নেপালে মেডিক্যাল ও সিআইডি টিম কাজ করে যেভাবে





ইউএস বাংলার বিধ্বস্ত বিমানইউএস-বাংলার বিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় আহত ও নিহত বাংলাদেশিদের যথাক্রমে চিকিৎসা ও শনাক্তকরণ যথাযথ ও দ্রততার সঙ্গে করতে গত ১৫ মার্চ নেপালে মেডিক্যাল ও সিআইডি টিম পাঠায় বাংলাদেশ সরকার। কাজ শেষে সিআইডি’র দুজন কর্মকর্তা দেশে ফেরেন ২২ মার্চ। এর কয়েকদিন আগে ফিরে আসে মেডিক্যাল টিম।
নেপালে মেডিক্যাল ও সিআইডি কর্মকর্তাদের কর্মকাণ্ড ও নানা বিষয়ে সম্প্রতি বাংলা ট্রিবিউনের সঙ্গে আলাপ হয় এ দুই দলের দুজনের সঙ্গে। পাশাপাশি কথা হয় নেপালের টিচিং ইউনিভার্সিটি হাসপাতালের ফরেনসিক মেডিসিনের ডাক্তার তুলসির সঙ্গে।

সিআইডি কর্মকর্তা অ্যাসিসট্যান্ট ডিএনএ অ্যানালিস্ট আশরাফুল আলম আশরাফ বলেন, ‘দুটো ভাগে বিভক্ত হয়ে আমাদের টিম কাজ করেছে। মোট ৯ জনের মধ্যে ছয় জনের একদল আহত বাংলাদেশির সুচিকিৎসা এবং তিন জনের অন্যদল মৃতদেহ শনাক্তকরণে কাজ করেছে।’ তিনি বলেন, ‘কারিগরি দিকগুলো সম্বন্বয় করা ছিল টিমের মূল কাজ। দুদলের সার্বিক নেতৃত্বে ছিলেন নেপালে বাংলাদেশ দূতাবাসের দুজন ফার্স্ট কন্স্যুলার। কাজগুলোর মধ্যে ছিল— নিহত ৪৯ জনের মৃতদেহ থেকে বাংলাদেশিদের মৃতদেহ দ্রুত শনাক্ত করা, আত্মীয়-স্বজনদের কাছে দ্রুত হস্তান্তর এবং কোনোকিছুতে অপূর্ণতা থাকলে তাৎক্ষণিক সেটা কর্তৃপক্ষকে জানানো।’





একটি টিমে ছিলেন সিআইডি'র অ্যাসিসটেন্ট ডিএনএ অ্যানালিস্ট আশরাফুল আলম আশরাফ, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আবদুস সালাম এবং ফরেনসিক মেডিসিন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. সোহেল মাহমুদ। এ টিমের কাজ ছিল মৃতদেহ শনাক্তের কাজ সম্বন্বয় করা এবং স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয়গুলো সঠিকভাবে তুলে ধরা।
আশরাফুল আলম আশরাফ বলেন, ‘এ দল দুই ভাগে ভাগ হয়েছিল। একটা দলে ছয় জন। তারা আহতদের দেখভাল করা, আপডেট নেওয়া এবং কোনও অপূর্ণতা থাকলে চিকিৎসকদের নজরে আনার কাজে নিয়োজিত ছিল। আর একটা দলের সদস্যরা মৃতদেহ শনাক্তে সহযোগিতা করে। একইসঙ্গে আইনগত জটিলতা এড়াতে সম্ভাব্য ফরেনসিক এভিডেন্স হেফাজতে নেওয়া ছিল কাজ।’
তিনি জানান, মৃতদেহ শনাক্তের কাজ দ্রুত করার সব প্রস্তুতি তাদের ছিল। দেশেও সিআইডির ডিএনএ ল্যাব বিশেষভাবে প্রস্তুত ছিল। যেকোনও দুর্ঘটনায় কারো মৃত্যু হলে অনেক পরেও আইনগত জটিলতা দেখা দিতে পারে। আবার দেশের বাইরের দুর্ঘটনা হওয়ায় এতে রাষ্ট্রীয় স্বার্থসংশ্লিষ্ট অনেক বিষয় ছিল। এসব বিবেচনায় রেখে নেপালি ফরেনসিক দলের সঙ্গে কার্যক্রম চালানো হয়েছে।
তিনি বলেন, ‘এ ধরনের ঘটনায় মৃতদেহে শনাক্তে ইন্টারপোলের গাইডলাইন রয়েছে। মৃতদেহের ধরন ও প্রকৃতি বিবেচনায় নিয়ে সাধারণত ফরেনসিক বিশেষজ্ঞদের দল সুনির্দিষ্ট কর্মপদ্ধতি ঠিক করেন। আমাদের ক্ষেত্রেও তাই হয়েছে। ময়নাতদন্তের আগে ও পরের তথ্যউপাত্ত বিশ্লেষণ ছিল এর প্রথম ধাপ।কিছু মৃতদেহ মাত্রাতিরিক্ত পুড়ে যাওয়ায় সময় কিছু বেশি লাগে।’
ঢাকা মেডিক্যাল কলেজের সহযোগী অধ্যাপক ডা. লুতফর কাদের লেনিন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘অ্যাম্বাসির ম্যাডামের (রাষ্ট্রদূত মাশফি বিনতে সামস) নেতৃত্বে আমরা মৃতদেহ শনাক্ত করা ও আহতদের সঠিকভাবে দেখভালের কাজ করেছি। একটা মৃতদেহের পুরো শরীর পুড়ে গেলেও কোমড়ের বেল্টের মাধ্যমে তাকে সঠিকভাবে শনাক্ত করা গেছে। আহতদের সঠিকভাবে চিকিৎসার জন্য ওই দেশের চিকিৎসকদের আমরা বিভিন্ন পরামর্শ দিয়েছি।’
নেপালের টিচিং ইউনিভার্সিটি হাসপাতালের ফরেনসিক মেডিসিনের ডাক্তার তুলসি বাংলা ট্রিবিউনকে মুঠোফোনে বলেন, ‘ইউ-এস বাংলা এয়ারলাইন্সের বিমান দুর্ঘটনায় নেপালে বাংলাদেশের প্রতিনিধি টিম পাঠানো ছিল ভালো সিদ্ধান্ত। সবার ভালো পরামর্শ ও সুন্দর সহযোগিতা থাকায় কোনও ধরনের অসুবিধা হয়নি।’ সার্বিকভাবে পুরো কাজে সন্তুষ্টি প্রকাশ করে তিনি বলেন, ‘খুব ভালোভাবেই মৃতদেহ শনাক্ত করে সুন্দর রিপোর্ট দেওয়া হয়েছে।’
এদিকে বিমান দুর্ঘটনার তদন্ত চলছে উল্লেখ করে ইউ-এস বাংলা এয়ালাইন্সের মার্কেটিং সাপোর্ট ও পিআর সেকশনের জেনারেল ম্যানেজার কামরুল ইসলাম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘বাংলাদেশ এভিয়েশন, নেপাল এভিয়েশন, ইন্টারন্যাশনাল এভিয়েশন ও কানাডিয়ান কোম্পানি বোম্বাডিয়ার— এই চারটা অর্গানাইজেশনের প্রতিনিধিরা কাজ করছে। ব্লাকবক্সের দুটি পার্ট— সিভিআর (ককপিট ভয়েস রেকর্ডার) ও এফডিআর (ফ্লাইট ডাটা রেকর্ডার)-এর সম্পূর্ণটার রিড পড়ে এবং এগুলোর ওপর বেস করে রিপোর্ট শেষ হতে অনেক সময়ের ব্যাপার।’
গত ১২ মার্চ ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্সের একটি ফ্লাইট নেপালের কাঠমান্ডুর ত্রিভুবন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণের সময় পাশের একটি ফুটবল মাঠে বিধ্বস্ত হয়। ওই ফ্লাইটে চারজন ক্রুসহ ৭১ জন আরোহী ছিলেন। এর মধ্যে ৪৯ জন আরোহী নিহত হন। নিহতদের মধ্যে বিমানটির ৪ জন ক্রুসহ ২৬ জন বাংলাদেশি, ২২ জন নেপালি ও চীনের একজন যাত্রী রয়েছেন। আহত ২২ জন আরোহীর মধ্যে ১০ জন বাংলাদেশি, ১১ জন নেপালি ও একজন মালদ্বীপের। অবশ্য পরে বাংলাদেশে চিকিৎসাধীন আরেকজন মারা গেছেন।