ফেক নিউজের বিপক্ষে মূলধারার গণমাধ্যমকে দাঁড়াতে হবে

ফেক নিউজ শীর্ষক সেশনে বক্তব্য রাখছেন বাংলা ট্রিবিউন সম্পাদক জুলফিকার রাসেলফেসবুক, টুইটারসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের কল্যাণে এখন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহারকারীরা প্রত্যেকেই একেকটি গণমাধ্যমের মালিক বনে গিয়েছেন। যার যেভাবে ইচ্ছে নিজের মতামত ব্যক্ত করতে পারছেন এবং করছেন। ফলে মূল খবরের ভিড়ে প্রচুর ভুয়া খবর বা ফেক নিউজ ছড়িয়ে পড়ছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। এমন সব ফেক নিউজের কারণে তাৎক্ষণিকভাবে বড় ধরনের সমস্যাও তৈরি হয়। সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার মতো ভয়াবহ পরিস্থিতিও দেশে এইসব ফেক নিউজের কারণে ঘটছে। কিন্তু এ পরিস্থিতি থেকে সমাজকে বাঁচাতে মূলধারার গণমাধ্যমকে প্রধান দায়িত্ব নিতে হবে। সঙ্গে সঙ্গে পাঠকদেরকেও সচেতন হতে হবে। প্রয়োজনে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকেই এ বিষয়ে সচেতনতামূলক বার্তা দিতে হবে। তাহলে এমন ভুয়া খবর বা ফেক নিউজের প্রভাব অনেক কমে যাবে।
বৃহস্পতিবার (১৬ নভেম্বর) ‘ঢাকা লিট ফেস্ট ২০১৭’-এর উদ্বোধনী দিনে বিকাল ৩টায় অনুষ্ঠিত 'ফেক নিউজ' শীর্ষক এক সেশনে এসব কথা বলেন বক্তারা। এটিএন নিউজের বার্তা প্রধান প্রভাষ আমিনের সঞ্চালনায় সেশনে বক্তব্য রাখেন বাংলা ট্রিবিউনের সম্পাদক জুলফিকার রাসেল, অনলাইন অ্যাকটিভিস্ট আরিফ জেবতিক, আইনজীবী রুমিন ফারহানা এবং ভারতীয় গবেষক ও কলামিস্ট গর্গ চট্টোপাধ্যায়।
সেশনের শুরুতেই বাংলা ট্রিবিউন সম্পাদক জুলফিকার রাসেল তার বক্তব্যে বলেন, 'ফেক নিউজ নিয়ে আলোচনা করতে হলে প্রথমেই আমাদের বুঝতে হবে ফেক নিউজ কী। ফেক নিউজ সেটাই যেটার মূল তথ্যের সঙ্গে শিরোনামের কোনও মিল নেই অথবা যে খবরটি ছাপা হলো সেটা পুরোপুরিভাবে ভুয়া বা মিথ্যা খবর। আবার অনেক সময় টুইস্ট করে খবর ছাপা হয়। অন্যদিকে, কিছু নিউজ আছে, যা স্যাটায়ার করে লেখা। সেই স্যাটায়ার নিউজ পড়ে বোঝা যায় না যে সেটা ফেক নিউজ। এসব খবর পাঠককে বিভ্রান্ত করে। আর এসব ফেক নিউজ ছড়ানোর কারণে সমাজে বিভিন্ন ধরনের বিরূপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়। তবে এসব ফেক নিউজ বিষয়ে পাঠককেও সচেতন হতে হবে।'
সেশনে বক্তব্য রাখছেন অনলাইন অ্যাকটিভিস্ট আরিফ জেবতিকঅনলাইন অ্যাকটিভিস্ট আরিফ জেবতিক বলেন, ‘ফেক নিউজ গত দু’বছর ধরে মারাত্মকভাবে সারাবিশ্বে রাজনৈতিকভাবেও প্রকাশ করা হচ্ছে। রাশিয়া ইদানীং এক ধরনের টুইস্ট করে ফেক নিউজ ছাড়ছে। রাজনৈতিক উদ্দেশ্য হাসিলের জন্য সারাবিশ্বে অন্তত ৩০ টি সরকারকে চিহ্নিত করা হয়েছে, যারা অনলাইন গণমাধ্যমের মাধ্যমে ফেক নিউজ ছড়াচ্ছে। সম্প্রতি ডিকশনারিতেও শব্দটি যুক্ত হয়েছে। কিন্তু বিষয়টি খুবই মারাত্মক। এখান থেকে বের হওয়া খুবই কঠিন হবে বলে মনে করি। তবে এটা ঠিক, সচেতনতার কোনও বিকল্প নেই। মূলধারার গণমাধ্যমকেও এর বিপক্ষে দাঁড়াতে হবে।’
আইনজীবী রুমিন ফারহানা বলেন, 'সবাই জানে, ফেক নিউজের ব্যাপক একটি নেতিবাচক প্রভাব রয়েছে। আমি নিজেও রাজনৈতিকভাবে ফেক নিউজের শিকার। তবে এটা সত্য, কোনও ব্যক্তি বা গোষ্ঠী সম্পর্কে ফেক নিউজ বা ভুয়া খবর প্রচার করলে তার বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার সুযোগও আছে। চাইলে ৫৭ ধারায় মামলা করা যায়, ৫০০ ধারায় মানহানির মামলা করা যায়। আবার কেউ এমন ফেক নিউজের কারণে আক্রান্ত হলে তিনি পেনাল কোডের আওতায় আইনি ব্যবস্থা নেওয়া যায়।’
ভারতীয় গবেষক ও কলামিস্ট গর্গ চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘সমাজে বহু যুগ আগে থেকে গুজবের জায়গা ছিল। একটি কমিউনিটির মধ্যে সহজেই গুজব ছড়ানো যেত। এখনও তা বিদ্যমান। তবে এখন এর পরিধি বেড়েছে। এখন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও গণমাধ্যমগুলোতে এমন ফেক নিউজ ছড়ানো হচ্ছে। তবে এর নেতিবাচক প্রভাব থেকে রেহাই পেতে এবং ফেক নিউজকের বিপক্ষে কথা বলতে কেবল পাঠকের ওপর নির্ভর করা ঠিক নয়। সবচেয়ে বড় অবদান বা দায়িত্ব নিতে হবে মূলধারার গণমাধ্যমকে। মূলধারার গণমাধ্যম যদি এসব ফেক নিউজের বিপক্ষে দাঁড়ায় এবং প্রতিরোধে কাজ করে তাহলে এর প্রভাব কমে যাবে বলে আমি মনে করি।’
আরও পড়ুন-
পর্দা উঠলো লিট ফেস্টের

আদোনিসের হাতে ‘মুজিব’ গ্রন্থ
আমি মানুষের পক্ষের কবি: আদোনিস

বাংলার নারীরা সাহসের সঙ্গে এগিয়ে যাচ্ছে

জনপ্রিয় লেখকই হতে চেয়েছিলাম: ইমদাদুল হক মিলন