সীতাকুণ্ডে শিশুর মৃত্যু: ছয় স্বাস্থ্য মাঠকর্মীকে বদলি

 

সীতাকুণ্ডচট্রগ্রামের সীতাকুণ্ডের সোনাইছড়ির ত্রিপুরা এলাকায় টিকাদান কর্মসূচিতে কর্তব্যে অবহেলার কারণে ছয়জন স্বাস্থ্য মাঠকর্মীকে বদলি করেছে স্বাস্থ্য অধিদফতর। স্বাস্থ্য অধিদফতরের নির্দেশক্রমে এ বদলি করা হয় বলে বাংলা ট্রিবিউনকে জানিয়েছেন চট্রগ্রাম জেলার সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মাদ আজিজুর রহমান সিদ্দিকী।

তিনি বলেন, চট্রগ্রামে সন্দীপের দুর্গম এলাকার উড়কীর চড়ে তাদের বদলি করা হয়েছে। ১৮ জুলাই চট্রগ্রাম থেকে বদলি সংক্রান্ত কাগজপত্র সই করে ঢাকায় স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালকের কাছে ইমেইলের মাধ্যমে পাঠানো হয়েছে।

প্রসঙ্গত,সীতাকুণ্ডের সোনাইছড়ি এলাকায় গত ৮ জুলাই প্রথম একটি শিশুর মৃত্যু হয়। এ ঘটনার পরবর্তীতে ৯ জুলাই আরও দু’জন, ১১ জুলাই একজন ও ১২ জুলাই ৪ জন শিশুর মৃত্যু হয়। কিন্তু গণমাধ্যমে ঘটনাগুলো প্রকাশের পর রোগত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের এর ৫ সদস্যের টিম সেখানে গিয়ে আক্রান্ত শিশুদের দেহ থেকে নমুনা সংগ্রহ করে। ল্যাব টেস্টের পর গতকাল ১৭ জুলাই তারা জানান, আক্রান্ত ও মৃত শিশুরা হাম রোগের জীবাণু দ্বারা সংক্রমিত হয়েছিল। তারা পুষ্টিহীনতায়ও ভুগছিল। এ কারণে একজনের শরীর থেকে অন্যজনের শরীরে দ্রুত সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ছিল। অপুষ্টির কারণে সংক্রমণ তীব্র আকার ধারণ করেছিল। কিন্তু ঠিক সময়ে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হলে মৃত্যুর আশঙ্কা থাকত না।

একইসঙ্গে স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল কালাম আজাদ বলেন, দেশের প্রতিটি ইউনিয়নে ওয়ার্ডভিত্তিক পরিকল্পনা অনুযায়ী টিকাদান কর্মসূচি পালিত হয়। কিন্তু সীতাকুণ্ড উপজেলায় সোনাইছড়ি ইউনিয়নের তালিকায় ত্রিপুরা পাড়ার নাম উল্লেখ নেই। ম্যালেরিয়াসহ অন্য কয়েকটি রোগ প্রতিরোধ প্রকল্পের আওতায় থাকলেও ত্রিপুরা পাহাড়ের ৯টি এলাকায় ৩৮৮ জন মানুষ স্বাস্থ্য অধিদফতরের এ টিকাদান কর্মসূচির বাইরে ছিল। এ কারণে সেখানে কোনও টিকাদান কার্যক্রম ছিল না। সীতাকুণ্ডের নয়টি পাহাড়ে ৮৫টি বাড়ির ৩৮৮ জন কয়েকটি গোষ্ঠীর মানুষ বিচ্ছিন্ন এলাকায় বসবাস করত বলে তারা আধুনিক শিক্ষা থেকে দূরে ছিল। বাচ্চাদের রোগবালাই ও চিকিৎসার বিষয়ে কোনও তথ্য জানতো না।

এতোদিন কেন এসব মানুষরা জাতীয় টিকাদান কর্মসূচির আওতায় ছিল না এবং সেটি কাদের অবহেলায় ছিল জানতে চাইলে মহাপরিচালক বলেন, আমরা তদন্ত কমিটি করেছি, তারা প্রতিবেদনও দিয়েছে। সে অনুযায়ী আমরা সিদ্ধান্ত নেব।

প্রতিবেদনে অবহেলা পেয়েছেন জানিয়ে আজ চট্রগ্রামের সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মাদ আজিজুর রহমান সিদ্দিকী বাংলা ট্রিবিউনকে ফোনে বলেন, পাহাড়ের ওই অধিবাসীদের আধুনিক চিকিৎসায় অবহেলা ছিল, মাঠকর্মীরা তাদের কাছে গেলে তাদের তাড়িয়ে দিতো এমন ঘটনাও ঘটেছে। আমাদের মাঠকর্মীদের অপরাধ হলো, তারা যে টিকা দিতে গিয়ে ফেরত এসেছে এসব ঘটনা আমাদের জানায়নি। তারা যদি আমাদের জানাতো তাহলে আমরা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ ব্যবস্থা নিতে পারতাম, এতে করে এতোগুলো শিশু হয়তো মারা যেতো না। তাদের বদলি করা হয়েছে আমাদের না জানানোর অপরাধের শাস্তি হিসেবে, আর যদি তারা সেসব জায়গায় একেবারে নাই যেতো তাহলে চাকরি চলে যেতো এটা আপনাকে আমি নিশ্চিত বলছি বলেও জানান তিনি।

/জেএ/এসএনএইচ/