আসছে ‘ড্রাগ স্মাগলার প্রোফাইল’

 

ড্রাগ স্মাগলার প্রোফাইল

মাদক ব্যবসায়ীদের চিহ্নিত করে তাদের প্রত্যেকের আলাদা আলাদা প্রোফাইল তৈরি করে ডাটাবেজে সংরক্ষণ করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এর নাম দেওয়া হয়েছে ‘ড্রাগ স্মাগলার প্রোফাইল’। আগামী অক্টোবর থেকে এর কাজ শুরু হবে। কোরিয়ার একটি আন্তর্জাতিক উন্নয়ন-সহায়তা সংস্থা ডাটাবেজটি তৈরি করে দেবে। বাংলাদেশ মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
বাংলাদেশ মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের এক কর্মকর্তা বলেন, ‘I Dream it প্রকল্পের আওতায় আগামী অক্টোবর থেকে এই ডাটাবেজের কাজ শুরু হবে।’ তিনি জানান, এতে মাদক ব্যবসায়ী ও সরবরাহকারীদের সব তথ্য থাকবে। শুল্ক গোয়েন্দা ও দেশের অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে একটি চুক্তি করবে। তারা এই সার্ভার থেকে মাদক ব্যবসায়ীদের সব তথ্য নিতে পারবে।
এমনকি মাদক ব্যবসায়ীরা দেশের বাইরে পালাতে চাইলেও তারা ইমিগ্রেশনে ধরা পড়বে বলেও জানান অধিদফতরের একাধিক কর্মকর্তা।
ডাটাবেজ তৈরি হওয়ার পর নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর একটি চুক্তি করা হবে বলেও জানা গেছে। এতে জাতীয় পরিচয়পত্রে দেওয়া মাদক ব্যবসায়ীদের তথ্য পাওয়া যায়।
মাদক ব্যবসায়ীদের এই প্রোফাইল তৈরিতে সহযোগিতা করবে দক্ষিণ কোরিয়ার আন্তর্জাতিক উন্নয়ন-সহায়তা সংস্থা কোয়কা (KOICA)।
প্রকল্পের উপপরিচালক মো. জিললুর রহমান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘ড্রাগ স্মাগলার প্রোফাইলে দেশের মাদক ব্যবসায়ী ও বহনকারীদের তথ্য থাকবে। কোনও মাদক ব্যবসায়ী গ্রেফতার হলে তার ব্যক্তিগত তথ্য ও মাদক সংক্রান্ত সব তথ্য থাকবে। এছাড়াও রক্তের গ্রুপ, আঙুলের ছাপ (বায়োমেট্রিক), আই ডিটেক্টর, পূর্ণাঙ্গ ঠিকানাসহ ২৪ ধরনের তথ্য থাকবে। কারণ, গ্রেফতারের পর অনেক সময় মাদক ব্যবসায়ীরা মিথ্যা তথ্য দিয়ে থাকে। তাই তাদের বিষয়ে কংক্রিট তথ্য থাকবে।’
তিনি বলেন, ‘কখনও কখনও মাদক ব্যবসায়ীরা জামিন পেয়ে বের হয়ে যায়। পুনরায় তারা মাদক ব্যবসায় জড়ায়। আবারও মাদক নিয়ে গ্রেফতার হয়। মাদক ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে দেশের বিভিন্ন থানায় মামলা থাকে। তাদের বিষয়ে সব তথ্য একটি প্রোফাইলে রাখার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এই ডাটাবেজে প্রত্যেক মাদক স্মাগলারের আলাদা প্রোফাইল থাকবে। একজন মাদক ব্যসায়ী গ্রেফতারের পর তার সব তথ্য এতে থাকবে। পরে সে কখনও গ্রেফতার হলে তার আঙুলের ছাপ নিলেই ডাটাবেজ থেকে তার অতীতের সব তথ্য জানা যাবে।’
জিললুর রহমান আশা প্রকাশ করে বলেন, ‘এই প্রোফাইল প্রস্তুত হলে স্মাগলাররা দেশ থেকেও পালাতে পারবে না। কারণ, আমাদের সঙ্গে ইমিগ্রেশন ও কাস্টমসের চুক্তি হবে।’
আগামী জানুয়ারিতে পরীক্ষামূলকভাবে স্মাগলারদের তথ্য ইনপুট দেওয়া হবে। জুন থেকে পুরোদমে কাজ করবে এই ডাটাবেজ।
এই প্রকল্পের আওতায় এরই মধ্যে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরকে মাদক শনাক্তের যন্ত্র, কম্পিউটার যন্ত্রাংশ এবং গাড়ি দেওয়া হয়েছে। মাদক শনাক্ত যন্ত্রটি নিয়ে আগামী অক্টোবর থেকেই কাজ করবেন অধিদফতরের সদস্যরা।
গত ৪ মে থেকে মাদকবিরোধী অভিযানে শুরু করে দেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। প্রায় ১৬ হাজার মাদক ব্যবাসীয়, বাহক ও সেবী গ্রেফতার হয়েছে। ভ্রাম্যমাণ আদালতে সাজাও দেওয়া হয়েছে অনেককে। সোমবার (১৬ জুলাই) পর্যন্ত র‌্যাব ও পুলিশের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয়েছে ১৯৩ জন।
মাদেকের বিষয়ে সরকার ‘জিরো টলারেন্স’ নীতিতে অভিযান চলছে। মাদক নির্মূল না হওয়া পযন্ত এই অভিযান চলবে বলেও ঘোষণা দিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল। তীব্র অভিযানের মধ্যেও দেশে মাদ্রকদ্রব্য ঢুকছে। প্রায় প্রতিদিনই কেউ না কেউ গ্রেফতার হচ্ছে।