এসএসসি প্রশ্নপত্রে ‘লোভী চিকিৎসক’: ক্ষুব্ধ চিকিৎসকরা

প্রশ্নপত্র
চলমান এসএসসি পরীক্ষার একটি প্রশ্ন নিয়ে চিকিৎসক সমাজ ভীষণ ক্ষুব্ধ। প্রশ্নটিতে একজন লোভী চিকিৎসকের সঙ্গে তার এক উদার বন্ধুর তুলনা করে মনুষ্যত্বের ব্যাখ্যা চাওয়া হয়েছে। এসএসসির মতো গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষায় শিক্ষার্থীদের কাছে নিজেদের লোভী হিসেবে পরিচয় করিয়ে দেওয়া নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন চিকিৎসকরা।

বৃহস্পতিবার ঢাকা বোর্ডের বাংলা সৃজনশীল প্রশ্নপত্রের দুই নম্বর প্রশ্নটি ছিল এমন, ‘জাহেদ সাহেব একজন লোভী ডাক্তার। অভাব ও দারিদ্র্য বিমোচন করতে গিয়ে তিনি সব সময় অর্থের পেছনে ছুটতেন। একসময় গাড়ি-বাড়ি, ধন-সম্পদ সব কিছুর মালিক হন। তবুও তার চাওয়া পাওয়ার শেষ নেই। অর্থ উপার্জনই তার একমাত্র নেশা। অন্যদিকে, তার বন্ধু সগীর সাহেব তার ধন-সম্পদ থেকে বিভিন্ন সামাজিক জনকল্যাণমূলক কাজে ব্যয় করেন। তিনি মনে করেন, সুন্দরভাবে জীবনযাপনের জন্য বেশি সম্পদের প্রয়োজন নেই।’

শিক্ষার্থীদের ‘শিক্ষা ও মনুষ্যত্ব’ প্রবন্ধের আলোকে মন্তব্যটি বিশ্লেষণ করতে বলা হয়েছে।

প্রশ্নপত্রপ্রশ্নটির প্রতিবাদে শনিবার (৪ ফেব্রুয়ারি) শাহবাগে মানববন্ধন করবে চিকিৎসক সমাজ। বাংলাদেশ মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশন (বিএমএ) এবং স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদ (স্বাচিপ) এই ঘটনায় ভীষণ ক্ষুব্ধ। এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এর সঙ্গে জড়িতদের আগামী তিন দিনের মধ্যে খুঁজে বের করে উপযুক্ত শাস্তি এবং চিকিৎসক সমাজের কাছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে ক্ষমা চাওয়ার দাবি জানিয়েছে বিএমএ।  

অন্যদিকে, আগামী রবিবার শিক্ষামন্ত্রী এবং ঢাকা বোর্ডের কাছে এর প্রতিবাদে স্মারকলিপি দেবে স্বাচিপ। এ বিষয়ে স্বাচিপের সভাপতি ডা. ইকবাল আর্সলান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আমি মনে করি, দেশের তরুণ প্রজন্মের কাছে এমন মিথ্যা, বানোয়াট, কূরুচিপূর্ণ ও বিভ্রান্তিমূলক তথ্য পরিবেশন জাতির জন্য কলঙ্কজনক ঘটনা। যারা এই কাজের সঙ্গে যুক্ত, তাদের অবিলম্বে আইনের আওতায় এনে শাস্তির দাবি জানাচ্ছি। একই সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করে দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার অনুরোধ করছি।’

বিএমএ’র সভাপতি ডা. মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিনও ক্ষুব্ধ। তিনি বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘গতকাল (বৃহস্পতিবার) আমরা শিক্ষামন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলেছি। যিনি বা যারা এই প্রশ্ন তৈরির সঙ্গে জড়িত, তাদের খুঁজে বের করে আগামী তিন দিনের মধ্যে শাস্তির দেওয়ার অনুরোধ জানিয়েছি তাকে। শিক্ষামন্ত্রী বলেছেন, এ ব্যাপারে খবর নিয়ে দেখবেন। এখন দেখি উনি কী বলেন, তিন দিন শেষ হোক।’

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাসকুলার সার্জন ডা. সাকলায়েন রাসেল মনে করেন, প্রশ্নটি চিকিৎসক সমাজের প্রতি সরাসরি আঘাতের শামিল। তিনি বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘এখানে কোনও পেশার নাম উল্লেখ না করেই প্রশ্নটি করা যেত। পাবলিক পরীক্ষায় সৃজনশীল পরীক্ষার অর্থই হলো, শিশুদের মন এবং চিন্তাশক্তি নিয়ে খেলা করা। এখানে শিশুদের মনে ঢুকিয়ে দেওয়া হলো, চিকিৎসকরা লোভী। চিকিৎসকদের সম্পর্কে তাদের ধারণা কী হবে?’

প্রশ্নপত্র নিয়ে স্বাচিপ এর প্রতিবাদতিনি আরও বলেন, ‘একটি গোষ্ঠীকে আঘাত করার মাধ্যমে সরকারকে বিব্রতকর পরিস্থিতিতে ফেলে কেউ অস্থিরতা তৈরি করতে চাচ্ছে কিনা, সেটাও তদন্ত করে দেখা উচিত। ভবিষ্যতে এমন কিছু যেন না হয়, সেজন্য দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির বিধান রাখার দাবি জানাচ্ছি। যদিও ক্ষতি যা হওয়ার হয়েই গেছে।’

ফেসবুকেও এ নিয়ে সমালোচনার ঝড় উঠেছে। শরীয়তপুরের নড়িয়া হেলথ কমপ্লেক্সের মেডিক্যাল অফিসার  দেওয়ান সাবরিনা মাসুক তার ফেসবুক পেজে ব্যঙ্গ করে লিখেছেন, ‘সগীর সাহেব মহান ব্যক্তি। তিনি জাহেদ সাহেবের মতো নন। তিনি কামলা ছিলেন। সৎ  পথে (!?) টাকা উপার্জন করে ৪ খানা বাড়ি করেছেন ঢাকা শহরে। গত বছর হজ করে এসেছেন। এখন তিনি তার সৎ পথের (!?) উপার্জিত ধন-সম্পদ মানুষের মাঝে দান করে বেড়ান!!!....বি লাইক সগীর সাহেব!!’

চট্টগ্রাম বিএমএ’র সাধারণ সম্পাদক ডা. ফয়সল ইকবাল নিজের ফেসবুক পেজে লিখেছেন, ‘এভাবে একটি পেশার নাম উল্লেখ করে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে প্রশ্ন করা চিকিৎসা পেশার জন্য অপমানজনক নয় কি? একটি সেবামুলক পেশাকে কটাক্ষ করে প্রশ্ন করার কোনও প্রয়োজন ছিল নাকি?  অবশ্যই এ ব্যাপারে শিক্ষামন্ত্রী, শিক্ষা মন্ত্রণালয়, প্রশ্নকর্তাদের কাছে ব্যখ্যা চাইতে হবে, তারা লোভী বুঝানোর জন্য ডাক্তারি পেশাকে বেছে নিয়েছেন কেন?’

এএআর/

আরও পড়ুন: আ.লীগ নেতার গুলিতে আহত সাংবাদিকের মৃত্যু