X
বৃহস্পতিবার, ১৫ মে ২০২৫
১ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২
সেমিনারে বক্তারা

‘স্বাস্থ্য খাত সংস্কারে সমন্বিত দৃষ্টিভঙ্গিতে একাধিক সুপারিশ বাস্তবায়ন করতে হবে’

বাংলা ট্রিবিউন রিপোর্ট
০৯ মে ২০২৫, ২১:৪১আপডেট : ০৯ মে ২০২৫, ২২:৪৬

উন্নত দেশগুলোতে চিকিৎসকেরা সাধারণত রোগীকে ওষুধের কেবল জেনেরিক নাম উল্লেখ করে প্রেসক্রিপশন দেন। পরবর্তীতে নির্দিষ্ট ব্র্যান্ড, মাত্রা ও প্রয়োগবিধি নির্ধারণের দায়িত্ব থাকে একজন প্রশিক্ষিত ফার্মাসিস্টের ওপর। কিন্তু আমাদের দেশে সেই কাঠামো নেই। আমাদের দেশের চিকিৎসকদের সামনে বাজারে সদ্য আসা বা গুণগত মানসম্পন্ন ওষুধ সম্পর্কে অবগত হওয়ার একমাত্র উৎস হলো ওষুধ কোম্পানির প্রতিনিধি। ফলে চিকিৎসক যদি শুধু জেনেরিক নাম লিখে দেন, তবে ওষুধ দেওয়ার দায়িত্ব পড়ে ওষুধ বিক্রেতার ওপর, যিনি নিজের লাভের ভিত্তিতে যেকোনও কোম্পানির ওষুধ দিতে পারেন। এতে রোগীর জন্য সঠিক ও নিরাপদ ওষুধ নিশ্চিত করা কঠিন হয়ে পড়ে, যা কখনও কখনও বিপর্যয়কর হতে পারে।

শুক্রবার (৯ মে) জাতীয় প্রেসক্লাবের আবদুস সালাম হলে সুস্বাস্থ্যের বাংলাদেশ আয়োজিত 'স্বাস্থ্য খাত সংস্কার কমিশন প্রতিবেদন: আমাদের পর্যবেক্ষণ ও বাস্তবায়নের পথ নির্ধারণ' শীর্ষক আলোচনা সভায় এসব কথা বলেন বক্তারা।

সভায় স্বাস্থ্য সংস্কার কমিশনের সদস্য ডা. আহমেদ এহসানুর রহমান বলেন, স্বাস্থ্য খাতে বিনিয়োগ শুধু অর্থনৈতিক প্রতিফলনের জন্য নয়, মানুষের ভালো থাকা ও বেঁচে থাকার জন্য হতে হবে। স্বাস্থ্য সংস্কার কমিশনের উদ্দেশ্য ছিল স্বাস্থ্যসেবাকে জনমুখী, সর্বজনীন ও সহজলভ্য করা, যেখানে জনগণের দৃষ্টিভঙ্গিকে প্রাধান্য দিয়ে প্রশ্ন করা হয়েছে—সেবা কতটা অধিকারভিত্তিক, কতটা ব্যয়সাশ্রয়ী এবং কতটা সময়োপযোগী। একটি মাত্র সুপারিশ দিয়ে এসব সমস্যার সমাধান সম্ভব নয়, বরং সমন্বিত দৃষ্টিভঙ্গিতে একাধিক সুপারিশ বাস্তবায়ন করতে হবে। স্বাস্থ্য এতটাই অবহেলিত যে বাজেট, সংসদীয় আলোচনায় কিংবা রাজনৈতিক ম্যানিফেস্টোতে এর গুরুত্ব থাকে অনেক নিচে। অথচ প্রত্যেক মানুষের প্রত্যাশা থাকে, নেতারা যেন তাদের সুস্থভাবে বাঁচার নিশ্চয়তা দেন। তাই প্রয়োজন একটি সুস্বাস্থ্যের বাংলাদেশ গড়ার, যেখানে স্বাস্থ্য হবে সর্বোচ্চ নীতিগত অগ্রাধিকার।

এসময় সভায় লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন সংগঠনের সদস্যসচিব শামীম তালুকদার। তিনি সংগঠনের পক্ষে স্বাস্থ্য সংস্কার প্রতিবেদনের এনজিও, নন-প্রফিট ও প্রাইভেট হাসপাতাল বিভাগ, বাংলাদেশ হেলথ সার্ভিস গঠন, সামাজিক স্বাস্থ্যবিমা, জরুরি স্বাস্থ্যসেবা নেটওয়ার্ক, প্রবাসী বাংলাদেশি পেশাজীবীদের সম্পৃক্ততা, স্বাস্থ্য গবেষণার সুশাসনসহ কয়েকটি প্রস্তাবনার প্রশংসা করে এগুলোর সঙ্গে একমত পোষণ করেন।

অন্যদিকে, আইন, বিধিমালা, নীতিমালা ও কৌশলপত্র, বিকেন্দ্রীভূত স্বাস্থ্য শাসন কাঠামো প্রাতিষ্ঠানিকীকরণ, স্বাস্থ্য কমিশনের প্রধান হিসেবে স্বনামধন্য চিকিৎসক, পাবলিক হেলথ বিভাগ, স্বাস্থ্য সুরক্ষা বিভাগ, বাংলাদেশ হেলথ সার্ভিসের গঠন, স্বাস্থ্য জনবল ব্যবস্থাপনাসহ কিছু বিষয়ে যে প্রস্তাবনা দেওয়া হয়েছে তাতে আরও বিস্তারিত আলোচনা প্রয়োজন বলে মনে করে সংগঠনটি।

সংস্কার প্রতিবেদনের বিষয়ে সংগঠনের পক্ষ থেকে বলা হয়, এটাকে একটা 'লিভিং ডকুমেন্ট' হিসেবে রাখতে হবে ও সময়ে সময়ে যাতে আমরা এটাকে যুগোপযোগী করতে পারি সে ব্যবস্থা থাকতে হবে। এছাড়াও এখানে যে সুপারিশগুলো করা হয়েছে সেগুলো মূলত আমাদের স্বাস্থ্য খাতে বিদ্যমান বিভিন্ন সংকট শতভাগ নিরসনে একধরণের উইশ লিস্ট। তথাপি এগুলো বাস্তবায়নের ক্ষেত্রেই আসল প্রতিবন্ধকতা দেখা যাবে। সামগ্রিকভাবে আর্থসামাজিক, আমলাতান্ত্রিক ও রাজনৈতিক বাস্তবতায় এ সুপারিশগুলো বাস্তবায়ন করার ক্ষেত্রে কিছু প্রতিবন্ধকতা প্রতীয়মান হতে পারে। এক্ষেত্রে বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে আমাদের ঠিক করতে হবে- কোথা থেকে শুরু করতে হবে। এটা কমিশনের একটা প্রতিবেদন। এখন সরকার কে রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে আলোচনা করতে হবে, তাদের মতামত নিতে হবে। তারা যে যে বিষয়ে একমত হচ্ছে সেগুলো সহজে বাস্তবায়ন করা যেতে পারে। অন্তর্বর্তী সরকারের সময়সীমার মধ্যেই অনেক কাজ শুরু করা যেতে পারে।

এসময় সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন সুস্বাস্থ্যের বাংলাদেশের আহ্বায়ক অধ্যাপক কাজী বিন নূর, সদস্য অধ্যাপক আবদুস শাকুর, সাখাওয়াত হোসেন সায়ন্ত ও অধ্যাপক শামীমা লস্কর প্রমুখ।

/এএজে/এমএস/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা জবি শিক্ষার্থীদের
আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা জবি শিক্ষার্থীদের
তুরস্কের বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে চুক্তি বাতিল করলো দিল্লির জেএনইউ
তুরস্কের বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে চুক্তি বাতিল করলো দিল্লির জেএনইউ
উপদেষ্টা মাহফুজের মাথায় বোতল নিক্ষেপ, হাসনাত বললেন ‘প্রত‍্যাশিত নয়’
উপদেষ্টা মাহফুজের মাথায় বোতল নিক্ষেপ, হাসনাত বললেন ‘প্রত‍্যাশিত নয়’
৯ মাসে বৈদেশিক সহায়তা এলো কতটুকু
৯ মাসে বৈদেশিক সহায়তা এলো কতটুকু
সর্বাধিক পঠিত
সাবেক সেনা সদস্যদের আবেদন পুনর্বিবেচনা করছে সেনাবাহিনী, ধৈর্য ধরার পরামর্শ
সাবেক সেনা সদস্যদের আবেদন পুনর্বিবেচনা করছে সেনাবাহিনী, ধৈর্য ধরার পরামর্শ
‘পুলসিরাত’ ইসলামিক নাম, তাই পরিবর্তনের নির্দেশ
‘পুলসিরাত’ ইসলামিক নাম, তাই পরিবর্তনের নির্দেশ
মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ব্রিফিংয়ে আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধের প্রসঙ্গ
মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ব্রিফিংয়ে আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধের প্রসঙ্গ
পূজা উদযাপন পরিষদের দুই নেতার বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা
পূজা উদযাপন পরিষদের দুই নেতার বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা
আরও ১৬ ভারতীয়কে বাংলাদেশে ঢুকিয়ে দিয়েছে বিএসএফ
আরও ১৬ ভারতীয়কে বাংলাদেশে ঢুকিয়ে দিয়েছে বিএসএফ