মৌলভীবাজারে খাস জমি উদ্ধারে অভিযান

 



মৌলভীবাজারমৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলের লাউয়াছড়া সংলগ্ন বালিশিরা পাহাড়ের সরকারি খাস জমিতে তৈরি করা কটেজ ও রিসোর্টের দখল থেকে সরকারি খাসজমি উদ্ধার করেছে স্থানীয় উপজেলা প্রশাসন। চলতি বছরের ৫ ফেব্রয়ারি থেকে ২৪ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত তিন দফা অভিযান চালিয়ে এ জমি উদ্ধার করা হয়।
সোমবার (২৪ সেপ্টেম্বর) দুপুরে শ্রীমঙ্গল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও সহকারী কমিশনার ভূমি (ভারপ্রাপ্ত) মো. আশেকুল হক বাংলা ট্রিবিউনকে এ তথ্য নিশ্চিত করেন।
রাধানগর এলাকার এসব সরকারি খাস জমি উদ্ধার সরকারের পক্ষে জেলা প্রশাসকের নামে মালিকানা হিসেবে সাইনবোর্ড ঝুলানো হয়েছে। উদ্ধারকৃত জমিতে ‘অরণ্যের দিনরাত্রি’ ও ‘গ্রান্ড মুবিন রিসোর্ট’ নামে দুটি প্রতিষ্ঠান সরকারি খাস জমির দখল স্বত্ব কিনে নিয়ে ব্যবসা পরিচালনা করে আসছিল।
খাস জমির মধ্যে গ্রান্ড মুবিন রিসোর্টের ৬টি দাগে মোট ৫ একর ১৭ শতক ও অরণ্যের দিনরাত্রির কটেজের দুটি দাগে ৪ একর ৮৫ শতক জমি বেদখলে ছিল।
বিভাগীয় কমিশনার সিলেট কার্যালয়ের সহকারী কমিশনার (রাজস্ব) আফসানা তাসলিম স্বাক্ষরিত এক পত্রের নির্দেশনায় উপজেলাধীন বালিশিরা পাহাড়-১, ২, ৩ ও ৪ মৌজার খাস জমির প্রকৃত অবস্থা নিরূপণের লক্ষ্যে জরিপ কাজ চলছে। ওই পত্রের আলোকেই শ্রীমঙ্গল ভূমি অফিসের সার্ভেয়ার চলতি বছরের গত ২১ মার্চ থেকে এই জরিপ কাজ শুরু করেন।
এ ব্যাপারে শ্রীমঙ্গল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) ও সহকারী কমিশনার ভূমি মো. আশেকুল হক বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, এই জরিপের মাধ্যমে বালিশিরা পাহাড়ের চারটি মৌজায় কী পরিমাণ সরকারি খাস জমি বেদখল রয়েছে ও বর্তমানে কারা এসব জমির দখলে আছেন তার একটি পূর্ণাঙ্গ তালিকা তৈরির কাজ চলছে। খাস জমি চিহ্নিত করতে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা রয়েছে বলে তিনি জানান।
এদিকে, বালিশিরা পাহাড় ব্লক মৌজার ৪টি ব্লকে জরিপ কার্যক্রম শুরু হওয়ায় এসব এলাকার খাস জমিতে বসবাসকারী মানুষ উচ্ছেদ আতঙ্কে রয়েছেন।
শ্রীমঙ্গল রাধানগর এলাকার স্থানীয় বাসিন্দারা বলেছেন, তারা স্বাধীনতার পর থেকেই এখানে বসবাস করছেন।
মো. আশেকুল হক বলেন, ‘আমরা ৬শ’ একর খাস জমি চিহ্নিত করেছি। এখন এগুলো দখলে নেওয়ার চেষ্টা করছি। কয়েক জায়গায় সাইনবোর্ড ঝুলিয়ে দিয়েছি। আমাদের কাছে সব ডকুমেন্ট আছে। সরকারি খাস জমি উদ্ধারকাজ ইউএনও মোবাশশেরুল ইসলাম স্যার অনেক আগ থেকেই অভিযান শুরু করেন। এখন এটি আমাদের নিয়মিত রুটিন কাজের অংশ। ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তারা নিয়মিতভাবে খাস জমি চিহ্নিত করে থাকেন। জেলার প্রতিটি রাজস্ব সভায় আমাকে জানাতে হয় কতটুকু খাস জমি উদ্ধার করা হয়েছে।’
খাস জমি উদ্ধারে স্থানীয় বাসিন্দাদের আতঙ্কগ্রস্ত হওয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘যারা টাকার বিনিময়ে সরকারি খাস জমি কিনে বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছে শুধুমাত্র তাদের বিরুদ্ধেই ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। সরকারি খাস জমিতে বসবাসরত কোনো পরিবারকে বসতভিটা থেকে উচ্ছেদ করা হবে না।’ স্থানীয় বাসিন্দাদের আতঙ্কগ্রস্ত হওয়ার কারণ নেই বলে তিনি জানান।
শ্রীমঙ্গল ভূমি অফিস সূত্রে জানা গেছে, শ্রীমঙ্গল উপজেলার রাধানগর, মোহাজেরাবাদ, দিলবরনগর, ডুলুছড়া এলাকায় দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ব্যবসায়ীরা ব্যক্তিমালিকানায় খাস জমি ক্রয় করে কটেজ, রিসোর্ট নির্মাণ করে আসছেন। এতে স্থানীয় সাধারণ মানুষ প্রতারিত হচ্ছেন।