সভায় বক্তব্য রাখেন, বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের মহাসচিব ওমর ফারুক। সাংবাদিক ওমর ফারুককে স্মরণ করতে গিয়ে তিনি বলেন, ‘সাংবাদিক হিসেবে তিনি অনেক দক্ষ ও মেধাবী ছিলেন। সাংবাদিকদের সোর্সই শক্তি। তার অনেক সোর্স ছিল। আমার নাম ওমর ফারুক, তার নামও ওমর ফারুক। অনেক সোর্স তাকে মনে করে ভুল করে আমাকে ফোন দিতেন। তিনি শুধু ভালো সাংবাদিকই নন, অসম্ভব অমায়িক, মানবিক গুণাবলীসম্পন্ন মহৎ মানুষ ছিলেন।’
বিএফইউজে মহাসচিব আরও বলেন, ‘দৈনিক যুগান্তরে তিনি ১০ বছর কাজ করেছেন। অথচ বেতন-ভাতা বাকি রেখেই তাকে চাকরি থেকে ছাঁটাই করা হয়েছিল। আমরা চাই, যুগান্তর তার পাওনা টাকা ফেরত দিক। আমরা এর জন্য যে কমর্সূচি দেওয়ার দেবো।’
উপস্থিত সাংবাদিক নেতাদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘আপনারাপাশে থাকলে একদিনের মধ্যেই আমরা তার পাওনা টাকা আদায় করতে পারি। শুধু তিনি নন, যত সাংবাদিকের বেতন ভাতা না দিয়ে বিভিন্ন পত্রিকা ছাঁটাই করেছে, তাদের পাওনা আদায়ে আমরা আন্দোলন করবো।’
ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক সোহেল হায়দার চৌধুরী বলেন, ‘খলিফা ওমর ফারুক ও আমাদের ওমর ফারুকের মধ্যে পার্থক্য করা কঠিন। তিনি অনেক সরল মানুষ ছিলেন, তার মতো উদার ও মানবিকতা বোধসম্পন্ন মানুষ আমি আর দেখিনি। আমি এমন একজন মানুষকে হারিয়ে দুঃখে ভারাক্রান্ত। আমি দোয়া করি, তিনি যেখানেই থাকুন ভালো থাকবেন।’
বাংলা ট্রিবিউনের প্রয়াত সাংবাদিক ওমর ফারুকের স্ত্রী ও সন্তানদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘যেকোনও সময় যেকোনও বিপদ আপদে আমরা আপনাদের পাশে থাকবো। আপনারা আমাদের কাছে নিদ্বির্ধায় চলে আসবেন।’
ওমর ফারুকের দুই সন্তান ও স্ত্রীর উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘যিনি চলে গেছেন তিনি আর ফিরে আসবেন না, এটাই বাস্তবতা। তাই আপনারা শক্ত হোন, বাঁচতে হবে, এগিয়ে যেতে হবে। আমার নিজের এক মেয়ে আর ওমর ফারুকের দুই মেয়ে মিলে আজ থেকে আমার তিন মেয়ে। আমি যথাসম্ভব চেষ্টা করবো, আমার সাধ্যমতো এই পরিবারটির পাশে থাকবো।’
এসময় বাংলা ট্রিবিউন কর্তৃপক্ষ ওমর ফারুকের পরিবারকে ১০ লাখ টাকার চেক দিয়েছেন উল্লেখ করে তিনি বাংলা ট্রিবিউন কর্তৃপক্ষকে ধন্যবাদ জানান। ওমর ফারুকের দুই মেয়ে বড় হয়ে স্নাতক পর্যায়ে বেসরকারি ইউল্যাব ইউনিভার্সিটিতে পড়তে চাইলে সেখানে সম্পূর্ণ বিনাবেতনে পড়তে পারবে, বাংলা ট্রিবিউন কর্তৃপক্ষের এ সিদ্ধান্তের কথাও জানান শফিকুল ইসলাম।
সাংবাদিক ওমর ফারুকের আরেক সহকর্মী ও বাংলা ট্রিবিউনের সিনিয়র সাংবাদিক জামাল উদ্দিনও ওমর ফারুককে স্মরণ করতে গিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন। অশ্রুসিক্ত চোখে তিনি বলেন, ‘আমি আর ওমর ফারুক ভাই একইদিনে বাংলা ট্রিবিউনে যোগ দেই। গত আড়াই বছর একই সঙ্গে পাশাপাশি চেয়ারে বসে কাজ করেছি। তার সঙ্গে আমার যে ঘনিষ্ঠতা তা ভাষায় ব্যাখা করাটা খুবই কঠিন। যেদিন তিনি অসুস্থ হলেন, সেদিনও অনেক কথা হয়েছে চা খেতে খেতে। আজ সবই স্মৃতি।’ বাংলা ট্রিবিউন কর্তৃপক্ষ ওমর ফারুকের পাশে দাঁড়ানোয় বাংলা ট্রিবিউনকে ধন্যবাদ জানান এবং ওমর ফারুকের আত্মার মাগফেরাত কামনা করেন জামাল উদ্দিন।
ডিআরইউ সভাপতি শাখাওয়াত হোসেন বাদশার সভাপতিত্বে শোকসভা সঞ্চালনা করেন ডিআরইউ সাধারণ সম্পাদক মুরসালিন নোমানী।
স্মরণসভায় সাংবাদিক ওমর ফারুকের স্ত্রী তার স্বামী সম্পর্কে বলতে গিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন। তিনি সবার কাছে দোয়া চান, তার পাশে থাকার জন্য সবার প্রতি অনুরোধ করেন।
সভাপতির বক্তব্যে ডিআরইউ সভাপতি শাখাওয়াত হোসেন বাদশা বলেন, ‘ওমর ফারুক ভাই অসম্ভব ভালো মানুষ ছিলেন, সে ব্যাখা দিয়ে শেষ করা যাবে না।’ ওমর ফারুকের স্মৃতিচারণা করতে গিয়ে তিনিও কান্নায় ভেঙে পড়েন। তিনি বলেন, ‘তার সঙ্গে যুগান্তর অনেক অমানবিক আচরণ করেছে, তার পাওনাটা দেয়নি। আমরা তার পাওনা আদায়ে আন্দোলন করবো। যেসব পত্রিকার কর্ণধার সাংবাদিকদের পাওনা দেয় না, তাদের আমরা ধিক্কার জানাই।’
সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন ওমর ফারুকের চাচাতো ভাই-বোন, ডিআরইউয়ের সাবেক সাধারণ সম্পাদক রাজু আহমেদ, সাবেক সাধারণ সম্পাদক ইলিয়াস হোসেন, ডিআরইউয়ের যুগ্ম সম্পাদক তোফাজ্জেল হোসেন, সাংবাদিক আয়তুল্লাহ, সাংবাদিক শেখ আরিফ, ক্রীড়া সম্পাদক মুজিবর রহমান, সাংবাদিক আবু বকর সিদ্দিকী, সিনিয়র সাংবাদিক কুদরত এ খোদা প্রমুখ।
উল্লেখ্য, গত ২৯ এপ্রিল দুপুরে খবর সংগ্রহের পর অফিসে প্রবেশের সময় হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে অসুস্থ হয়ে পড়লে সঙ্গে সঙ্গে ওমর ফারুককে স্কয়ার হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। সেখানে ইসিজি ও এনজিওগ্রাম করার পর হার্টের শিরায় দু’টি ব্লক ধরা পড়ায় চিকিৎসকের পরামর্শে তাৎক্ষণিকভাবে সিসিইউতে ভর্তি করা হয় তাকে। শুরুতে রিং পড়াতে চাইলেও কিছু জটিলতা দেখা দেওয়ায় তার বাইপাস সার্জারির প্রয়োজন হবে বলে জানিয়েছিলেন চিকিৎসকরা। পরে তার অবস্থার অবনতি ঘটলে রবিবার ভোর সাড়ে ৩টার দিকে মৃত্যু হয় তার।
কর্মজীবনে দৈনিক সমাচার, দৈনিক রুপালি, দৈনিক আজকের কাগজ, দৈনিক যুগান্তর ও বাংলা ট্রিবিউনে কাজ করেছেন তিনি। ওমর ফারুক ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সদস্য। মৃত্যুকালে স্ত্রী ও দুই কন্যা রেখে গেছেন তিনি। পাঁচ ভাই ও চার বোনের মধ্যে তিনি সবার ছোট। তার প্রথম মেয়ে ফারিহা ওমর ইরা দশম শ্রেণিতে পড়েন এবং দ্বিতীয় মেয়ে দীপিকা ওমর দিয়া ৬ষ্ঠ শ্রেণিতে পড়েন। তার স্ত্রী সানজিদা ওমর সৈকত।
/আরএআর/টিআর/টিএন/
আরও পড়ুন-
ওমর ফারুকের জন্য সহকর্মীদের শোকগাথা