আগামী ১ জানুয়ারি পাঠ্যপুস্তক উৎসবের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের হাতে নতুন বই তুলে দেবে সরকার। তার আগেই বাংলা ট্রিবিউনের হাতে এসেছে এনসিটিবির প্রাক-প্রাথমিক শ্রেণির ‘আমার বাংলা’ বইটির একটি কপি। এতে দেখা যায়, বইয়ের ৩৬ পৃষ্ঠায় ‘ও’ বর্ণ চেনাতে ‘ও-তে ওড়না’ বলা হয়েছে।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের (এনসিটিবি) চেয়ারম্যান নারায়ণ চন্দ্র সাহা বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন,‘প্রথম শ্রেণির পাঠ্যবই থেকে ‘ও- তে ওড়না চাই’ শব্দটি সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু প্রাক-প্রাথমিকে একই জিনিস রয়েছে কিনা তা জানা নেই।’
তিনি আরও বলেন, ‘সম্প্রতি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ওপর গবেষণা করে একটি প্রতিবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে একটি গণমাধ্যম খবর প্রকাশ করেছে– বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের একটি বড় অংশ উগ্রবাদী সংস্কৃতির দিকে ঝুঁকে পড়ছে। আমি মনে করি, শিশু শ্রেণি থেকেই একটি শিশুর মনে একটি সংস্কৃতি ও দৃষ্টিভঙ্গি তৈরি হয়। কিন্তু সেই প্রাক-প্রাথমিকেই যদি এমন বিতর্কিত বিষয় যুক্ত রাখা হয়, তাহলে ওই শিশুরা একসময় উগ্রবাদের দিকে ঝুঁকবে, এটাই স্বাভাবিক। ফলে সংশ্লিষ্টদের উচিত পাঠ্যবইয়ে এই ধরনের বিতর্কিত বিষয় না রাখা।’
এদিকে এনসিটিবির সূত্র জানায়,আগামী বছরের বই ছাপার বিষয়ে গত মার্চে কর্মশালার আয়োজন করেছিল সংস্থাটি। সেখানে বই থেকে বিতর্কিত বিষয়গুলো বাদ দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। তারপরও প্রাক-প্রাথমিকের বইয়ে বিতর্কিত শব্দটি রাখায় খোদ এনসিটিবিতেই চলছে নানা গুঞ্জন। পাঠ্যবইয়ে ভুল ও বিতর্কিত বিষয় ছাপার সঙ্গে জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি না হওয়ায় এবারও একই ভুল হয়েছে বলে অনেক মন্তব্য করেছেন।
রাজধানীর বীরশ্রেষ্ঠ মুন্সী আব্দুর রউফ পাবলিক কলেজের শিক্ষক অমূল্য কুমার বৈদ্য বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘ও’ দিয়ে ‘ওলকপি’, ‘ওজন’সহ নানা সহজ শব্দ রয়েছে। একটি পরিচিত বা সহজে পরিচয় করানো যায় এমন শব্দ ব্যবহার না করে বিতর্কিত শব্দ দিয়ে শিশুদের বর্ণ শেখানোর অর্থই হলো তাদের মননে একদম ছোটবেলা থেকেই নারী-পুরুষের পার্থক্য স্পষ্ট করা। আমরা দেশকে অসাম্প্রদায়িক দেশ হিসেবে গর্ব করি কিন্তু শিশু শ্রেণির শিক্ষার্থীদের যা শেখানো হচ্ছে তা দিয়ে এই অসাম্প্রদায়িকতার ওপর আঙুল তোলার সুযোগ রাখা হচ্ছে।‘