ধর্ষণ মামলার নিষ্পত্তি দ্রুত বিচার আইনে করতে হবে

আন্তর্জাতিক গ্রামীণ নারী দিবস উদযাপন জাতীয় কমিটির মানববন্ধননারীর প্রতি সব ধরনের যৌন নির্যাতন প্রতিরোধে আইনের কঠোর প্রয়োগ নিশ্চিত করতে হবে। প্রয়োজনে ধর্ষণের মতো ঘটনাগুলোর দ্রুত বিচার আইনে নিষ্পত্তি করতে হবে। শনিবার (১৪ অক্টোবর) জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে মানববন্ধন থেকে এ দাবি জানিয়েছে আন্তর্জাতিক গ্রামীণ নারী দিবস উদযাপন জাতীয় কমিটি। আগামীকাল রবিবার (১৫ অক্টোবর) আন্তর্জাতিক গ্রামীণ নারী দিবস উপলক্ষে এ মানববন্ধনের আয়োজন করা হয়। এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।

বাংলাদেশে ২০০০ সাল থেকে বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী ও বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা (এনজিও) নিজেদের অর্থায়নে গ্রামীণ নারী দিবস উদযাপন করছে। জাতীয় উদযাপন কমিটির ব্যানারে প্রতিবছর জাতীয় ও জেলা পর্যায়ে দিবসটি পালন করা হয়ে থাকে।

মানববন্ধন আয়োজকদের পক্ষ থেকে জানানো হয়, দেশের ৫০টির বেশি জেলায় উদযাপন করা হচ্ছে আন্তর্জাতিক গ্রামীণ নারী দিবস। প্রতিবছরের মতো এবারও সারাদেশে শোভাযাত্রা, সেমিনার, মানববন্ধন, মেলা আয়োজন এবং গ্রামীণ নারীদের বিভিন্ন ক্ষেত্রে অবদান রাখার জন্য সম্মাননা প্রদানসহ নানা কর্মসূচির মধ্য দিয়ে দিবসটি উদযাপন করা হবে।

আন্তর্জাতিক গ্রামীণ নারী দিবস উদযাপন জাতীয় কমিটির সচিবালয় সমন্বয়কারী মোস্তফা কামাল আকন্দের সঞ্চালনায় মানববন্ধন ও সমাবেশে আয়োকজকদের পক্ষ থেকে মূল বক্তব্য উপস্থাপন করেন জাতীয় কমিটির সচিবালয় সম্পাদক ফেরদৌস আরা রুমী, বাংলাদেশ মাস পিপল জাস্টিস পার্টির সভাপতি মো. হাসান, বাংলাদেশ কৃষক ফোডারেশনের (জাই্) সভাপতি জায়েদ ইকবাল খান, বাংলাদেশ কৃষক ফেডারেশনের সভাপতি বদরুল আলম, বাংলাদেশ কিষাণী সভার কদ ভানু এবং জাতীয় কমিটির সভাপ্রধান শামীমা আক্তার।

মানববন্ধনে ফেরদৌস আরা রুমী বলেন, ‘দেশে প্রতিদিন গড়ে দুটি ধর্ষণের ঘটনা ঘটছে। এরমধ্যে মামলা হচ্ছে অর্ধেক ঘটনায়। দীর্ঘ আইনি ও নানা জটিল প্রক্রিয়ার কারণে এসব মামলার অধিকাংশই আলোর মুখ দেখছে না। অন্যদিকে, আইনের ফাঁকফোকর গলিয়ে বেরিয়ে যাচ্ছে বেশিরভাগ আসামি। পরিসংখ্যান বলছে, ধর্ষণ মামলার রায় ঘোষণার হার মাত্র তিন দশমিক ৬৬ ভাগ। যার মধ্যে সাজা পাচ্ছে শূন্য দশমিক ৪৫ ভাগ। আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক) বলছে, চলতি বছরের প্রথম সাত মাসে দেশে ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে ৪২৪টি। এর মধ্যে গণধর্ষণে শিকার হয়েছে ৮৮ নারী ও শিশু। অন্যদিকে, শিশুদের অধিকার নিয়ে কাজ করা জাতীয় বেসরকারি সংস্থা বাংলাদেশ শিশু অধিকার ফোরাম (বিএসএএফ) বলছে, চলতি বছরের প্রথম ছয় মাসে ২৯৪ শিশু ধর্ষণের শিকার হয়েছে।’ ফেরদৌস আরা রুমী আরও বলেন, ‘এখন পর্যন্ত একটিও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি না দেওয়ার কারণে ধর্ষণ, ধর্ষণের পর হত্যা, আত্মহত্যা– এই ঘটনাগুলো বেড়েই চলছে।’

জায়েদ ইকবাল খান বলেন, ‘গরিব অভিভাবকরা অনেক সময় অল্প টাকায় আসামির সঙ্গে আপস করে মামলা তুলে নেন। অনেক সময় সম্মান খোয়ানোর ভয়ে ভিকটিম বা তার পরিবার মামলা করেন না। আবার, মামলা করলেও আসামি পক্ষের আইনজীবীর নোংরা জেরার কারণে বাদীপক্ষ পিছিয়ে যান। অথচ ধর্ষণের জন্য দায়ী কেবল ধর্ষক এবং তার বিকৃত মানসিকতা। তাই ধর্ষণ বা নির্যাতনের শিকার নারীকে দায়ী করার মানসিকতা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে সবার আগে।’

বদরুল আলম বলেন, ‘১৯৯৮ সাল থেকে বিভিন্ন দেশে আন্তর্জাতিক গ্রামীণ নারী দিবস হিসেবে এটি পালিত হচ্ছে। ২০০৭ সালে এসে এই দিবসটি এক বিশেষ স্বীকৃতি লাভ করে। বিশ্বব্যাপী গ্রামীণ নারীর নানা সমস্যা সম্পর্কে সংশ্লিষ্টদের দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য এই দিনটি বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ।’ এবারের বিষয়ের গুরুত্ব উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘অনেক পরিবারের মধ্যে কন্যাশিশুর প্রতি বৈষম্যমূলক দৃষ্টিভঙ্গি সমাজে এই ধরনের অপরাধ প্রবণতা বাড়ায়। তাই কোনোভাবেই পরিবারে ছেলে-মেয়ের মধ্যে বৈষম্য করা যাবে না। পাশাপাশি পাঠ্যপুস্তকে এই বিষয়গুলো অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।’

শামীমা আক্তার বলেন, ‘অধিকাংশ শিশু ধর্ষণের ঘটনা পর্যবেক্ষণ করে দেখা গেছে, ধর্ষণকারীরা সম্পর্কে আত্মীয়, পাড়া-প্রতিবেশী বা পরিবারের পরিচিতজন। এসব নাবালক শিশুদের মূলত চকলেট, খেলনা ইত্যাদি দেওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে কোনও নির্জন স্থানে বা বাড়িতে একা পেয়ে ধর্ষণ করা হয়। এছাড়া, ১৩ থেকে ১৮ বছরের শিশুদের ধর্ষণ করা হয়েছে বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে, জোরপূর্বক তুলে নিয়ে গিয়ে বা কোনও নির্জন স্থানে বা বাড়িতে একা পেয়ে। এই কারণে ছোটবেলা থেকে পরিবারে ছেলেশিশুদের নৈতিক শিক্ষা দেওয়া, নারীকে সম্মান করা, তার নিরাপত্তা বিঘ্নিত হলে এগিয়ে যাওয়ার মানসিকতায় বড় করতে হবে।’

মোস্তফা কামাল আকন্দ বলেন, ‘গণমাধ্যমে ধর্ষকের ছবি এবং তার সম্পর্কে বিশদ বর্ণণা দিয়ে আসামি এবং তার পরিবারকে সমাজের চোখে কোণঠাসা করতে হবে। কিন্তু কখনই ভিকটিম বা তার পরিবার সম্পর্কে কোনও তথ্য প্রকাশ করা যাবে না।’