ওষুধ প্রশাসনের ব্যর্থতার কারণেই রোগীদের এত ভোগান্তি: হাইকোর্ট



হাইকোর্টচুয়াডাঙ্গায় এক চক্ষুশিবিরে চিকিৎসা নেওয়া ২০ জনের চোখ হারানোর ঘটনায় দাখিল করা প্রতিবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আদালত বলেছেন, ওষুধ প্রশাসন অধিদফতরের ব্যর্থতার কারণেই এ দেশে রোগীদের এত ভোগান্তি।



এ-সংক্রান্ত এক রুলের শুনানিকালে সোমবার (১৩ আগস্ট) বিচারপতি এফ আর এম নাজমুল আহসান ও বিচারপতি কে এম কামরুল কাদেরের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এ মন্তব্য করেন।
চুয়াডাঙ্গার ইম্প্যাক্ট মাসুদুল হক মেমোরিয়াল কমিউনিটি হেলথ সেন্টারের চক্ষুশিবিরে চিকিৎসা নেওয়া ২০ জনের চোখ হারানোর ঘটনায় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ও ব্যর্থতার দায় এড়াতে পারে না বলে মন্তব্য করেছেন হাইকোর্ট।
আদালতে রিটের পক্ষে শুনানি করেন অ্যাডভোকেট অমিত দাসগুপ্ত, সঙ্গে ছিলেন শুভাষ চন্দ্র দাস। ইম্প্যাক্ট মাসুদুল হক মেমোরিয়াল কমিউনিটি হেলথ সেন্টারের পক্ষে ছিলেন ব্যারিস্টার এম আমীর-উল-ইসলাম ও ব্যারিস্টার তানিয়া আমীর। এছাড়া স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের পক্ষে শুনানি করেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ বাশার। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মহাপরিচালক প্রফেসর ডা. আবুল কালাম আজাদ ও চুয়াডাঙ্গার সিভিল সার্জন ডা.মো. খাইরুল আলমের পক্ষে আদালতে উপস্থিত ছিলেন অ্যাডভোকেট রফিকুল ইসলাম।
শুনানিকালে আদালত বলেন, ‘চক্ষুশিবিরে যে ওষুধ ব্যবহার করা হয়েছে সেটি ওষুধ প্রশাসন ইনস্টিটিউট কর্তৃক রেজিস্টার্ড নয়।’
এর আগে চক্ষুশিবিরে চোখ হারানোর ঘটনায় দুটি তদন্ত প্রতিবেদন হাইকোর্টে দাখিল করে স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক। ওই প্রতিবেদনে বলা হয়,‘চক্ষুশিবিরে ব্যবহৃত ওই ধরনের ওষুধ এখন পর্যন্ত রেজিস্ট্রেশন দেওয়া সম্ভব হয়নি।’
এই প্রতিবেদনের সমালোচনা করে আদালত বলেন,‘ওষুধ প্রশাসন অধিদফতরের ব্যার্থতার কারণেই এ দেশে রোগীদের এত ভোগান্তি।’
পরে আদালত এ মামলায় জারি করা রুলের ওপর পক্ষগুলোর শুনানি শেষ করে আগামী ২১ অক্টোবর রায় ঘোষণার দিন ধার্য করেন।
গত ২৯ মার্চ একটি জাতীয় দৈনিকে ‘চক্ষু শিবিরে গিয়ে চোখ হারালেন ২০ জন!' শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়।
ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘চুয়াডাঙ্গার ইম্যাহয়ক্ট মাসুদুল হক মেমোরিয়াল কমিউনিটি হেলথ সেন্টারে তিনদিনের চক্ষুশিবিরের দ্বিতীয় দিন ৫ মার্চ ২৪ জন নারী-পুরুষের চোখের ছানি অপারেশন করা হয়। অপারেশনের দায়িত্বে ছিলেন চিকিৎসক মোহাম্মদ শাহীন। এদের মধ্যে চারজন নিজেদের উদ্যোগে উন্নত চিকিৎসার জন্য দ্রুত স্বজনদের নিয়ে ঢাকায় আসেন। পরে ইম্প্যাক্টের পক্ষ থেকে ১২ মার্চ একসঙ্গে ১৬ রোগীকে ঢাকায় নেওয়া হয়। ততদিনে অনেক দেরি হয়ে যায়। ৫ মার্চের ওই অপারেশনের ফলে এদের চোখের এত ভয়াবহ ক্ষতি হয়েছে যে, ১৯ জনের একটি করে চোখ তুলে ফেলতে হয়। আর বাকি একজন অন্য জায়গায় চিকিৎসা নিতে থাকেন।
আইনজীবী অমিত দাসগুপ্ত প্রকাশিত ওই প্রতিবেদন সংযুক্ত করে হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় গত ১ এপ্রিল রিট দায়ের করেন।
রিটের শুনানিতে চোখ হারানো ২০ জনের প্রত্যেককে এক কোটি টাকা করে কেন ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেন হাইকোর্ট। ওই রুলের ওপর সোমবার (১৩ আগস্ট) শুনানি শেষে রায়ের দিন ধার্য করেন।