২২ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির ক্ষেত্রে ইউজিসি’র সতর্কতা

 

nonameদেশের ২২ টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি না হতে সতর্কতা জারি করেছে বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি)। মঙ্গলবার(২৩ মে) ইউজিসির ওয়েবসাইটে এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে দেশের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বশেষ অবস্থা জানাতে গিয়ে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের উদ্দেশ্যে এ সতর্কতা দিয়েছে রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানটি।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, বর্তমানে ১০১ টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সরকারি অনুমোদন আছে। এর মধ্যে শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে ৯১ টি বিশ্ববিদ্যালয়ে। তবে শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালিত এই ৯১ টি বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে ৬০টিতে উপাচার্য, ২০টিতে উপ-উপাচার্য এবং ৪৪টিতে কোষাধ্যক্ষ রয়েছে। বাকিগুলো শীর্ষ পদ ফাঁকা রেখেই শিক্ষা কার্যক্রম চালাচ্ছে।

বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে অনুমোদন পেলেও এখনো শিক্ষা কার্যক্রম শুরু করেনি ৮ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়। এগুলো হলো রবীন্দ্র সৃজনকলা বিশ্ববিদ্যালয়, রূপায়ন এ কে এম শামসুজ্জোহা বিশ্ববিদ্যালয়, আনোয়ার খান মর্ডান ইউনিভার্সিটি, জেড এন আর এফ ইউনিভার্সিটি অব ম্যানেজমেন্ট সায়েন্সেস, আহছানিয়া মিশন বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, শাহ মখদুম ম্যানেজমেন্ট ইউনিভার্সিটি, খুলনা খান বাহাদুর আহছানউল্লা বিশ্ববিদ্যালয় এবং বান্দরবান বিশ্ববিদ্যালয়।

অন্যদিকে বেসরকারি ১৪ টি বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে যাদের শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে অথচ তাদের বেশ কয়েকটি সরকার ইতোমধ্যে বন্ধ করে দিয়েছে, কয়েকটির মালিকানা নিয়ে দ্বন্দ্ব, উচ্চ আদালতে মামলা চলছে এবং কয়েকটির অনুমোদন নেই। এছাড়া বাংলাদেশে এখনও কোনও বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয়ের শাখা, ক্যাম্পাস বা স্টাডি সেন্টার স্থাপন ও পরিচালনার অনুমতি দেওয়া হয়নি। ফলে এসব বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়ে প্রতারণার শিকার না হতে শিক্ষার্থীদের সতর্ক করেছে ইউজিসি।

বিজ্ঞপ্তিতে ইউজিসি বলছে, ১৪ বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে ইবাইস ইউনিভার্সিটি, সিলেট ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি, ব্রিটানিয়া বিশ্ববিদ্যালয়, প্রিমিয়ার ইউনিভার্সিটি ও সাউদার্ন ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ, এই ৫ বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রাস্টি বোর্ড নিয়ে দ্বন্দ্ব এবং আদালতে মামলা চলছে। উচ্চ আদালতের রায়ের প্রেক্ষিতে বন্ধ করা হয়েছে দারুল ইহসান বিশ্ববিদ্যালয়। এছাড়া কুইন্স বিশ্ববিদ্যালয়কে সরকার বন্ধ করে দিলেও ২০১৫ সালের ৬ সপ্টেম্বর শর্ত সাপেক্ষে এক বছরের জন্য শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনার অনুমতি দেয়। কিন্তু ওই সময়ের মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়টি শিক্ষা কার্যক্রম শুরু করতে পারেনি। আমেরিকা বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি ২০০৬ সালে বন্ধ ঘোষণার পরও আদালত থেকে স্থগিতাদেশ নিয়ে ক্যাম্পাস পরিচালনা করে আসছিল। পরে উচ্চ আদালতের অন্তর্বর্তীকালীন রায়ে নতুন করে ক্যাম্পাস পরিচালনার অনুমতি দিলেও ইউজিসি পরিদর্শনে গিয়ে দেখতে পায়, সেখানে শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনার কোনও সুযোগ-সুবিধা নেই। ফলে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের সব অবৈধ ক্যাম্পাস উচ্ছেদ করতে সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তরকে অনুরোধ করা হয়েছে। এছাড়া ইউনিভার্সিটি অব কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়টি সরকার বন্ধের ঘোষণা করলেও উচ্চ আদালত থেকে স্থগিতাদেশ নিয়ে কার্যক্রম পরিচালনা করছে। যদিও ইউজিসি এর বিরুদ্ধে আপিল করেছে। এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়টি নিয়ে দুটি মামলা আদালতে বিচারাধীন আছে। অন্যদিকে গণ বিশ্ববিদ্যালয়ের অননুমোদিত প্রোগ্রামে শিক্ষার্থী ভর্তি না হওয়ার জন্য কমিশন ২০১৭ সালের ২৬ এপ্রিল পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ওই বিজ্ঞপ্তির বিরুদ্ধে রিট করলে ২০১৭ সালের ২৯ মে আদালত গণ বিশ্ববিদ্যালয়ে বিবিএ, ইনভায়রনমেন্ট সায়েন্স, এমবিবিএস, বিডিএস এবং ফিজিওথেরাপি গ্রোগ্রামে শিক্ষার্থী ভর্তি আমলে নিতে ইউজিসিকে নির্দেশনা দেয়।

এছাড়া ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজির চট্টগ্রামের ক্যাম্পাসকে অনুমোদিত স্থায়ী ক্যাম্পাস বলা হলেও রাজধানীর ধানমণ্ডিতে অননুমোদিত আউটার ক্যাম্পাস রয়েছে। যদিও গত ১৫ মে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এক চিঠিতে এই আউটার ক্যাম্পাস বন্ধ করা হয়েছে বলে জানিয়েছে। দি পিপলস ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশের নরসিংদীতে স্থায়ী এবং রাজধানীর মোহাম্মদপুরে অস্থায়ী ক্যাম্পাস রয়েছে বললেও ঢাকার উত্তরায় অননুমোদিত একটি ক্যাম্পাস রয়েছে। ইউনিভার্সিটি অব সাউথ এশিয়ার অনুমোদিত অস্থায়ী ক্যাম্পাস রয়েছে বনানীর বি ব্লকে। অথচ বনানীর সি ব্লকে একটি অননুমোদিত ক্যাম্পাস রয়েছে। অতীশ দীপঙ্কর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিদ্যালয়ের উত্তরা ১৫ নম্বর সেক্টরে অনুমোদিত স্থায়ী ক্যাম্পাস রয়েছে। অথচ উত্তরার ১২ নম্বর সেক্টর এবং সোনারগাঁও রোডে দুটি অননুমোদিত আউটার ক্যাম্পাস রয়েছে।

শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদেরকে সতর্ক করে বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়েছে, কেউ অনুমোদনবিহীন কোনও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় বা অনুমোদিত বিশ্ববিদ্যালয়ের অননুমোদিত ক্যাম্পাস বা অননুমোদিত কোনও প্রোগ্রাম বা কোর্সে ভর্তি হলে তার দায়-দায়িত্ব শিক্ষা মন্ত্রণালয় বা ইউজিসি নেবে না।

এ বিষয়ে ইউজিসি চেয়ারম্যান অধ্যাপক আবদুল মান্নান বলেন, নিয়ম না মানা এবং আইন অমান্যকারী কোনও বিশ্ববিদ্যালয়ে কোনও শিক্ষার্থী যেন ভর্তি হয়ে যেন প্রতারিত না হয় সে বিষয়ে আমরা সবাইকে সতর্ক করছি। কেউ অনুমোদনবিহীন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কিংবা অনুমোদিত বিশ্ববিদ্যালয়ের অননুমোদিত ক্যাম্পাস বা প্রোগ্রাম বা কোর্সে ভর্তি হলে তার অর্জিত সেই সনদ কাজে লাগে না। এ ব্যাপারে মন্ত্রণালয় বা ইউজিসি ভবিষ্যতে কোনও দায়-দায়িত্ব নেবে না। এজন্য বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীরা যাতে ভর্তির বিষয়ে সতর্ক হয় সে জন্যই বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়েছে।