সূত্র বাংলা ট্রিবিউনকে এই তথ্য নিশ্চিত করেছে। পুলিশ সূত্রটি জানায়, গত ১২ এপ্রিল সন্ধ্যা ৭টায় পুরান ঢাকা থেকে কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটি) ইউনিটের একটি টিম বিএম মুজিবুরকে গ্রেফতার করে।
 আরও পড়তে পারেন: পরিবার থেকে দীর্ঘদিন ‘বিচ্ছিন্ন’ ছিল মুকুল রানা
গ্রেফতারের পরদিন সিটি প্রধান ও ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার মনিরুল ইসলাম জানান, তিনি আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের প্রশিক্ষক। দীর্ঘদিন থেকে বোমা তৈরির প্রশিক্ষণ ও বোমা তৈরির উপকরণ কেনায় সহযোগিতা করছেন। এছাড়া, নিষিদ্ধ ঘোষিত সংগঠনটিকে আর্থিক অনুদান প্রদান ও সংগ্রহে সহযোগিতা করে আসছিলেন।
এর আগে গত ১৯ ফেব্রুয়ারি গোপন সংবাদের ভিত্তিতে উত্তর বাড্ডার সাতারকুল এলাকায় আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের একটি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে ও মোহাম্মদপুর এলাকার নবোদয় হাউজিং এর ৬ নং রোডের ২৮ নং বাসার ৫ম তলায় এবিটির আস্তানার খবর পায় পুলিশ। সেখানে অভিযান চালানো হয়। বাড্ডায় অভিযান চালানোর সময় আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের সদস্যদের সঙ্গে গুলি বর্ষণ ও সংঘর্ষে ডিবি পুলিশের একজন সদস্য গুরুতর আহত হন। সেখান থেকে এবিটির দুই সদস্যকে গ্রেফতার করা হয়েছিল।

পরবর্তীতে তাদের দেওয়া তথ্য মোতাবেক দক্ষিণখান থানা এলাকার সরদার পাড়ার একটি বাড়ি থেকে বিপুল পরিমাণ বোমা ও বোমা তৈরির সরঞ্জামাদি উদ্ধার করে ডিবি পুলিশ । এ সংক্রান্তে দক্ষিণখান থানায় সন্ত্রাসবিরোধী আইন ২০০৯ (সংশোধীত-২০১৩) অনুযায়ী একটি মামলা দায়ের করা হয়। ওই মামলা তদন্ত করতে গিয়ে ঈদী আমিন ও মুজিবুর রহমানের সংশ্লিষ্টতা পায় পুলিশ। তারপর পুরান ঢাকা থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়। মুজিবুর ওষুধ কোম্পানিতে চাকরি করতেন।

অন্যদিকে, মুকুল রানার গ্রামের বাড়ি সাতক্ষীরার ধুলিহর ইউনিয়নের বালুইগাছা গ্রামে। তার পিতার নাম আবুল কালাম আজাদ। মাতার নাম সখিনা বেগম।

অপরদিকে মুজিবুরের গ্রামের বাড়ি যশোরের ঝুমঝুমপুর এলাকায়। সাতক্ষীরার মুকুলদের বাড়ি থেকে মুজিবুরের বাড়ির দূরত্ব ৬৫ কিলোমিটার।

আরও পড়তে পারেন: ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত যুবক শরিফুল না, মুকুল
মুকুল রানার বাবা আবুল কালাম আজাদ জানান, মুকুলের সঙ্গে গত ৯ ফেব্রুয়ারি সাতক্ষীরার গ্রামের বাড়িতে মুজিবুর রহমানের ছোটবোন মহুয়া আক্তার রিমির (১৯) বিয়ে হয়। রিমি এলাকার একটি কওমী মাদ্রাসায় পড়েন। মুকুলের সঙ্গে ঢাকায় মুজিবুরের পরিচয় হয়েছিল। মুজিবুরের সঙ্গে মুকুল বিয়ের কথা বললে মুজিবুর নিজের বোনকেই তার সঙ্গে বিয়ে দিতে রাজি হন। এরপর পারিবারিকভাবে তাদের বিয়ে হয়।

পুলিশের দাবি, লেখক অভিজিৎ রায় হত্যার সঙ্গে মুকুল ওরফে শরিফুল সরাসরি জড়িত ছিলেন। এছাড়া প্রকাশক টুটুল হত্যা প্রচেষ্টার দিন তিনি ঢাকার লালমাটিয়ায় বাড়ির সামনে অবস্থান করছিলেন এবং ওয়াশিকুর রহমান বাবু, আশুলিয়ার রিয়াজ মোর্শেদ বাবু হত্যা মিশনের কো-অর্ডিনেটর হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন শরিফুল ওরফে মুকুল।

উল্লেখ্য, শনিবার দিবাগত রাত তিনটার দিকে ঢাকার খিলগাঁওয়ের মেরাদিয়া বাঁশপট্টি এলাকায় গোয়েন্দা পুলিশের সঙ্গে ‘বন্ধুকযুদ্ধে’ নিহত হয় মুকুল রানা ওরফে শরিফুল ইসলাম। নিহত হওয়ার দুদিন পর সোমবার বেলা ১১টার দিকে তার লাশ শনাক্ত করেন তার স্বজনেরা। পুলিশ তার নাম শরিফুল বললেও নিহতের স্বজনরা দাবি করেছে তার নাম মুকুল।

/এআরআর/এমএসএম/