কারাগারের বিশেষ আদালতে যেতে অস্বীকৃতি খালেদা জিয়ার

খালেদা জিয়া

নাজিম উদ্দিন রোডের পুরনো ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের প্রশাসনিক ভবনে স্থাপিত অস্থায়ী বিশেষ জজ আদালত-৫ এ হাজির হতে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন কারাবন্দি খালেদা জিয়া। বুধবার অস্থায়ী এই আদালতে হাজির করার জন্য কারাগারের দোতলার কক্ষে খালেদা জিয়ার কাছে যান কারা কর্তৃপক্ষ । কিন্তু, তিনি এ আদালতে উপস্থিত হতে অনিচ্ছুক বলে জানিয়ে দেন কারা কর্তৃপক্ষকে। আসামি ও রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি শেষে বিচারক আখতারুজ্জামান খালেদা জিয়ার আইনজীবীদের জানান, ‘তাকে (খালেদা জিয়া) আদালতে আনতে পাঠানো হলে তিনি আসতে পারবেন না বলে জানিয়েছেন কারা কর্তৃপক্ষকে। কাস্টডিতে লেখা আছে, তিনি আদালতে আসতে অনিচ্ছুক।’

এ সময় বিচারক আখতারুজ্জামান কারাবন্দি খালেদা জিয়ার আইনজীবীদের কাছে জানতে চান, কাস্টডিতে এ রকম লেখা যদি থাকে যে তিনি আসবেন না, তাহলে কী হবে? এ অবস্থায় প্রধান আসামির অনুপস্থিতিতে এ মামলার বিচার কার্যক্রম চলতে পারে কিনা। আইন কী বলে? এ বিষয়ে বৃহস্পতিবার (১৩ সেপ্টেম্বর) আইনি ব্যাখ্যা দেওয়ার জন্য নির্দেশ দেন তাদের। একইসঙ্গে আদালতে হাজির না হলে তার জামিন বর্ধিত করা যায় কিনা সেই ব্যাপারেও বৃহস্পতিবার নির্দেশনা দেবেন বলে জানান বিচারক।

জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্টের নামে অবৈধভাবে তিন কোটি ১৫ লাখ ৪০ হাজার টাকা লেনদেনের অভিযোগে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াসহ চারজনের বিরুদ্ধে ২০১০ সালের ৮ আগস্ট তেজগাঁও থানায় এ মামলা দায়ের করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।

২০১২ সালের ১৬ জানুয়ারি আদালতে এ মামলার অভিযোগপত্র দাখিল করা হয়। এ মামলার অন্য আসামিরা হচ্ছেন খালেদা জিয়ার সাবেক রাজনৈতিক সচিব হারিছ চৌধুরী, হারিছ চৌধুরীর তখনকার একান্ত সচিব জিয়াউল ইসলাম মুন্না ও ঢাকার সাবেক মেয়র সাদেক হোসেন খোকার একান্ত সচিব মনিরুল ইসলাম খান। মামলার আগে থেকেই হারিছ চৌধুরী পলাতক রয়েছেন।
পুরনো কারাগারে আদালত বসানোর আগে মামলাটির কার্যক্রম রাজধানীর বকশীবাজারে স্থাপিত বিশেষ জজ আদালতে চলে আসছিল। এ বছরের ৮ ফেব্রুয়ারি অপর আরেকটি জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় খালেদা জিয়াকে পাঁচ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড দেন আদালত। রায়ের পর থেকে খালেদা জিয়াকে রাজধানীর পুরনো ঢাকার নাজিম উদ্দিন রোডের সাবেক ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে রাখা হয়েছে। গত ৪ সেপ্টেম্বর এ প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে এ আদালতের কার্যক্রম স্থানান্তর করা হয় সাবেক এই ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের প্রশাসনিক ভবনের ৭ নম্বর কক্ষে। গত ৫ সেপ্টেম্বর প্রথম সেখানে আদালত বসে। ওইদিন খালেদা জিয়া আদালতে গিয়ে বিচারককে বলেন, তিনি অসুস্থ। বারবার তিনি এ আদালতে আসতে পারবেন না। যতদিন ইচ্ছা সাজা দিয়ে দিন। বুধবার (১২ সেপ্টেম্বর) ধার্য তারিখে আবার সেখানে আদালত বসে। কিন্তু সেখানে আসতে অস্বীকৃতি জানান খালেদা জিয়া।
বুধবার সকাল ১০টার কিছু পরেই বিশেষ জজ আদালত ৫-এর বিচারক আখতারুজ্জামান তার খাস কামরায় যান। বেলা পৌনে ১১টার দিকে রাষ্ট্র ও আসামিপক্ষের আইনজীবীরা আদালত কক্ষে যান। অপর দুই আসামি জিয়াউল ইসলাম মুন্না ও মনিরুল ইসলাম খান আসামির কাঠগড়ায় হাজির হলেও খালেদা জিয়া তখনও আসেননি কারাগারে। কিছুক্ষণ পরপরই পুলিশ খালেদা জিয়াকে আনা হচ্ছে বলে তৎপর হয়ে ওঠে। দীর্ঘ সময় অপেক্ষার পর দুপুর ১২টা ২২ মিনিটে বিচারক এজলাসে আসেন। এরপর এ মামলায় জামিনের সময় বাড়ানো এবং এ আদালতে মামলার কার্যক্রম বন্ধ রাখার জন্য খালেদা জিয়ার আইনজীবী সানাউল্লাহ মিয়া আদালতের কাছে লিখিত আবেদন করেন। তিনি আদালতকে বলেন, কারাগারের ভেতরে আদালত বসানো আইনের পরিপন্থী কিনা, সংবিধান পরিপন্থী কিনা সেটা দেখতে হবে। রাষ্ট্রপক্ষের উচিত ছিল এখানে আদালত বসানোর আগে প্রধান বিচারপতির পরামর্শ নেওয়া।
এরপরই অপর দুই আসামি জিয়াউল ইসলাম মুন্না ও মনিরুল ইসলাম খানের জামিন আদেশ বহাল রেখে এ আদালতের কার্যক্রম স্থগিত রাখার আবেদন জানান তাদের আইনজীবী আমিনুল ইসলাম। আসামি পক্ষের এই দুই সিনিয়র আইনজীবী আদালতকে বলেন, যেহেতু একজন আসামি হাজির নাই, তাই শুনানি করার সুযোগ নাই। তাছাড়া এ বিষয়ে প্রধান বিচারপতির কাছেও একটি আবেদন করা হয়েছে।
অ্যাডভোকেট আমিনুল ইসলাম আদালতকে বলেন, বকশিবাজারের আদালতে বিচারক হিসেবে ড. আখতারুজ্জামানের নাম উল্লেখ ছিল। এ আদালতের গেজেটে কোনও বিচারকের নাম নাই। তাছাড়া দীর্ঘ আইন পেশার সময়ে এমন আদালতের চেহারা কখনও দেখিনি। ১২/২৪ ফুটের একটি কক্ষে আদালত।
এ সময় আসামিপক্ষে বক্তব্য ও আবেদনের বিরোধিতা করে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী মোশাররফ হোসেন কাজল আদালতকে বলেন, তারা একদিকে এ আদালতকে অবৈধ বলছেন। অন্যদিকে জামিন চাচ্ছেন। এ মামলার প্রধান আসামিকে আমরা যথাযথ সম্মান দিয়েই বিচার কার্যক্রম চালাচ্ছি। উনি (খালেদা জিয়া) ইচ্ছা করে বিচার কাজে সহায়তা করছেন না। এ সময় খালেদা জিয়া আদালতে আসতে না চাইলে তাকে অনুপস্থিত রেখে বিচার কার্যক্রম চালানোর জন্য আদালতের কাছে আবেদন করেন তিনি। এ সময় আসামি ও রাষ্ট্রপক্ষে বেশ কিছু সময় তর্ক-বিতর্ক চলে।
প্রায় একঘণ্টা আদালতের কার্যক্রম চলার পর দুপুর ১টা ২২ মিনিটের দিকে বৃহস্পতিবার সকাল ১০টা পর্যন্ত এ আদালতের কার্যক্রম মুলতবি করেন বিচারক। তার আগে তিনি রাষ্ট্র ও আসামিপক্ষের আইনজীবীদের কাছে খালেদা জিয়ার অনুপস্থিতিতে বিচার কার্যক্রম চালানোর বিষয়ে আইনি ব্যাখ্যা চেয়েছেন।