মধ্যপ্রাচ্যে নারী শ্রমিক নির্যাতন বন্ধে কূটনৈতিক তৎপরতা বাড়াতে হবে। একই সঙ্গে বিদেশের পাঠানোর আগে নারীদের সে দেশ সম্পর্কে জানাতে হবে, কাজ সম্পর্কে যথাযথ প্রশিক্ষণ দিতে হবে। নারী শ্রমিকদের নির্যাতনের শিকার যাতে না হয় সেজন্য মনিটরিং জোরদার করতে হবে।দেশের শীর্ষস্থানীয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল বাংলা ট্রিবিউনের ‘ফেরত আসছে নারী শ্রমিক’শীর্ষক বৈঠকিতে বক্তরা এসব কথা বলেন।
বৃহস্পতিবার (১৯ জুলাই) বিকাল সাড়ে ৪টায় শুরু হয় এ বৈঠকি। রাজধানীর শুক্রাবাদে বাংলা ট্রিবিউন স্টুডিও থেকে এ আয়োজন সরাসরি সম্প্রচার করে বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল এটিএন নিউজ।
মুন্নী সাহার সঞ্চালনায় বৈঠকিতে অংশ নেন প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য মো. ইসরাফিল আলম, ব্র্যাকের মাইগ্রেশন প্রোগ্রাম হেড শরিফুল হাসান,অভিবাসী মহিলা শ্রমিক অ্যাসোসিয়েশন (বোমসা) পরিচালক সুমাইয়া ইসলাম, বায়রা’র সাবেক যুগ্ম মহাসচিব শামীম আহমেদ চৌধুরী নোমান, সৌদি আরব ফেরত নারী শ্রমিক জেসমিন আক্তার এবং বাংলা ট্রিবিউনের বিশেষ প্রতিনিধি শেখ শাহরিয়ার জামান।
মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে মানবিক মূল্যবোধের অভাব রয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য মো. ইসরাফিল আলম।
শামীম আহমেদ চৌধুরী নোমান বলেন, ‘সবাই একই কারণে ফেরত আসেনি। বিভিন্ন কারণে ফেরত আসছে। এক লাখ ৯৫ হাজার কর্মী ভালো আছে। তাদের আর্থিক অবস্থান পরিবর্তন হয়েছে। আর ফেরত এসেছে পাঁচ হাজার। এখন চিন্তার বিষয়, আমরা কি এ কারণে পুরোপুরি মাইগ্রেশন বন্ধ করবো। প্রশ্ন হচ্ছে, কীভাবে আমরা নারীদের সুরক্ষা নিশ্চিত করবো? প্রতিমাসে অতন্ত একবার খোঁজ নিতে পারি আমরাদের কর্মীরা কেমন আছে। এ কাজটি সরকারের পাশাপাশি যেসব এজেন্সি তাদের পাঠাচ্ছে তাদেরও করতে হবে।’
তিনি বলেন, ‘আমাদের বার্গেনিং করার সুযোগ আছে। তাদের (সৌদি আরব) বলতে হবে তোমরা যদি সমস্যা করো তাহলে আমরা শ্রমিক দেবো না। আর যেসব সমস্যা আছে সেগুলোর সমাধান করতে হবে। দুই লাখ নারী বাইরে থাকেন, তারা দুই হাজার করেও টাকা পাঠায়, সেই রেমিটেন্স দেশে আসছে। তাহলে কেন তাদের দেখভাল করা হবে না। এজন্য যে দেশেই পাঠানো হোক না কেন মনিটরিং করতে হবে। অধিকার নিশ্চিত করতে হবে।’
সৌদি আরব ফেরত নারী শ্রমিক জেসমিন আক্তার বলেন, ‘দালাল তাকে বলেছিল, বিদেশে ভালো আচরণ করে, বেতন দেয়। কিন্তু বাস্তবে তা ঘটেনি। মালিক বিমানবন্দর থেকে আমাকে নিয়ে যায়। শোয়ার একটি জায়গা দেয়। আধা ঘণ্টা বিশ্রাম করার পর কাজ করতে বলেন। আমি গোছল করতে চেয়েছিলাম, কিন্ত টানা একদিন আমাকে গোছল করতে দেয়নি। তখন রমজান মাস, বাড়ির লোকজন তারাবির নামাজ পড়তে গেলে আমি গোছল করি। ছাদে একটা নোংরা রুমে থাকতে দেয়, সেটি পরিষ্কার করে আমি থাকি। যতদিন আমি ছিলাম আমাকে খেতে দিতো না, ঘুমাতে দিতো না। ক্ষুধা লাগলে পানি খেতাম। কিন্তু পানিতে কি ক্ষুধা মিটে?’
বাংলা ট্রিবিউনের বিশেষ প্রতিনিধি শেখ শাহরিয়ার জামান বলেন, ‘একটা ঘটনাই যথেষ্ট। আমরা নির্যাতনের একটা ঘটনাও চাই না। অনেকেই সৌদি আরবে কাজ করছেন আবার পাঁচ হাজার নারী ফিরে এসেছেন। প্রেশার তৈরি করতে হবে সরকার যেন সৌদি আরবের সঙ্গে আলোচনা করে। আমরা জেনেভাতে হিউম্যান রাইটস কাউন্সিলে গিয়েও অভিযোগ করতে পারি। কিন্তু তাও করা হয়নি। কূটনৈতিকভাবে আমাদের উদ্যোগ নিতে হবে।’
ছবি: সাজ্জাদ হোসেন