যারা ধর্ম বিষয়ে সহানুভূতিশীল, যারা প্র্যাকটিসিং মুসলিম; তাদের উচিত এসব কম আমলের মানুষদের সকল পুণ্যকাজে উৎসাহ প্রদান করা। কিন্তু অনেক সময় দেখা যায়, আমরা যারা নিয়মিত ধর্ম-কর্ম করি তারা এমন মৌসুমি আমলকারী ব্যক্তিদের খানিকটা তাচ্ছিল্যভরা দৃষ্টিতে দেখি। আবার দেখা যায়, যারা রোজা রাখে কিন্তু সময়মতো নামাজ পড়তে পারে না, তাদের বলি, নামাজ না পড়ে রোজা রেখে কী হবে?
এমনটা করা ঠিক নয়। এটা রমজান মাস, হতে পারে এ মাস থেকেই তার জীবনে শুদ্ধতার নতুন যাত্রা শুরু হবে। সারা দিনের উপবাসের মাধ্যমেও তার জীবনের গতিধারা আমূল পরিবর্তন হতে পারে। সে দিনমান উপবাস থাকছে, এটাও সাধারণ বিষয় নয়। তার ভেতরে আল্লাহর ভয় আছে বলেই সে ষোল ঘণ্টা না খেয়ে রোজা রাখছে। ইফতার করার সময় তার হৃদয়ও ধর্মের আবেগে আপ্লুত হয়। ইফতার সামনে নিয়ে যখন সে আজানের অপেক্ষায় বসে থাকে, তখন আল্লাহও তার দিকে অনুগ্রহের দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকেন। আল্লাহর কোনও বান্দাই আল্লাহর রহমতের বাইরে নয়। তিনি সকলের জন্য সমান দয়াশীল ও মেহেরবান।
সামান্য একটু পুণ্যকাজও আল্লাহর নিকট ফেলনা নয়। সামান্য পুণ্যকাজ আল্লাহর কাছে হতে পারে অনেক মূল্যবান, যদি কোনও মানুষ হৃদয়ের ভালোবাসা দিয়ে সে পুণ্যকাজে শরিক হয়। যারা প্র্যাকটিসিং মুসলিম তাদের উচিত, এই রমজান মাসে এমন মুসলিমদের ব্যাপারে অধিক পরিমাণে যত্নবান হওয়া। তাদের ছোট ছোট পুণ্যকাজে বেশি বেশি উৎসাহ প্রদান করা, তারা যতটুকু আমল করতে পারে সেটুকু আমলের ফজিলত তাদের সামনে বড় করে তুলে ধরা। ছোট আমলে এমন সওয়াব, যদি সে আরও বেশি আমল করতে পারে তাহলে আরও অনেক সওয়াবের অধিকারী সে হতে পারবে-এভাবে তাদের মনে আমলের প্রতি ভালোবাসা তৈরি করতে হবে।
কুরআনে আল্লাহ তাআলা স্পষ্ট বলেছেন,
فَمَن يَعْمَلْ مِثْقَالَ ذَرَّةٍ خَيْرًا يَرَهُ
‘(পরকালে) অতঃপর কেউ অণু পরিমাণ সৎকর্ম করলে তা দেখতে পাবে।’ (সুরা যিলযাল : আয়াত ৭)
একজন সত্যিকারের মুসলিম হিসেবে আপনার-আমার সবার কাজ হলো, মানুষকে ধর্মের পথে সহনশীলতার সঙ্গে আহ্বান করা। কারো আমলকে খাটো করে দেখা, কারো সামান্য পুণ্যকাজকে তাচ্ছিল্য করা, ধর্মের পথে কারো ক্ষুদ্র প্রচেষ্টাকে অহেতুক বলে হেয় করা একজন মুসলিম হিসেবে আপনার কাছে অপর মুসলিম কখনোই কামনা করে না।
কুরআনে আল্লাহ তাআলা বলেন,
وَلْتَكُن مِّنكُمْ أُمَّةٌ يَدْعُونَ إِلَى الْخَيْرِ وَيَأْمُرُونَ بِالْمَعْرُوفِ وَيَنْهَوْنَ عَنِ الْمُنكَرِ وَأُوْلَـئِكَ هُمُ الْمُفْلِحُونَ
‘আর তোমাদের মধ্যে এমন একটা দল থাকা উচিত, যারা আহ্বান জানাবে সৎকর্মের প্রতি, নির্দেশ দেবে ভালো কাজের এবং বারণ করবে অন্যায় কাজ থেকে, আর তারাই হলো সফলকাম।’ (সুরা আলে ইমরান : আয়াত ১০৪)
রমজানের প্রতিটি দিন আমাদের জন্য হেদায়েত এবং আত্মশুদ্ধির পসরা সাজিয়ে বসে আছে। প্রতিদিন শুদ্ধতা আমাদের ডাকছে শুভ্র জীবনের দিকে, আমাদের সকলকে। এই শুভ্রতার পথে এক মুসলিম অপর মুসলিমের হাত ধরে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে। এই উম্মতে মুহাম্মদির প্রতিটি মুসলিমই হেদায়েতের জামিনদার, মানুষকে হেদায়েতের পথে ডাকার জন্য সবাই সমান হকদার। এ দায়িত্ব আমাদের সকলের। এটাই প্রকৃত মুসলিমের পরিচয়।
এ পরিচয়ের কথাই আল্লাহ কুরআনে দ্ব্যর্থহীনভাবে বলেছেন,
وَالْمُؤْمِنُونَ وَالْمُؤْمِنَاتُ بَعْضُهُمْ أَوْلِيَاء بَعْضٍ يَأْمُرُونَ بِالْمَعْرُوفِ وَيَنْهَوْنَ عَنِ الْمُنكَرِ وَيُقِيمُونَ الصَّلاَةَ وَيُؤْتُونَ الزَّكَاةَ وَيُطِيعُونَ اللّهَ وَرَسُولَهُ أُوْلَـئِكَ سَيَرْحَمُهُمُ اللّهُ إِنَّ اللّهَ عَزِيزٌ حَكِيمٌ
‘আর ঈমানদার পুরুষ ও ঈমানদার নারী একে অপরের সহায়ক। তারা ভালো কথার শিক্ষা দেয় এবং মন্দ থেকে বিরত রাখে। নামাজ প্রতিষ্ঠা করে, জাকাত দেয় এবং আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের নির্দেশ অনুযায়ী জীবনযাপন করে। এদের ওপরই আল্লাহ তাআলা অনুগ্রহ করবেন। নিশ্চয়ই আল্লাহ পরাক্রমশীল, সুকৌশলী।’ (সুরা তওবা : আয়াত ৭১)
আল্লাহ আমাদের সবাইকে রমজানের এমন মহান দিনগুলোতে শুভ্রতার আলোয় আলোকিত করুন।