শিশুটির বেঁচে থাকাটাই আশ্চর্যজনক!

ঢামেক হাসপাতালের নিওনেটলজি বিভাগে চিকিৎসাধীন নবজাকরাজধানীর ফকিরাপুলের একটি হোটেল কক্ষ থেকে যে শিশুটি উদ্ধার করা হয় তার বেঁচে থাকাটাই আশ্চর্যজনক বলে জানিয়েছেন ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের নবজাতক (নিওনেটলজি) বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. মনীষা ব্যানার্জি। কারণ হিসেবে তিনি উল্লেখ করেন, ‘চোখে না দেখলে বিশ্বাস করা যাবে না শিশুটির ইনজুরি কতোটা গভীর। ইনফেকশনের জন্য তার শরীরে রক্তশূণ্যতা দেখা দেয়, পরে দুইবার রক্ত দেওয়া হয়। আর এখন কৌটার দুধ খাওয়ানো হচ্ছে।’

সোমবার বাংলা ট্রিবিউনের এ প্রতিবেদকের কাছে শিশুটির ইনজুরি সম্পর্কে এভাবেই ব্যাখ্যা করছিলেন তিনি।

মনীষা ব্যানাজি বলেন, ‘ফুটফুটে একটি শিশু, বয়স আনুমানিক ৪২ দিনের মতো হবে, বাঁ গালে আর মাথার পেছনে ঘাড়ের দিকে গভীর ক্ষত নিয়ে হাসপাতালে আসে, ক্ষত জায়গা এতোটাই গভীর যে সেখানে পুঁজ জমে গিয়েছিল। প্রথমদিকে খুব কান্না করতো, এখন শারীরিক অবস্থার একটু উন্নতি হয়েছে। তবে চিকিৎসার বাকি অনেকটাই। সব কিছু শেষ না হওয়া পর্যন্ত শিশুটিকে আশঙ্কামুক্ত বলতে পারছি না আমরা। খিদে পেলেই সে কান্নাকাটি করে, আমরা তাকে খেতে দেই। তবে শিশুটির বেঁচে থাকাটাই আমাদের কাছে আশ্চর্যজনক, পৃথিবীতে এখনও মিরাকল বলে একটা শব্দ আছে, আমরা এখানে সেটাই দেখতে পাচ্ছি।’  

প্রসঙ্গত, গত ২২ মে রাজধানীর ফকিরাপুলের আল শাহিন নামের একটি হোটেলের কক্ষ থেকে এক নারীর মৃতদেহের পাশ থেকে শিশুটিকে উদ্ধার করে মতিঝিল থানা পুলিশ। সেখানে শিশুটি দেয়াল আর বিছানার মাঝের ফাঁকা জায়গায় আটকে ছিল। মতিঝিল থানা পুলিশ শিশুটিকে উদ্ধার করেই ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে আসে, তখন থেকেই শিশুটি নবজাতক বিভাগের বিশেষ ইউনিট স্ক্যাবুতে চিকিৎসাধীন রয়েছে।

ডা. মনীষা ব্যানার্জি বলেন, ‘শিশুটিকে অ্যান্টিবায়োটিক দেওয়া হচ্ছে, চিকিৎসকরাই তাকে রক্ত দিয়েছে। তবে ক্ষতের গভীরতা অনেক বেশি থাকায় শিশুটিকে আশঙ্কামুক্ত বলা যাচ্ছে না। কারণ ক্ষত সারতে সময় নেবে, তারপর রয়েছে চিকিৎসার আরও অনেক ধাপ। ক্ষতের জায়গাগুলো শুকিয়ে এলে সেখানে শরীরের অন্য জায়গা থেকে চামড়া এনে স্কিন গ্রাফটিং করতে হবে, যতদিন পর্যন্ত না শিশুটি সুস্থ হচ্ছে ততোদিন তাকে স্ক্যাবুতে রেখেই চিকিৎসা চলবে। আর হাসপাতালের সমাজসেবা বিভাগ এবং হাসপাতাল কর্তৃপক্ষই তার চিকিৎসার যাবতীয় খরচ বহন করছে।’

নবজাক-তিনি বলেন, ‘শিশুটির খোঁজে এখনও কেউ আসেনি। এতো মায়া দুই চোখে, যখন জেগে থাকে তখন তাকিয়ে থাকে, চিকিৎসক-নার্সদের কোল থেকে নামতে চায়না, এতো মায়াময় একটি শিশুটির সঙ্গে এই বর্বতা কেন? আমাদের দেশের নৈতিকতার অভাবেই শিশুটি এখন মায়ের কোল ছেড়ে অপরিচিত মানুষের সান্নিধ্যে রয়েছে। শিশুটির ভবিষ্যত কী হবে সে নিয়েও চিন্তা হয়।’

এ বিসয়ে মতিঝিল থানার সহকারী উপ-পরিদর্শক (এএসআই) মো. সবির উদ্দিন শিকদার বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘সেদিন রাত ১২ টার দিকে তালা ভেঙ্গে আমরা রুমটিতে ঢুকেই খাটের ওপরে একটি মৃতদেহ দেখতে পাই, পুরো ঘরে ছিল লাশের গন্ধ। আরও দেখতে পাই, খাট আর দেয়ালের মাঝের ফাঁকা জায়গায় একটি শিশু ঝুলছে, প্রথমে তাকে মৃত ভেবেছি, মৃত ভেবেই ওকে ধরে সেখান থেকে সরিয়ে আনতেই শিশুটি হাতের আঙুল নাড়াতে থাকে, চোখ খুলে তাকাচ্ছিল, তারপরই দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে যাই।’

সবির উদ্দিন বলেন, ‘শিশুটির মাথা খাট আর দেয়ালের ফাঁকা জায়গার চেয়ে বড় ছিল বলেই মাথা আটকে সেখানে সে ঝুলছিল, আর দেয়াল ও খাটের সঙ্গে এভাবে আটকে থাকায় মাথার পেছনের জায়গায় এবং বাম গালে এভাবে ক্ষতর সৃষ্টি হয়।’

শিশুটিকে উদ্ধারকারী এ পুলিশ সদস্য বলেন, ‘সৃষ্টিকর্তাই শিশুটিকে বাঁচিয়ে রেখেছেন। কারণ ওভাবে ঘণ্টার পর ঘণ্টা আটকে থাকার পরও বেঁচে থাকাটা আশ্চর্যজনক।’

/এসএনএইচ/