কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে পুলিশের দিনভর ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটছে। এই ঘটনায় এখন পর্যন্ত অন্তত ৬৩ জনকে আটক করেছে পুলিশ। আটককৃতরা সবাই রমনা থানায় আছে বলে নিশ্চিত করেছেন রমনা থানার উপ-পুলিশ কমিশনার মারুফ হোসেন সরদার।
এসময় পুলিশ আন্দোলনকারীদের তিন ধাপে ধাওয়া করে শাহবাগ জাতীয় জাদুঘরের সামনে নিয়ে আসে। সেখানে আন্দোলনকারীরা আবারও অবস্থান নিলে পুলিশের সঙ্গে তাদের হাতাহাতি হয়। আন্দোলনকারী ফয়সাল আহমেদ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘পুলিশ আমাদের কয়েকজনকে আটক করে রাখছে। তাদের মুক্তির দাবিতে আমরা আন্দোলন করলে পুলিশ আমাদের ধাওয়া করে ফের অনেকজনকে আটক করে। আমরা কোটা সংস্কারের জন্য আন্দোলন করছি, কিন্তু পুলিশ শান্তিপূর্ণ আন্দোলনের ওপর টিয়ারশেল নিক্ষেপ করেছে। এখন আমাদের দাবি আটককৃতদের ছেড়ে দিতে হবে, তা না হলে আমরা অবস্থান কর্মসূচি চালিয়ে যাব।’
আরও পড়ুন: কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনকারীদের ওপর পুলিশের টিয়ারশেল
আটকৃতদের বেশিরভাগ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। তাদের আটকের খবর ক্যাম্পাসে ছড়িয়ে পরলে বিকালে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা পরীবাগ হয়ে পুরাতন এলিফ্যান্ট রোড দিয়ে রমনা থানা ঘেরাও করতে যাওয়ার চেষ্টা করেন। তারা শিক্ষার্থীদের মুক্তির দাবিতে স্লোগান দিতে থাকেন। বিকাল সাড়ে ৪টার দিকে পুরাতন এলিফ্যান্ট রোডে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়।
রমনা বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) মারুফ হোসেন সরদার ঘটনাস্থলে এসে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলেন। শিক্ষার্থীদের সড়ক ছেড়ে দিতে বলেন তিনি। তবে শিক্ষার্থীরা আগে তাদের সহপাঠিদের মুক্তির দাবি করেন। পরবর্তীতে পুলিশ তাদের ধাওয়া দিয়ে পুরাতন এলিফ্যান্ট রোড থেকে ধাওয়া দিয়ে বের করে শাহবাগের দিকে নিয়ে যায়। তারা পুনরায় শাহবাগে গিয়ে অবস্থান নেয়।
আন্দোলনকারী শিক্ষার্থী তানজিরা তমা বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আমাদের দাবি হলো কোটা সংস্কার করে ৫৬ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১০ শতাংশে নিয়ে আসার। এই ৫৬ শতাংশের মধ্যে ৩০ শতাংশ হলো মুক্তিযোদ্ধা কোটা। এটা তো সম্পূর্ণ বৈষম্য। আমরা লাখ লাখ শিক্ষার্থী প্রতিযোগিতা করেও কোনও ভালো চাকরি পাচ্ছি না। অথচ যারা কোটার সুফল ভোগ করেন, তারা অল্প পরিশ্রম করে ভালো চাকরি পেয়ে যাচ্ছেন।’
এর আগে, রাজধানীর বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আগত অসংখ্য চাকরি প্রার্থী শিক্ষার্থী জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে স্মারকলিপি জমা দেওয়ার উদ্দেশে মিছিল বের করে। মিছিলটি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) কেন্দ্রীয় লাইব্রেরি এলাকা থেকে বের হয়ে শাহবাগ, ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্র (টিএসসি), দোয়েল চত্বর হয়ে হাইকোর্টের সামনে আসে। সেখানে এলে আন্দোলনকারীদের পুলিশ বাধা দেয়। পুলিশের বাধার পর তারা হাইকোর্টের সামনে শিক্ষা অধিকার চত্বরে অবস্থান নেয়। এ সময় আন্দোলনকারীদের পক্ষ থেকে বলা হয়, আধঘণ্টার মধ্যে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে যদি কোনও আশ্বাস বা সাড়া না পাওয়া যায় তাহলে লাগাতার অবস্থান কর্মসূচি চালানো হবে।