এলডিসি থেকে বের হওয়ার তিন শর্তই পূরণ করবে বাংলাদেশ: পরিকল্পনামন্ত্রী

পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল (ফাইল ছবি)

সম্প্রতি প্রকাশিত আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) রিপোর্ট অনুযায়ী দক্ষিণ এশিয়ায় এখন বিনিয়োগের সবচেয়ে আকর্ষণীয় স্থানে বাংলাদেশ। অচিরেই বাংলাদেশ এ অঞ্চলের বৃহৎ অর্থনৈতিক বাজার হবে। শুধু তাই নয়, আগামী মার্চ মাসে এদেশ এলডিসি থেকে বের হওয়ার তিন শর্তই পূরণ করবে।

বৃহস্পতিবার (১৫ ফেব্রুয়ারি) রাজধানীর শেরেবাংলা নগরের এনইসি সম্মেলন কক্ষে মিট দ্যা প্রেস অনুষ্ঠানে পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল এসব কথা জানিয়েছেন।

আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেন, ‘শুধু বিদ্যুৎ এবং জ্বালানির নিশ্চয়তা দিতে পারলে বিদেশি বিনিয়োগের কোনও অভাব হবে না। এলএনজি আমদানি শুরু হলে সেই সমস্যা থাকবে না। সম্প্রতি ভোলায় দু’টি নতুন গ্র্যাস ফিল্ডের সন্ধান মিলেছে, যা নিজেদের সক্ষমতা ব্যবহারের ফল। আমাদের বর্তমান মজুদ আছে ২৭ টিসিএফ গ্যাস, যা বর্তমান ধারায় ব্যবহৃত হলে আগামী ১৪ বছরে শেষ হয়ে যেতো। কিন্তু নতুন দু’টি গ্যাস ফিল্ড যুক্ত হওয়াতে মজুদ বাড়বে ১ দশমিক ৫ টিসিএফ গ্যাস। গত এক ৩৭ লাখ মানুষের কর্মসংস্থান হয়েছে। এর মধ্যে সর্বোচ্চ ১০ লাখ ৩০ হাজার মানুষ বিদেশে গেছে। দেশে কর্মসংস্থান হয়েছে ১৪ লাখের।’

মন্ত্রী বলেন, ‘এজেন্ট ব্যাংকিংয়ে ২০০ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়েছে। প্রত্যেক গ্রামে এজেন্ট ব্যাংকিং সেবা পৌঁছে গেছে। প্রবৃদ্ধির ক্ষেত্রে অনেকে বলেন, আয় বৈষম্য বেশি। অর্ন্তভুক্তিমূলক প্রবৃদ্ধি হচ্ছে না। কিন্তু আন্তর্জাতিক ওয়াল্ড ইকনোমিক ফোরামের মতে, বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে অন্তভুক্তিমূলক প্রবৃদ্ধির ক্ষেত্রে সবচেয়ে এগিয়ে। আমরা এখন গ্রাম-শহরের জন্য নানা প্রকল্প নিচ্ছি। হাওর অঞ্চলের জন্যও বিশেষ প্রকল্প নেওয়া হচ্ছে। আসছে মার্চেই আমরা এলডিসি থেকে বের হওয়ার জন্য যে তিনটি কম্পোনেন্ট রয়েছে তা একই সাথে অর্জন করবো। বাংলাদেশই একমাত্র দেশ, যে একইসঙ্গে তিনটি কম্পোনেন্ট অর্জন করে এলডিসি থেকে বের হয়ে যাবে। বাংলাদেশ হবে এশিয়া অঞ্চলে পঞ্চম টাইগার।’
মন্ত্রী আরও বলেন, ‘আবাসন খাতে প্রবৃদ্ধি ভালো হচ্ছে। রফতানি খাতে প্রবৃদ্ধি বেড়েছে ১ দশমিক ৫ শতাংশ থেকে সাড়ে ৮ শতাংশ। প্রবাসী আয় বেড়েছে। পুঁজিবাজার ইনডেক্স ৬ হাজার ১০০ এর ওপরে। গড় লেনদেন একদিনে ৭৭৫ কোটি টাকা। তাই বলা যায়, পুঁজিবাজার অনেক বেশি ভাইব্রেন্ট। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ অনেক ভালো। আমরা যে চীনের কাছ থেকে ঋণ নেই, তাদের ঋণ চায়নার মোট জিডিপির তুলনায় দ্বিগুণ। সেখানে আমাদের ঋণ নেওয়ার হার অনেক কম। দেশে নির্ভরশীল মানুষের সংখ্যা কমছে। অর্থাৎ আগে পরিবারের একজন আয় করলে অন্য সব সদস্য তার ওপর নির্ভর করতো। এখন এরকম নির্ভরতা কমেছে। রেমিটেন্সের দিক থেকে সারাবিশ্বে বাংলাদেশ নবম স্থানে রয়েছে।’
ব্যাংকিং খাতের ঋণ অনিয়ম বিষয়ক এক প্রশ্নের জবাবে পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, ‘ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে শিল্পকারখানা করাকে আমি নিরুৎসাহিত করি। চীনে ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে শিল্পকারখানা করার নজির কম। অর্থায়নের উৎস হিসেবে পুঁজিবাজার আদর্শ বিকল্প হতে পারে। তবে পুঁজিবাজারে যাওয়ার আগে এর সম্পর্কে পড়াশোনা ও জ্ঞান থাকা প্রয়োজন।’

অন্য এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘যারা দেশ থেকে টাকা পাচার করে বিদেশে ব্যবসা করেন, তারা যখন বুঝবেন, দেশে ব্যবসা করাই লাভজনক, তখন আর বিদেশে পাচার করবেন না। বাংলাদেশ বর্তমানে বিনিয়োগের জন্য আকর্ষণীয় জায়গা।’

আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘শিক্ষা ব্যবস্থাকে ঢেলে সাজাতে হবে। বর্তমান বিশ্বের চাহিদা ও প্রয়োজন মেনে জ্ঞান ও প্রযুক্তি নির্ভর এবং হাতে-কলমে শিক্ষা ব্যবস্থার প্রবর্তন করতে হবে।  এছাড়া বর্তমানের প্রয়োজনের সঙ্গে আগামীর প্রয়োজন মাথায় থেকে শিক্ষা ব্যবস্থাকে সাজাতে হবে।’

অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন– পরিকল্পনা সচিব জিয়াউল ইসলাম, আইএমইডির সচিব মফিজুল ইসলাম, ভৌত অবকাঠামো বিভাগের সদস্য জুয়েনা আজিজ, বিআইডিএস-এর মহাপরিচালক কে এস মুর্শিদ এবং বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর মহাপরিচালক আমির হোসেন।