র‌্যাবের হাতে গ্রেফতার কামাল প্রায় দুই মাস নিখোঁজ ছিল

র‌্যাবের হাতে আটক কামাল

জেএমবির সারোয়ার-তামিম গ্রুপের যে তিন সদস্যকে গ্রেফতারের কথা বলছে র‌্যাব, তাদের মধ্যে একজন প্রায় দু’মাস আগে রাজধানীর বনানী এলাকা থেকে নিখোঁজ হয়েছিল। তবে র‌্যাব বলছে, বাড্ডার আফতাব নগর এলাকা থেকে গোপন বৈঠকের সময় দুই সহযোগীসহ কামাল ওরফে বিপ্লব হোসেন কামাল ওরফে সুন্নাহ কামাল ওরফে মাওলানা কামাল হোসেন বিপ্লবীকে গ্রেফতার করেছে। তার অন্য দুই সহযোগী হলো- মুশফিকুল হক ও মামুনুর রশীদ ওরফে আবু ইউশা। তারা জেএমবি’র সারোয়ার-তামিম গ্রুপের সক্রিয় সদস্য এবং সংগঠনের পক্ষে কর্মী ও অর্থ সংগ্রহ, জঙ্গিবাদে উদ্বুদ্ধকরণ, হিজরতের পূর্ব প্রস্তুতি নেওয়ার চেষ্টা করছিল বলে র‌্যাবের দাবি।

বুধবার দুপুরে কারওয়ান বাজারে র‌্যাবের মিডিয়া কার্যালয়ে র‌্যাব-৩ এর অধিনায়ক লে. কর্নেল তুহিন মোহাম্মদ মাসুদ এই তথ্য জানান।

গত ৩ জুন বনানী এলাকা থেকে কামালসহ একই দিনে চার যুবক নিখোঁজ হয়েছিল। অপর তিন জন হলো- ইমাম হোসেন, হাসান মাহমুদ ও তাওহিদ। এ ঘটনায় ৩ ও ৪ জুন পৃথক তিনটি সাধারণ ডায়েরি দায়ের করা হয় বনানী থানায়।

বনানী থানার পুলিশ কর্মকর্তা ও পরিবারের সদস্যরা সেসময় জানিয়েছিলেন, কামাল নিউ ইস্কাটন এলাকার দিলু রোডের জামিয়া ইসলামিয়া দারুল উলুম মাদ্রাসা থেকে দাওরা হাদিস ডিগ্রি সম্পন্ন করে। ইমাম ও হাসান ব্র্যাক ইউনিভার্সিটি থেকে ইলেক্ট্রনিক্স অ্যান্ড ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে স্নাতক সম্পন্ন করার পর কম্পিউটার সায়েন্সে মাস্টার্স করেন। তারা একসঙ্গে বনানীর সি-ব্লকের ৪ নম্বর সড়কের ৬৭/এ, মোস্তফা ম্যানসনের পঞ্চম তলার ইন্টারকম ট্রেড ইন্টারন্যাশনাল ও টেলেক্স লিমিটেড নামে একই মালিকের একটি প্রতিষ্ঠানে কাজ করেন। কামালের খোঁজ পাওয়া গেলেও বাকি তিন জনের কোনও খোঁজ এখনও পাওয়া যায়নি।

র‌্যাব-৩ এর অধিনায়ক লে. কর্নেল তুহিন মোহাম্মদ মাসুদ বলেন, ‘জঙ্গিরা কথিত হিজরতের নামে বাসা থেকে বেড়িয়ে যায়। আত্মগোপনে থেকে সংগঠনের জন্য কাজ করে। একারণে পরিবারের সদস্যরা মনে করে, তারা নিখোঁজ হয়েছে। আফতাব নগরে  বৈঠক করার সময় গোপন সংবাদের ভিত্তিতে কামাল ও তার দুই সহযোগীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করে জানার চেষ্টা করা হবে, সে (কামাল) এতদিন কোথায় ছিল? আর তার সহযোগীরাই বা কোথায় আছে?’

র‌্যাবের হাতে আটক তিন ব্যক্তি যাদের জঙ্গি হিসেবে সন্দেহ করা হচ্ছে

র‌্যাবের ভাষ্য, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে কামাল জানিয়েছে, সে ইমাম মেহেদী, সাজিদ, তাওহিদ এবং অন্যান্যদের মাধ্যমে হলি আর্টিজান ঘটনার আগে থেকেই সারোয়ার-তামিম গ্রুপের সদস্য হিসেবে জঙ্গিবাদে উদ্বুদ্ধকরণ ও অংশগ্রহণের জন্য কর্মী সংগ্রহের কাজে নিয়োজিত ছিল। একটি আইটি কোম্পানিতে চাকরির সুবাদে জঙ্গিবাদে উদ্বুদ্ধ করার উদ্দেশে বিভিন্ন ধরনের জঙ্গি সংশ্লিষ্ট ভিডিও, পিডিএফ বই ও ইন্টারনেট থেকে বিভিন্ন আর্টিকেল সংগ্রহ ও সরবরাহের কাজ করতো। আরবি ভাষায় দক্ষতা থাকার কারণে সে জঙ্গিবাদ সংশ্লিষ্ট লেখাগুলো বাংলায় অনুবাদ করতো।

র‌্যাব কর্মকর্তাদের দাবি, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে কামাল জানিয়েছে, সে সংগঠনকে পুনর্গঠিত করার জন্য দেশি ও প্রবাসীদের কাছ থেকে অর্থ সংগ্রহ করার চেষ্টা করে। পরিবারের সদস্যদের না বলে সে কিছুদিন আগে কথিত হিজরতের নামে ঘর ছাড়ে।

গ্রেফতার হওয়া ব্যক্তিদের বরাত দিয়ে র‌্যাব কর্মকর্তারা বলেন, মুশফিক ২০১২ সালে রিটার্ট টু ইসলাম নামে একটি সংগঠনের সঙ্গে জড়িত ছিল। ওই সংগঠনের অন্যতম পৃষ্ঠপোষক মামুনুর রশিদ ওরফে কাজল ওরফে ইবনে আজিজুর রহমান প্রথমে তাকে জেএমবির সারোয়ার-তামিম গ্রুপের আদর্শে অনুপ্রাণিত করে। পরবর্তিতে মুশফিক মহাখালীর ব্র্যাক ইউনিভার্সিটিতে ফার্মেসি বিভাগে ভর্তি হয়। এখানে ইমাম, কামাল, তাওহীদসহ কয়েকজনের সঙ্গে তার পরিচয় হয়। তারা মুশফিককে জঙ্গিবাদ বিষয়ক বিভিন্ন আর্টিকেলের অনুবাদক হিসেবে কাজ করায়।

মুশফিক প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানায়, সে, সাজিদ হাসান ও তাওহিদ  গত ১০ এপ্রিল গ্রেফতার হওয়া জাইদুল হক জিহানের সঙ্গে ফার্মগেটের একটি বাসায় নিয়মিত বৈঠক করতো। ওই বাসায় তারা বিভিন্ন অ্যাপসের মাধ্যমে জঙ্গিবাদ বিষয়ক লেখার অনুবাদ ও পিডিএফ কপি আদান প্রদান করতো। এছাড়া জঙ্গিবাদের জন্য অর্থ সংগ্রহের কাজ করতো। মুশফিকের বাবার নাম একেএম বদরুল আমিন। সিলেট উপশহরে তাদের বাড়ি।

এছাড়া গ্রেফতার হওয়া আরেকজন মামুনুর রশিদ ওরফে আবু ইউশা জানায়, সে ইমাম ও তাওহিদের মাধ্যমে জেএমবির সারোয়ার-তামিম গ্রুপের সঙ্গে জঙ্গিবাদী কার্যক্রমে জড়িয়ে পড়ে। এছাড়া জঙ্গি সংশ্লিষ্ট কাজের জন্য ইমামকে সে বেশকিছু ভুয়া রেজিস্ট্রেশন করা সিম দেয়। মামুনুর রশিদের বাবার নাম লুৎফর রহমান, গ্রামের বাড়ি নেত্রকোনার কেন্দুয়ার সরাপাড়ায়।

র‌্যাব কর্মকর্তা তুহিন মোহাম্মদ মাসুদ বলেন, ‘বনানী ও মহাখালীকেন্দ্রিক জঙ্গি গ্রুপের বেশ কয়েকজন সদস্যকে তারা আগে গ্রেফতার করেছেন। তাদের দেওয়া তথ্য মতে, এই গ্রুপগুলোতে নিজেদের মধ্যে অন্তর্কোন্দল হওয়ার কারণে ছোট ছোট গ্রুপে বিভক্ত হয়ে গেছে। তারা ছোট ছোট গ্রুপে জঙ্গি সংশ্লিষ্ট সাংগঠনিক কার্যক্রম করে আসছে। এদের মূল হোতা মামুনুর রশিদ নামে আরেক ব্যক্তি। সে গত ৬-৭ মাস আগে সিলেটের বাসা থেকে নিখোঁজ হয়ে যায়।’

তিনি বলেন, ‘আমরা এই মামুনুর রশিদসহ তাওহিদ, ইমাম, হাসানসহ তাদের সহযোগীদের গ্রেফতারের চেষ্টা চালাচ্ছি। এদের অনেকেই কথিত হিজরতের নামে বাসা ছেড়ে আত্মগোপনে রয়েছে।’

/এপিএইচ/