প্লাস্টিক বর্জ্য থেকে জ্বালানি, পরিবেশবান্ধব বর্জ্য ব্যবস্থাপনার হাতছানি





২২২

প্লাস্টিক বর্জ্য থেকে জ্বালানি তেল-গ্যাস উৎপাদনে প্লান্ট স্থাপন করে বাংলাদেশের বর্জ্য ব্যবস্থাপনাকে পরিবেশবান্ধব করা সম্ভব। এতে উৎপাদিত প্রতি লিটার ডিজেলের দাম পড়বে ২০ টাকা।


যুক্তরাষ্ট্রপ্রবাসী বাংলাদেশি বিজ্ঞানী দম্পতি ড. মইন উদ্দিন সরকার ও ড. আনজুমান সেলী এ তথ্য জানিয়ে বলেছেন, দেশের বর্জ্য ব্যবস্থাপনাকে পরিবেশবান্ধব করে তোলার লক্ষ্যে কাজ করতে তারা আগ্রহী। এ জন্য সরকারের সার্বিক সহায়তা চেয়েছেন তারা।
সোমবার (৮ অক্টোবর) ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির (ডিআরইউ) সাগর-রুনি মিলনায়তনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলন ড. মইন উদ্দিন সরকার বলেন, বর্তমান বিশ্বে পরিবেশের জন্য প্লাস্টিক বর্জ্য চরম হুমকি হিসেবে দাঁড়িয়েছে। এই বর্জ্য থেকে জ্বালানি তেল, এলপিজি গ্যাস ও জেট ফুয়েল তৈরি করতে তিনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে একটি প্লান্ট স্থাপন করেছেন। এর মাধ্যমে প্রতি টন প্লাস্টিক ও পলিথিন বর্জ্য থেকে ১ হাজার ৩০০ লিটার জ্বালানি তেল, ১০ সিলিন্ডার এলপিজি গ্যাস ও ২৩ লিটার জেট ফুয়েল তৈরি করা সম্ভব। এতে ডিজেলের দাম পড়বে প্রতি লিটার ২০ টাকা।
তিনি বলেন, ওয়াস্ট টেকনোলজিস এলএলসি কোম্পানি এই প্লান্টের মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রে বর্জ্য ব্যবস্থাপনার কাজ করছে। বর্তমানে বর্জ্যকে পরিবেশবান্ধব করে তুলতে বাংলাদেশের বর্জ্য ব্যবস্থাপনা নিয়ে কাজ করার আগ্রহ প্রকাশ করে আমি সরকারের সার্বিক সহায়তা কামনা করছি।
ড. মইন উদ্দিন সরকার বলেন, বাংলাদেশে একটি প্লান্ট স্থাপন করতে ১১টি বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে চুক্তি সই হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। তারাও এটিকে ইতিবাচক বলে মন্তব্য করে সার্বিক সহায়তা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষণার মাধ্যমে এ আবিষ্কারকে সারাদেশে ছড়িয়ে দেওয়া সম্ভব হবে।
বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এই প্লান্ট স্থাপনের আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, বাংলাদেশের সন্তান হিসেবে তার দায়বদ্ধতা রয়েছে। এ কারণে তিনি নিজের দেশে একটি প্লান্ট স্থাপন করে সেটিকে রোল মডেল হিসেবে দেখিয়ে এশিয়া মহাদেশসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এ প্লান্ট স্থাপন করতে চান।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, প্লাস্টিক পচনশীল না হওয়ায় এর বর্জ্য মানুষ ও সমাজের জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। ১৯৫০ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত সারাবিশ্বে প্রায় ৬ দশমিক ৩ বিলিয়ন টন প্লাস্টিক উৎপাদন হয়েছে। এর মধ্যে মাত্র ৯ শতাংশ পুনঃপ্রক্রিয়াজাতকরণ সম্ভব হয়েছে। এর বাইরে সবটাই বর্জ্য হিসেবে পড়ে রয়েছে। এতে করে প্রায় ৭০০ প্রজাতির সামুদ্রিক প্রাণি হুমকির মুখে পড়েছে। এ সমস্যা সমাধনে চিন্তিত পরিবেশ বিজ্ঞানীরা।
উল্লেখ্য, যুক্তরাষ্ট্রপ্রবাসী বিজ্ঞানী মইন উদ্দিন সরকার কুমিল্লার সন্তান। তিনি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৯০ সালে এমএসসি পাস করার পর যুক্তরাজ্যে পাড়ি জমান। এরপর লন্ডনের ম্যানচেস্টার ইন্সটিটিউট অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকলোলজি থেকে পিএইচডি ডিগ্রি লাভ করেন। গত ২৮ বছর ধরে বিভিন্ন দেশে গবেষণার কাজে নিয়োজিত ছিলেন। ২০০৫ সাল থেকে এই বিজ্ঞানী দম্পতি প্লাস্টিক বর্জ্য নিয়ে গবেষণা শুরু করে। ২০১০ সালে প্লাস্টিক তেল উৎপাদনের কৌশল উদ্ভাবন ও পেটেন্ট করেন। বর্তমানে ওয়াস্ট টেকনোলজিস কোম্পানির মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রে প্লাস্টিক বর্জ থেকে জ্বালানি তেল উৎপাদন কার্যক্রম পরিচালনা করছেন তারা।