ষোড়শ সংশোধনীর পক্ষে মত দিলেন অ্যামিকাস কিউরি কিউসি

ব্যারিস্টার আজমালুল হোসেন কিউসি (ছবি: ইন্টারনেট থেকে সংগৃহীত)

ষোড়শ সংশোধনী যথাযথ হয়েছে উল্লেখ করে উচ্চ আদালতের বিচারপতিদের অপসারণের ক্ষমতা সংসদের হাতে থাকা উচিত বলে মত দিয়েছেন সিনিয়র আইনজীবী অ্যামিকাস কিউরি আজমালুল হোসেন কিউসি। আদালতে শুনানিকালে উপস্থাপন করা মন্তব্য নিয়ে সাংবাদিকদের তিনি বলেন, ষোড়শ সংশোধনী যথাযথ, এটা সংসদের এখতিয়ারের মধ্যে। এখানে কোনও ভুল ত্রুটি নাই। আর এটাকে বাতিল করতে পারবে না।

প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার নেতৃত্বাধীন ৭ বিচারপতির আপিল বেঞ্চে আজ অ্যামিক্যাস কিউরি জ্যেষ্ঠ আইনজীবী আজমালুল হোসেন কিউসি ও এ জে মোহাম্মদ আলী তাদের বক্তব্য উপস্থাপন করেন।

এ সময় রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম ও অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল মুরাদ রেজা।

এর আগে আদালতে অ্যামিক্যাস কিউরি ড. কামাল হোসেন, জ্যেষ্ঠ আইনজীবী এম আই ফারুকী, আব্দুল ওয়াদুদ ভূঁইয়া, প্রাক্তন অ্যাটর্নি জেনারেল এ এফ এম হাসান আরিফ তাদের বক্তব্যে সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনীর বিপক্ষে মত দেন। এছাড়াও ব্যারিস্টার এম. আমিরুল ইসলাম, বিচারপতি টিএইচ খান, ব্যারিস্টার রোকন উদ্দিন মাহমুদ সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনীর বিপক্ষে মত দিলেও আজমালুল হোসেন কিউসি সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনীর পক্ষে মত দেন।

তিনি মনে করেন, বিচারপতিদেরও জবাবদিহিতার জায়গা থাকা উচিত এবং সেটা সংসদই করতে পারে। তিনি বলেন, জবাবদিহিতার প্রয়োজন আছে। আর জবাবদিহিতার জন্য সংসদে যারা নির্বাচিত সদস্য, জনগণকে প্রতিনিধিত্ব করছেন তাদের কাছেই এটা হতে পারে। এটাই হলো আমার মূল্য উদ্দেশ্য। এই ষোড়শ সংশোধনী আমাদেরকে ওখানেই নিয়ে যাচ্ছে যেখানে সংসদের কাছে জবাবদিহিতার জায়গা তৈরি হবে।

সংসদের হাতে এই দায়িত্ব দেওয়া হলে স্বাধীন বিচার বিভাগের ওপর আঘাত আসবে কিনা জানতে চাইলে সাংবাদিকদের তিনি বলেন, ‘এখানে স্বাধীন বিচার বিভাগের কোনও সমস্যা নাই। আমাদের সংবিধানে বিচার বিভাগের স্বাধীনতা যেটা আছে সেটা লিমিডেট, অ্যাবসুলেট নয়। কিছু কিছু জায়গায় দেখবেন, যেমন যদি রাষ্ট্রপতিকে ইম্পিচমেন্ট (অপসারণ) করতে হয় সেটা কিন্তু সংসদে হবে। সংসদ তো এখানে রাষ্ট্রপতিকে অপসারণ করতে গিয়ে বিচার করলো। তেমনিভাবে একজন বিচারপতিকেও যদি অপসারণ করতে হয়, একই জিনিস করবে। সংসদেরও কিছু কিছু বিচার করার কাজ আছে।’

সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলে বিচারের সমস্যার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘এটার সমস্যা হলো ওনারা নিজেরাই বিচার করছেন আরেকজন বিচারকের। সেল্ফ পুলিশিংয়ে মত। নিজেরাই নিজেদের বিচার করবে, বাইরের কাউকে করতে দেবে না। ওনাদের বার বার চিন্তা হলো আজকাল আমাদের যে সংসদ সদস্যরা আছেন তারা কেউ কেউ ব্যবসা করেন, চাকরি করেন বা অন্যান্য কিছু করেন বা আইন পেশায় আছেন—তাদের বিরুদ্ধে যদি কোন মামলা হয়,যদি তারা  ক্ষতিগ্রস্ত হন তাহলে হয়তো পরবর্তীতে তাদের প্রতিশোধ নেওয়ার ইচ্ছা থাকতে পারে। এটা নিয়েই তারা চিন্তা করেছেন। মূল ব্যাপারটা হলো রাষ্ট্রের সব সময় একটা ক্ষমতা থাকবে একজন বিচারককে রিমুভ করার জন্য। এই অধিকারটা রাষ্ট্রের থাকবে। এটা হলো বেসিক স্ট্রাকচার।’

গত বছরের ৫ মে  বিচারপতি মইনুল ইসলাম চৌধুরী, বিচারপতি কাজী রেজা-উল হক ও বিচারপতি আশরাফুল কামালের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্টের বিশেষ বেঞ্চ সংখ্যাগরিষ্ঠ মতের ভিত্তিতে ষোড়শ সংশোধনী অবৈধ বলে রায় ঘোষণা করেন। এর বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষ আপিল করলে আপিল বিভাগ আমিকাস নিউরি নিয়োগ দেন। রাষ্ট্রপক্ষ ও রিটকারী আইনজীবীদের শুনানি নেওয়ার পর আপিল বিভাগ এখন অ্যামিকাস কিউরিদের মন্তব্য ‍শুনছেন।

/এমটি/ ইউআই/টিএন/