গত শনিবার (২৪ জুন) লাকসাম থানার মুদাপুরগঞ্জে এই দুর্ঘটনা ঘটে। ওই দিন থেকেই পঙ্গু হাসপাতালে চিকিৎসাধীন মুরাদ। বৃহস্পতিবার (২৯ জুন) সেখানে গিয়ে কথা হয় মুরাদের মামা মোজাম্মেল হকের সঙ্গে। মুরাদের বেডের পাশের বেডে বসে মোজাম্মেল বলেন, ‘ঈদের কেনাকাটা করতে বের হয়েছিল বুবু (মুরাদের মা)। সঙ্গে মুরাদ ও তার দাদা ছিল। কিন্তু সেই কেনাকাটা শেষে আর বাড়ি ফিরতে পারলো কই?’
হাসপাতালে মোজাম্মেলক হকের সঙ্গে ছিলেন তার স্ত্রী রেহানা আক্তার। তিনি বলেন, ‘ছেলেটা এখনও জানে না ওর মা-দাদা বেঁচে নেই। এত চঞ্চল ছেলেটা এখন একদম চুপ হয়ে গেছে। প্রয়োজন ছাড়া একটি কথাও বলে না। অথচ ওর কথার জন্য ঘরে টেকা যেত না।’
রেহানা আরও বলেন, ‘মুরাদের বড় ভাই শিহাব, ওর বয়স ১২ বছর। কিন্তু শিহাব আর মুরাদের সঙ্গে ফোনেও কথা বলছে না। শিহাব আমাদের বলে, মুরাদের সঙ্গে কথা বললেই তো শুধু মাকে খোঁজে। কিন্তু মাকে কোথা থেকে খুঁজে দেবো। মা তো আর নেই।’
মুরাদের বেডের পাশে অবস্থান করে দেখা যায়, মুরাদ কোনও কথাই বলছে না। কেবল বড় বড় চোখে চারিদিকে তাকিয়ে আছে। বেশিরভাগ সময়ই তার দৃষ্টিটা পাশে রাখা টেবিল ফ্যানের দিকে। এত মানুষ তার কাছে আসছে, তার ছবি তুলছে, তার কাছে গিয়ে মাথায় বুলিয়ে দিচ্ছে— কোনোকিছুতেই যেন তার কোনও আগ্রহ নেই। মুরাদের কাছে প্রায় পৌনে এক ঘণ্টা অবস্থানকালে কেবল একবারই তাকে পানি চাইতে দেখা গেল মামির কাছে।
মুরাদের মামি রেহানা জানালেন, দুর্ঘটনায় মুরাদের মা ও দাদার মৃত্যুর পাঁচ দিন পূর্তিতে গ্রামের বাড়িতে গিয়েছেন মুরাদের বাবা।
জাতীয় অর্থপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন প্রতিষ্ঠানের (পঙ্গু হাসপাতাল) চিকিৎসক ডা. শুভ প্রসাদ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আমরা চিকিৎসকরা এসব ঘটনার সঙ্গে পরিচিত। কিন্তু এই বাচ্চাটার ঘটনায় আমরাও শোকাহত। এত অল্প বয়সে মাকে হারালো, নিজের পা-ও হারালো। কিন্তু ওকে বাঁচিয়ে রাখতে পা কেটে ফেলা ছাড়া আমাদের কোনও উপায় ছিল না।’
আরও পড়ুন-
এবার ঈদের ছুটিতে অন্যান্যবারের চেয়ে বেশি রোগী সেবা পেয়েছেন
/টিআর/