তথ্যপ্রযুক্তি স্টার্টআপে যেভাবে মেলে ভেঞ্চার ক্যাপিটাল

Venture Capitalস্টার্টআপ তথা নতুন উদ্যোগে মিলছে ভেঞ্চার ক্যাপিটাল (ভিসি)। উদ্যোগে নতুনত্ব ও তাতে সমস্যা সমাধানের কোনও সুনির্দিষ্ট উপায় থাকলে ভিসিরা সেসব উদ্যোগের প্রতি আকৃষ্ট হয়ে বিনিয়োগ করে থাকে। সেইসঙ্গে নতুন উদ্যোগে থাকতে হয় মুনাফা করার প্রতিশ্রুতিও।

সাধারণত নতুন উদ্যোগ বা ব্যবসায় ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো ঋণ দিতে চায় না। আর কোনও কারণে ঋণ দিলেও পরদিন থেকে কিস্তি দেওয়ার দিনক্ষণ শুরু হয়ে যায়। ফলে ঋণ নিয়ে পরদিন থেকেই তা পরিশোধ করতে নতুন উদ্যোগ গ্রহণ করতে হয় উদ্যোক্তাদের। ভিসির ক্ষেত্রে এ ধরনের কোনও জটিলতা নেই। উদ্যোগ ভালো হলে ভিসিরা তাতে দীর্ঘ মেয়াদে বিনিয়োগ করতে এগিয়ে আসে।

এ খাতের সঙ্গে সম্পৃক্তরা বলছেন, ভিসির সঙ্গে শেয়ার বাজারের আইপিও’র (প্রাথমিক গণপ্রস্তাব) মিল রয়েছে। আইপিও’র মতো করেই টাকা জোগাড় করতে হয় ভিসিদের কাছ থেকে। তবে আইপিও’র মাধ্যমে পুঁজি সংগ্রহের সুযোগ রয়েছে প্রতিষ্ঠিত কোম্পানিগুলোর জন্য। একেবারে আনকোরা বা নতুন উদ্যোক্তারা তা পারে না। তাদের জন্য এমন পুঁজি সংগ্রহের একটি সুযোগ ভিসিরা। এ কারণে সংশ্লিষ্টরা বলে থাকেন, ভিসিরা কোনও উদ্যোগে ঋণ দেয় না, বরং তারা সংশ্লিষ্ট উদ্যোগে বিনিয়োগ করে অংশীদার হয়, শেয়ারের মালিকানা নেয়।

জানা গেছে, দেশে ছয়টি প্রতিষ্ঠান ভেঞ্চার ক্যাপিটালের লাইসেন্স পেলেও সবক’টি প্রতিষ্ঠান এখনও কার্যক্রম শুরু করেনি। অন্যদিকে, যুক্তরাষ্ট্রের সিলিকন ভ্যালিভিত্তিক একাধিক ভিসি এ দেশে কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানাচ্ছে, দেশীয় ভিসিগুলোর মধ্যে এগিয়ে আছে বিডি ভেঞ্চার লিমিটেড।

বিডি ভেঞ্চার লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শওকত হোসন বাংলা ট্রিবিউনকে জানান, এরই মধ্যে বিডি ভেঞ্চার পাঁচটি প্রতিষ্ঠানে বিনিয়োগ করেছে। এর তিনটিই তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান। তিনি বলেন, ‘আমরা সাধারণত ইক্যুইটি ফরম্যাটে প্রতিষ্ঠানগুলোতে বিনিয়োগ করে শেয়ারের মালিক হই। হয়তো চার-পাঁচ বছরের একটা নির্ধারিত সময় থাকে যে সময়ে বিনিয়োগ পাওয়া প্রতিষ্ঠান শেয়ার বিক্রি করতে পারে না। এই সময় পরে আমরা আমাদের শেয়ারগুলো বাজারে বিক্রি করে বিনিয়োগ তুলে নিই। কেনার সময় থেকে মেয়াদকাল পর্যন্ত শেয়ার মূল্যের একটা বড় পার্থক্য তৈরি হয়। ওই পার্থক্যটাই আমাদের মুনাফা।’

শওকত হোসেন আরও জানান, ভিসিরা অর্থ বিনিয়োগ করে একটি নির্দিষ্ট শতাংশ শেয়ারের মালিক হয়। অনেক সময় ওই শেয়ারের অর্ধেক বিক্রি করেও বিনিয়োগকৃত অর্থ তুলে ফেলা হয়। বাকি শেয়ার কোম্পানিতেই রয়ে যায়। শওকত হোসেন বলেন, ‘তবে আমরা কোনও উদ্যোগে বিনিয়োগের আগে সেই উদ্যোগের মধ্যে সফল হওয়ার সম্ভাবনা, প্রতিশ্রুতি, বাস্তব সমস্যা সমাধানের পথ— এগুলো রয়েছে কিনা তা যাচাই করে দেখি।’ তাদের ওয়েবসাইটে দেওয়া সুনির্দিষ্ট নিয়ম অনুসরণ করেই বিডি ভেঞ্চারের বিনিয়োগ পাওয়া সম্ভব বলে জানান তিনি।

সিলিকন ভ্যালিভিত্তিক ভেঞ্চার ক্যাপিটাল ফেনক্সের জেনারেল পার্টনার শামীম আহসান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘ফেনক্স বাংলাদেশের তথ্যপ্রযুক্তি উন্নয়ন ও স্টার্টআপ ইকোসিস্টেম তৈরিতে কাজ করছে। আমরা ভবিষ্যতে বাংলাদেশের ইন্টারনেট ও প্রযুক্তি ক্ষেত্রে আরও বিনিয়োগ করব।’

শামীম আহসান আরও বলেন, ‘বাংলাদেশের উদীয়মান ও সম্ভাবনাময় স্টার্টআপগুলোর ওপর নজর রাখছে ফেনক্স। সেভাবেই আমরা বিভিন্ন কোম্পানিতে বিনিয়োগ করছি ও নতুন নতুন পরিকল্পনা করছি।’ তিনি জানান, বাংলাদেশে বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠানে বিনিয়োগ করার পর আরও কয়েকটি প্রতিষ্ঠানে বিনিয়োগ করতে চায় তারা।

ভেঞ্চার ক্যাপিটালপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠান ডক্টরোলা লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী মোহাম্মদ আবদুল মতিন ইমন নিজের প্রতিষ্ঠানের অভিজ্ঞার কথা বলতে গিয়ে বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘ডক্টরোলা শুরু থেকে ভেঞ্চার ক্যাপিট্যালের জন্য অ্যাপ্রোচ করেনি, গ্রোথ স্টেজে গিয়ে করেছে। এসময় আমরা নিয়মিতভাবে অ্যাপয়েন্টমেন্টের সার্ভিস দিয়ে আসছিলাম। তখন তিন হাজার ডাক্তার ছিলেন আমাদের সঙ্গে। বর্তমানে আমাদের ডাটাবেজে সাড়ে ছয় হাজারেরও বেশি ডাক্তার আছেন।’ ভিসি পেতে আট মাস সময় লেগেছে বলে জানান তিনি।

আবদুল মতিন বলেন, ‘ভিসি পাওয়ার পূর্বশর্তগুলো হলো— আপনার দৃশ্যমান ব্যবসা থাকতে হবে এবং আপনার ব্যবসা থেকে লাভ আসতে হবে। ব্যবসাটি এখন যে অবস্থাতেই থাকুক না কেন, এটি যে অনেক বড় হতে পারে তার একটি যৌক্তিক পূর্বাভাস ও ব্যাখ্যা থাকতে হবে। ব্যবসার মাঝে এমন কিছু থাকতে হবে যাতে সহজে কেউ কপি করে আপনার মার্কেট শেয়ার অর্ধেক করে দিতে না পারে। আর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো টিমের দক্ষতা।’ তাছাড়া, উদ্যোক্তার পরিচয়ের ওপর নির্ভর করেই ভিসিরা বিনিয়োগ করে থাকে বলে জানান তিনি।

/টিআর/ আপ-এমডিপি/