কারখানার ধসে পড়া দেয়ালে স্বপ্ন ভেঙে গেল শিমুলির

 

স্বামীর মরদেহের অপেক্ষায় শিমুলি বেগম

মঙ্গলবার (৪ জুলাই) সকাল। ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের মর্গের বাইরে বসে আছেন শিমুলি বেগম। চোখের পানি ততক্ষণে শুকিয়ে এসেছে। হতবিহ্বল চোখে বারবার জানতে চান তিনি, স্বামীকে নিয়ে কখন বাড়ি ফিরতে পারবেন। শিমুলির শ্বশুরবাড়ি বগুড়ার গাবতলীতে। স্বামী সালমান শাহ সোমবার গাজীপুরে একটি পোশাক কারখানার বয়লার বিস্ফোরণে ভবন ধসে আহত হন। হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল ঠিকই, কিন্তু রাতে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। এরপর থেকে শিমুলি বেগম নিথর হয়ে যান। পেটে চার মাসের সন্তান নিয়ে সকাল বেলা স্বামীর মরদেহ বুঝে নেওয়ার জন্য মর্গের বাইরে অপেক্ষা করছিলেন তিনি। 

সালমানের ভাগ্নে ইব্রাহিম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আমরা বাড়ি ফিরে যাচ্ছি, বগুড়ায়। কিভাবে কী হয়ে গেল এখনও বুঝতে পারছি না।’ কী হয়েছিল সালমানের জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘বয়লার বিস্ফোরণে ভবনের একাংশ ধসে পড়ে। সেই ধসে মাথায় মারাত্মক আঘাত পান সালমান। মেডিক্যালে আনা হলেও বাঁচানো গেল না।’

গাজীপুর সিটি করপোরেশনের কাশিমপুর নয়াপাড়া এলাকার মাল্টিফ্যাবস লিমিটেড নামের একটি পোশাক কারখানার ডায়িং সেকশনে সোমবার (৩ জুলাই) সন্ধ্যায় কাজ চলছিল। ঈদের ছুটির কারণে এদিন কারখানার অন্য সেকশনের উৎপাদন বন্ধ ছিল। সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে চার তলা বিশিষ্ট ওই কারখানা ভবনের নিচ তলার বয়লার হঠাৎ বিস্ফোরিত হয়। এসময় পুরোভবন কেঁপে ওঠে এবং ভবনের নিচ তলা ও দ্বিতীয় তলার বেশ কিছু অংশ ধসে পড়ে। আর  এতেই স্বপ্ন ভেঙে পড়ে অন্তঃসত্ত্বা শিমুলির।

ইব্রাহিম আরও  বলেন, ‘মামা কাজে গিয়েছিল। দুর্ঘটনার খবর পেয়েই আমরা সেখানে যাই। তাকে আহত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়। এই বিল্ডিং  ভেঙে না পড়লে হয়তো মামাকে এভাবে চলে যেতে হতো না। আমরা কেউই এখন এসব নিয়ে কথা বলার অবস্থায় নাই।’

এরমধ্যে শিমুলি সম্বিত ফিরে পান, আবারও সেই প্রশ্ন তার, ‘কখন যাবো আমরা। আমার সন্তানের মুখতো দেখা হলো না।’ কার কাছে অভিযোগ জানে না শিমুলি। দুপুরের পর আবারও কথা হয় ইব্রাহিমের সঙ্গে। বুজে আসা কণ্ঠে তিনি বলেন, ‘আমরা চলে যাচ্ছি। পরে কথা হবে।’ তখনও শিমুলির বিলাপ কানে আসে। ইব্রাহিম কথা বলতে না পেরে ফোন কেটে দেন।

সোমবারের দুর্ঘটনায় মারাত্মক আহত সালমানকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে আনা হয়। ত্রিশ বছরের সালমান শাহ এখানেই চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত ওই দুর্ঘটনায় সালমানসহ ১১ শ্রমিক মারা যান।
বয়লার বিস্ফোরণে হতাহতের ঘটনায় অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট রায়হানুল ইসলামকে প্রধান করে আট সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটিতে ফায়ার সার্ভিস, জেলা পুলিশ, বিজিএমইসহ বিভিন্ন সংস্থার সাত জন প্রতিনিধিকে সদস্য রাখা হয়েছে। আগামী সাত কর্মদিবসের মধ্যে কমিটিকে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে।

/ইউআই/ এপিএইচ/