বৃহস্পতিবার (২৭ জুলাই) বিশ্ব হেপাটাইটিস দিবস উপলক্ষে স্বাস্থ্য অধিদফতর আয়োজিত এক বৈজ্ঞানিক সেমিনারে স্বাস্থ্যমন্ত্রী এসব কথা বলেন। একই অনুষ্ঠানে স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী ডা. জাহেদ মালিক গণমাধ্যমকে দায়ী করে বলেন, ‘চিকনুগুনিয়া নিয়ে মিডিয়া লাফালাফি করেছে।’
স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম বলেন, ‘চিকুনগুনিয়ার প্রাদুর্ভাব ইতোমধ্যেই অনেক কমে এসেছে, তবে সেটি কবে নাগাদ একেবারে কমে যাবে সেটি এখনই বলতে পারছি না। চিকুনগুনিয়া নিয়ে অধিদফতর অত্যন্ত আন্তরিক হয়ে কাজ করেছে। তারা নানা উদ্যোগ নিচ্ছে যেন আগামী বছরগুলোতে চিকুনগুনিয়া না ছড়ায়। আগামী বছরের জন্য ইতোমধ্যেই নানা কর্মসূচি গ্রহণ করেছি। প্ল্যান অব অ্যাকশন ঠিক করেছে, যেন আগামীতে আর চিকুনগুনিয়া না আসে। তারা যেন আগামীতে বলতে না পারে তাদের কোনও অভিজ্ঞতা ছিল না, মশা নিধন করতে তারা ব্যর্থ হয়েছে।’
পরে মন্ত্রী রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানে (আইইডিসিআর) স্থাপিত চিকুনগুনিয়া কন্ট্রোল রুম পরিদর্শন করে সেখানকার কার্যক্রম প্রত্যক্ষ করেন। তিনি সেখানে যুক্তরাষ্ট্রের আটলান্টা থেকে আগত সংক্রামক রোগ নিয়ন্ত্রণ বিভাগের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের সঙ্গে কিছুক্ষণ কথা বলেন। যুক্তরাষ্ট্রের বিশেষজ্ঞরা এসময় বাংলাদেশে স্থাপিত চিকুনগুনিয়া কন্ট্রোল রুমের রক্ত পরীক্ষাসহ অন্যান্য কার্যক্রমের প্রশংসা করেন এবং চিকুনগুনিয়া ও ডেঙ্গু প্রতিরোধে ভবিষ্যৎ কর্মপন্থা নির্ধারণে বাংলাদেশকে সহযোগিতার আশ্বাস দেন।
মন্ত্রী কন্ট্রোল রুমে আগত রোগীদের সঙ্গেও কথা বলেন। তিনি চিকুনগুনিয়ার জরিপ ও হটলাইন সেবার কাজ সম্পর্কেও খোঁজ-খবর নেন। তিনি আগামী বছর যেন কোনোভাবেই এ ধরনের রোগ বিস্তার না করতে পারে সে লক্ষ্যে এখন থেকেই সমন্বিত ও কার্যকর কর্মসূচি গ্রহণের জন্য সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দেন।
বাংলাদেশ থেকে হেপাটাইটিস নির্মূলে জনসচেতনতা কার্যক্রমকে জোরদার ও সবার সমন্বিত উদ্যোগ নিশ্চিত করার আহ্বান জানিয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, ‘খাবার-দাবার, জীবনধারণ এবং নিরাপদ রক্ত সঞ্চালনে সতর্কতা অবলম্বনে মানুষকে সচেতন করতে হবে।’ তিনি বলেন, ‘আমাদের দেশে রক্ত পরীক্ষা-নিরীক্ষার ক্ষেত্রে সাধারণ মানুষকে যেমন সতর্ক থাকতে হবে, তেমনি ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলোকেও সাবধান থাকতে হবে। অনেক ডায়াগনস্টিক সেন্টার যথাযথ পদ্ধতি মেনে কাজ করে না। সরকার এ ধরনের নিম্নমানের ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও ক্লিনিক বন্ধ করার অভিযান অব্যাহত রাখছে। মানুষের রোগ ও স্বাস্থ্যখাত নিয়ে মাত্রাতিরিক্ত মুনাফা করার মানসিকতা ত্যাগ করতে হবে।’
দ্রুততম সময়ের মধ্যে মহাখালীর সাত তলা বস্তিসহ অবৈধ দখল উচ্ছেদ অভিযান শুরু হবে জানিয়ে মোহাম্মদ নাসিম বলেন, ‘সেই জায়গায় লিভার ইনস্টিটিউটসহ স্বাস্থ্যখাতের জন্য আন্তর্জাতিক মানের প্রতিষ্ঠান ও হাসপাতাল গড়ে তোলার পরিকল্পনা সরকারের রয়েছে।’
বৈজ্ঞানিক সেমিনারে জানানো হয় দেশে বর্তমানে ২০ হাজার মানুষ প্রতিমাসে হেপাটাইটিস রোগে মৃত্যুবরণ করেন। আর বিশ্বে ১ কোটি ৪০ লাখ মানুষ প্রতিদিন মারা যান। এই ধারা অব্যাহত থাকলে ২০৩০ সাল নাগাদ এই সংখ্যা দাঁড়াবে ২০ মিলিয়নে। তাই হেপাটাইটিস নির্মূল করতে সচেতনতা দরকার।
অনুষ্ঠানে বক্তারা বলেন, আমাদের দেশ চিকিৎসা বিজ্ঞানে অগ্রসর হয়েছে। আমাদের দেশে বিদেশিরা আসছে এই ধরনের রোগের চিকিৎসা করাচ্ছে। আমাদের সম্পদের সীমাবদ্ধতা নিয়েও আমরা কাজ করে যাচ্ছি। স্বাস্থ্য ও সেবাক্ষেত্রকে সরকার সবসময় প্রাধাণ্য দিয়ে এসেছে। মাতৃ মৃত্যুহার ও শিশুমৃত্যু হার কমেছে। দেশে কিডনি প্রতিস্থাপন ও বোনম্যারো প্রতিস্থাপন হচ্ছে। সঠিকভাবে কাজ করলে হেপাটাইটিস নির্মূল করাও সম্ভব হবে।তবে এজন্য দরকার সচেতনতা এবং সমন্বিত উদ্যোগ।
বৈজ্ঞানিক সেমিনারে মূল প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) হেমাটোলজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. মামুন আল মাহতাব। ব্যাক্তিগত অভিজ্ঞতা জানিয়ে তিনি বলেন, ‘লিভার ও হেপাটাইটিস চিকিৎসার জন্য যুক্তরাষ্ট্রসহ উন্নত বিশ্বের রোগীরা বাংলাদেশে আসছেন। তবে লিভার সিরোসিস বা লিভার ক্যান্সারের মতো মারাত্মক রোগ দেখা দেওয়ার আগে এটি ধরা গেলে রোগাক্রান্ত ব্যাক্তির নিরাময়ের সম্ভাবনা বেশি। তবে চিকিৎসায় সঠিক সময়ে সঠিক ওষুধ প্রয়োগের ওপর অনেক কিছু নির্ভর করে।’
স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল কালাম আজাদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী জাহিদ মালেক ও সিডিসির লাইন ডাইরেক্টর সানিয়া তাহমিনা বক্তব্য রাখেন।
/জেএ/এনআই/