খুলনায় যুবকের চোখ উপড়ানোর অভিযোগ: পুলিশ ও স্থানীয়দের বক্তব্যে গরমিল

 

হাসপাতালে চিকিৎসাধীন শাহজালাল (ফাইল ছবি)পুলিশ বলছে, ঘটনা রাত ১১টা ৪০ মিনিটের। আর প্রত্যক্ষদর্শীরা বলছেন, রাত সাড়ে ৮টায় ঘটনাটি ঘটে। খুলনার খালিশপুরে পুলিশের বিরুদ্ধে শাহজালাল নামের এক যুবকের দুই চোখ উপড়ে ফেলার অভিযোগকে কেন্দ্র করে পুলিশ ও স্থানীয়রা এমনই ভিন্ন ভিন্ন সময়ের কথা বলছেন। গত ১৮ জুলাই খুলনার খালিশপুরে ওই ঘটনা ঘটে।

আহত যুবক শাহজালাল ছিনতাইয়ের এক মামলায় বর্তমানে আটক হয়ে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। তবে আগামীকাল রবিবার (১৩ আগস্ট) হাসপাতাল থেকে তাকে ছাড়পত্র দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন দায়িত্বরত চিকিৎসক। এদিকে পুলিশের বিরুদ্ধে অভিযোগ ওঠার পর অভ্যন্তরীণ তদন্তে এর সত্যতা পাওয়া যায়নি বলে জানিয়েছেন খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশের (কেএমপি) ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।

কেএমপি উত্তর বিভাগের ডেপুটি কমিশনার মোল্লা জাহাঙ্গীর হোসেন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আমাদের কাছে এ ধরনের অভিযোগ কেউ করেনি। কিন্তু আমরা বিভিন্ন মাধ্যমে খবর পেয়ে অভ্যন্তরীণ তদন্ত করেছি। তদন্তে পুলিশের বিরুদ্ধে চোখ নষ্ট করার অভিযোগের কোনও সত্যতা পাওয়া যায়নি।’

এর আগে অভিযোগ উঠে চাহিদামতো টাকা না পেয়ে শাহজালালের চোখ নষ্ট করে দিয়েছে খুলনার খালিশপুর থানা পুলিশ। ভুক্তভোগী শাহজালাল দাবি করেন, গত ১৮ জুলাই সন্ধ্যার পর শ্বশুরবাড়ির সামনে থেকে তাকে আটক করে থানায় নিয়ে এক লাখ টাকা দাবি করে থানা পুলিশ। কিন্তু চাহিদা অনুযায়ী টাকা দিতে না পারায় খুলনার বিশ্বরোড এলাকায় নিয়ে হাত-পা ও মুখ বেঁধে তার দুই চোখ তুলে ফেলা হয়। এরপর মিথ্যা মামলায় তাকে ফাঁসানো হয়েছে।

এ বিষয়ে পুলিশের দাবি, ছিনতাই করতে গিয়ে জনগণের হাতে ধরা পড়ে শাহজালাল। এরপর গণপিটুনিতে চোখ হারায় সে। ছিনতাইয়ের অভিযোগে শাহজালালের বিরুদ্ধে মামলা করেন সুমা আক্তার নামের এক নারী। সুমা মামলায় উল্লেখ করেন, রাত ১১টা ১৫ মিনিটে হাসপাতালে বাবার কাছে যাওয়ার জন্য রিকশাযোগে রওনা হন তিনি। রাত ১১টা ৪০ মিনিটে গোয়ালখালী বাসস্ট্যান্ড এলাকায় যাওয়ার পর ছিনতাইয়ের শিকার হন। মোটরসাইকেল যোগে দু’জন এসে তার হাতে থাকা ব্যাগ টান দিয়ে নিয়ে যায়। সুমা আক্তার চিৎকার দিলে স্থানীয়রা মোটরসাইকেলের পেছনে থাকা শাহজালালকে আটকে মারধর করে। এক পর্যায়ে তার চোখ নষ্ট করে ফেলে তারা। পরে পুলিশ এসে ‍উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যায়।

বাদি সুমা আক্তারের ঘটনার বিবরণের সঙ্গে একমত পোষণ করেন খালিশপুর থানার ওসি নাসিম খান। তিনি বলেন, ‘আমরা খবর পেয়ে শাহজালালকে উদ্ধার করি। পুলিশ ঘটনাস্থলে না গেলে হয়তো তাকে জীবিত পাওয়া সম্ভব হতো না।’ মামলার বাদী ও পুলিশের বক্তব্য এক হলেও প্রত্যক্ষদর্শী স্থানীয়দের বক্তব্য ভিন্ন। তারা বলছেন, রাত সাড়ে ৮টার দিকে ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটে। এরপর একজনকে ধরে গণধোলাই দেওয়া হয়। তবে গণধোলাইয়ের শিকার হওয়া ব্যক্তি শাহজালাল কিনা তা নিশ্চিত করতে পারেননি কেউ।

বাদী সুমা আক্তার নিজেও অভিযুক্ত শাহজালালের চেহারা দেখেননি বলে বাংলা ট্রিবিউনকে জানিয়েছেন। তিনি মোবাইল ফোনে বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘মোটরসাইকেলে চড়ে দু’জন ছিনতাইকারী আমার সঙ্গে থাকা ব্যাগ ছিনিয়ে নিয়ে যায়। আমি চিৎকার করলে স্থানীয়রা একজনকে ধরে মারধর করে। পরে ব্যাগ ফিরে পেতে থানায় মামলা করি। কিন্তু আমি আসামির চেহারা দেখিনি।’

চেহারা না দেখে কিভাবে আসামি চিহ্নিত করলেন এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘গণধোলাইয়ের সময় সেখান থেকে শাহজালালকে উদ্ধার করেছে বলে পুলিশ জানিয়েছিল। আমি সে অনুযায়ী মামলা করেছি।’

শনিবার (১২ আগস্ট) ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে কথা হয় শাহজালালের বাবা জাকির হোসেনের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘আমার ছেলে পুরোপুরি সুস্থ হয়ে উঠেনি। কিন্তু ডাক্তার বলছে আগামীকাল হাসপাতাল থেকে ছেড়ে দেওয়া হবে। এরপর কেরানীগঞ্জ কারাগার থেকে খুলনা কারাগারে নেওয়া হবে।’ তিনি বলেন, ‘আমি এই ঘটনার বিচার চাই। যারা আমার ছেলেকে অন্ধ করে দিয়েছে, তাদের বিচার দেখে মরতে চাই।’

চিকিৎসা শেষে আগামীকাল রবিবার হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র দেওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন ঢাকা মেডিক্যাল কলেজের অধ্যাপক ডা. ফরিদুল হাসান। তিনি বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আমাদের চিকিৎসা শেষ। আগামীকাল (১৩ আগস্ট) তাকে ছাড়পত্র দেওয়া হবে।’ তিনি আরও বলেন,‘শাহজালালের পরিবারের সদস্যরা বলছে, তার আরও সমস্যা আছে। কিন্তু এগুলোর চিকিৎসা আমরা করবো না। এটা দেখবে মেডিসিন বিভাগ। চোখের চিকিৎসা আমরা করেছি।’

আরজে/এএম