ডিসিসির অনুমতি ছাড়াই সড়কে ইস্পাতের ডিভাইডার

রাজধানীর সড়কে ইস্পাতের ডিভাইডাররাজধানীর বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ সড়কের মোড়ে ইস্পাতের ডিভাইডার বসানোর জন্য ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের কোনও অনুমতি নেওয়া হয়নি বলে জানিয়েছেন করপোরেশনের কর্মকর্তারা। পুলিশ চাইলে যানজট নিরসনে এধরনের ডিভাইডার সিটি করপোরেশনও তৈরি করে দিতে পারতো বলে জানিয়েছেন তারা। তবে পুলিশের দাবি, যানজট নিরসনে জনস্বার্থে তাদের এটা করতে হয়েছে। এর সুফলও পাওয়া যাচ্ছে বলে দাবি করেছে তারা।
ঢাকা মহানগরীর মিরপুর, বনানী, যাত্রাবাড়ী, সায়েদাবাদ, লালবাগ, রমনা, পুরান ঢাকা, নিউমার্কেটসহ বেশ কিছু এলাকায় ইস্পাতের তৈরি ডিভাইডার দিয়ে সড়ক বিভাজন করতে দেখা গেছে। গাড়ির বাম-ডান লেন নিশ্চিত করতে ও সুরক্ষিতভাবে গাড়ি যাতায়াতের জন্য বিভিন্ন কোম্পানির বিজ্ঞাপন দিয়ে এসব ডিভাইডার তৈরি করেছে পুলিশ। তবে সিটি করপোরেশন কর্তৃপক্ষের অভিযোগ, এ বিষয়ে তাদের কোনও হাত নেই। পুলিশ ইচ্ছামতো ডিভাইডার তৈরি করেছে।
ইস্পাতের ডিভাইডারে বিভাজিত সড়কএ বিষয়ে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা খান মোহাম্মদ বিলাল বাংলা ট্রিবউনকে বলেন, ‘রাস্তার মোড়ে, ক্রসিংয়ে, রাস্তার মাঝখানে ইস্পাতের তৈরি ব্যারিকেড পুলিশ তৈরি করেছে। আমরা বলেছি, কোথায়-কোথায় এমন ব্যারিকেডের দরকার তা জানালে আমরাই এগুলো তৈরি করে দিতে পারি। কিন্তু তারা তা করছে না। এগুলোর গায়ে যে বিজ্ঞাপন দেয়া হচ্ছে, সেগুলোতেও আমাদের কোনও অনুমতি নেই।
ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) ট্রাফিকের পূর্ব বিভাগের উপকমিশনার মাইনুল ইসলাম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘বিভিন্ন কারণে এগুলো করা হচ্ছে। ঢাকা শহরে ট্রাফিক যানজট হওয়ার অন্যতম কারণ লেনগুলো। দেখা যায় গাড়িগুলো ডানে-বাম, যত্রতত্র মোড় নেয়। কিন্তু এসব জায়গায় ট্রাফিকের কোনও সার্কিট থাকে না। যার জন্য গাড়ির প্রেশার বেশি হয়, গাড়ি জমে যায়। এখন এসব জায়গায় যে আমরা ফোর্স দাঁড় করিয়ে রাখবো, তেমন ফোর্সও আমাদের নেই। এই কাজটি মূলত ট্রাফিক ইঞ্জিনিয়ার বিভাগের করার কথা।’
রাজধানীর সড়কে ইস্পাতের ডিভাইডারতিনি আরও বলেন, ‘ট্রাফিকের সঙ্গে চারটি উপাদান জড়িত- ট্রাফিক ইঞ্জিনিয়ারিং, ট্রাফিক এনভায়রনমেন্ট, এডুকেশন ও এনফোর্সমেন্ট। এই কাজটি ট্রাফিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের করার কথা। কিন্তু তারা এই কাজ করছে না। যেহেতু রাস্তাঘাটে আমরা আছি, তাই রাস্তায় আমাদেরই সব করতে হয়। জনস্বার্থে এই কাজটি আমরা করেছি। যেসব স্থানে এগুলো করা হয়েছে, সেখানে যানজট অনেক লাঘব হয়েছে। গাড়ির গতিও বৃদ্ধি পেয়েছে। মিরপুর, বিজয় সরণী ও মতিঝিলে এর কারণে যানজট কিছুটা লাঘব হয়েছে।’
ট্রাফিক পুলিশের কর্মকর্তা মাইনুল ইসলাম বলেন, ‘সিটি করপোরেশনের সঙ্গে আমাদের প্রতিটি বিষয়ই আলোচনা হয়, কথা হয়। তবে এই বিষয়ে তাদের কাছ থেকে কোনও চিঠি এখনও পাইনি।’
সরেজমিনে দেখা গেছে, শাহবাগ মোড়ে ইস্পাতের ডিভাইডার দিয়ে সড়কে লেন করা হয়েছে। মৎস্যভবন থেকে সাইন্সল্যাবের দিকে যেতে ইচ্ছুক গাড়িগুলোকে ইস্পাতের তৈরি ওই ব্যারিকেডের ভেতর দিয়ে বাম লেন ধরে যেতে হয়। অন্যদিকে দোয়েল চত্বর থেকে শিক্ষা ভবনের দিকে যাওয়ার সড়কটির মাঝখানেই লোহার ব্যারিকেড দিয়ে তৈরি করা হয়েছে লেন। একই চিত্র মতিঝিলের শাপলা চত্বর আর টেকনিক্যাল থেকে আজিমপুরের সড়কেও। কোথাও কোথাও গাড়ির ধাক্কায় ব্যারিকেড ভেঙ্গেও গেছে।
ইস্পাতের ডিভাইডারে বিভাজিত সড়কঅবশ্য কয়েকজন গণপরিবহন চালক এই লেন দিয়ে গাড়ি চালিয়ে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করছেন বলে মন্তব্য করেছেন। মিরপুর-সদরঘাট রুটের বিহঙ্গ পরিবহনের গাড়িচালক রাজ্জাক হাওলাদার শাহবাগ মোড়ে বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘ব্যারিকেড দিয়ে ভালো হয়েছে। তবে খুব সরু হওয়ায় কখনও-কখনও গাড়ি ঘোরাতে অতিরিক্ত সতর্ক হতে হয়। তা না হলে ব্যারিকেডের সঙ্গে গাড়ি লেগে যায়।’
ঢাকা মহনগর পুলিশের (ডিএমপি) ট্রাফিকের পশ্চিম বিভাগের উপকমিশনার লিটন কুমার সাহা বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘এই ব্যারিকেড অনেক আগে থেকেই করা হচ্ছে। এগুলো নতুন নয়। তবে সিটি করপোরেশন থেকে আমাদের এ বিষয়ে বলার পর আমরা নতুন করে আর ব্যারিকেড তৈরি করছি না।’
ছবি: নাসিরুল ইসলাম
/এএআর/আপ-টিআর