আন্তর্জাতিক গ্রামীণ নারী দিবস উপলক্ষে সংবাদ সম্মেলন

আগামীকাল (১৫ অক্টোবর) আন্তর্জাতিক গ্রামীণ নারী দিবস। এই উপলক্ষে আজ ঢাকায় জাতীয় প্রেসক্লাবের কনফারেন্স হলে সংবাদ সম্মেলন করেছে আন্তর্জাতিক গ্রামীণ নারী দিবস উদযাপন জাতীয় কমিটি। সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, নারীরা পারিবারিক শ্রম ছাড়াও কৃষি, মৎস্য, বনায়ন, গবাদিপশু পালনসহ নানা ধরনের শ্রমে অবৈতনিকভাবে জড়িত। অথচ এসব অদৃশ্য শ্রমের আর্থিক মূল্য না থাকায় তাকে সারাক্ষণ পরিবারে, সমাজে অবমূল্যায়িত হতে হচ্ছে। তাই পারিবারিক আয়ে কিংবা সিদ্ধান্ত গ্রহণে তার মতামতের বিষয়টি থাকছে উপেক্ষিত এবং অবহেলিত। কাজেই দেশের সার্বিক আর্থসামাজিক উন্নয়নে নারীদের কাজের মূল্যায়ন এবং কাজের আইনগত স্বীকৃতি দিতে হবে।

44029749_324478281432795_5960978367019745280_n

আয়োজকদের পক্ষ থেকে জানানো হয়, দেশের ৪০টিরও বেশি জেলায় উদযাপিত হচ্ছে আন্তর্জাতিক গ্রামীণ নারী দিবস। প্রতি বছরের মতো এবারও সারাদেশে র‌্যালি, সেমিনার, মানববন্ধন, মেলা আয়োজন এবং গ্রামীণ নারীদের বিভিন্ন ক্ষেত্রে অবদান রাখার জন্য সম্মাননা প্রদানসহ নানা কর্মসূচির মাধ্যমে দিবসটি উদযাপন করা হবে। তারা আরও জানান, বাংলাদেশে ২০০০ সাল থেকে বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী ও উন্নয়ন সংস্থা (এনজিও) সম্পূর্ণ নিজেদের অর্থায়নে গ্রামীণ নারী দিবস উদযাপন করে আসছে। উল্লেখ্য, ইক্যুইটিবিডি আন্তর্জাতিক গ্রামীণ নারী দিবস উদযাপন জাতীয় কমিটির সচিবালয় হিসেবে কাজ করছে।

আন্তর্জাতিক গ্রামীণ নারী দিবস উদযাপন জাতীয় কমিটির সচিবালয় সমন্বয়কারী ফেরদৌস আরা রুমীর সঞ্চালনায় সংবাদ সম্মেলনে আয়োজকদের পক্ষ থেকে মূল বক্তব্য উপস্থাপন করেন জাতীয় কমিটির সভাপ্রধান শামীমা আক্তার। এছাড়া জাতীয় কমিটির সদস্য নাহিদ সুলতানা, গ্রাম বিকাশ সহায়ক সংস্থার নির্বাহী পরিচালক মাসুদা ফারুক রত্না, ডিসএবল ওয়েলফেয়ার সোসাইটির নির্বাহী পরিচালক মার্জিনা আহমেদ, বাংলাদেশ কৃষক ফেডারেশনের সহ-সভানেত্রী রেহানা বেগম, সচেতন সমাজ সেবা হিজড়া সংঘের সভানেত্রী ইভান আহমেদ কথা সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য রাখেন।

সভাপ্রধান শামীমা আক্তার মূল বক্তব্যে বলেন, ‘বাংলাদেশের পুরুষের তুলনায় নারীরা বেশি কাজ করেন গৃহস্থালিতে। কোনও রকম স্বীকৃতি নেই এরকম গৃহস্থালি কাজে একজন নারী প্রতিদনি গড়ে ৬ ঘণ্টারও বেশি এবং বিপরীতে একজন পুরুষ এ ধরনের কাজে সময় দেন মাত্র একঘণ্টা। অন্যদিকে এসব কাজ অন্য কাউকে করতে বললে তার বিনিময়ে নারীরা কত পারিশ্রমিক পাবেন হিসাব করলে তার আর্থিক মূল্য দাঁড়ায় জিডিপির ৮৭.২ শতাংশ। বাংলাদেশ শ্রম আইন ২০০৬-এর ৩৪৫ ধারা অনুযায়ী, নারী-পুরুষের সমকাজে সমান মজুরি প্রদানের কথা থাকলেও, চারা রোপণ ও ফসল প্রক্রিয়াজাতকরণের ক্ষেত্রে পুরুষদের দৈনিক মজুরি যেখানে ৩০০-৬০০ টাকা, নারীরা সেখানে পায় মাত্র ৩৫০ টাকা। কাজেই, আপাতদৃষ্টিতে কৃষিতে নারীর অংশগ্রহণ বৃদ্ধির পেছনে নারীর ক্ষমতায়নের কথা মনে হলেও এর মূল নেপথ্যে রয়েছে স্বল্প মজুরি দিয়ে দীর্ঘক্ষণ কাজ করানোর সুবিধা।’ তিনি চলমান এই অবস্থা অবসানের দাবি জানান।

ফেরদৌস আরা রুমী বলেন, ‘নারীর গৃহস্থালিসহ অন্যান্য যেমন শ্রম কৃষি, মৎস্য, গবাদিপশু লালন-পালনের মতো নানা ধরনের কাজে জড়িত। কিন্তু তার এসব অদৃশ্য শ্রমের কোনও আর্থিক মূল্য না থাকায় পরিবারে তার মত প্রকাশ বা সিদ্ধান্ত গ্রহণের কোনও অধিকার নেই। সেজন্য প্রয়োজন নারীর অদৃশ্য শ্রমের আইনগত স্বীকৃতি এবং মূল্যায়ন। যা তাকে পরিবারে সমাজে ও রাষ্ট্রে তার অধিকার প্রতিষ্ঠায় এগিয়ে নেবে।’

নাহিদ সুলতানা বলেন, ‘নারীরা এখন কৃষিখাতে ব্যাপক অবদান রাখার পরও কৃষক হিসেবে স্বীকৃতি পাচ্ছেন না। কৃষক হিসেবে স্বীকৃতি না পাওয়ার কারণে কৃষকদের জন্য গৃহীত সরকারি উদ্যোগের কোনও সুফলই তারা পান না। এসব সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত হলে কৃষিতে নারীর অবদান আরও কয়েকগুণ বাড়তো।’

মর্জিনা আহমেদ বলেন, ‘নারীদের শ্রম মূলত গ্রামীণ কৃষি-অর্থনীতিতে পরিবারের আয়ের উৎস হিসেবে বিবেচনা করা হয় না, বরং ফসল উৎপাদনে সামগ্রিক ব্যয় হ্রাসের উৎস হিসেবে দেখা হয়। কারণ, একজন শ্রমিক নিয়োগ দিলে তাকে মজুরি দিতে হবে, বিপরীতে তাকে দিয়ে ইচ্ছেমতো কাজ করানোও যাবে না। এভাবে ক্রমাগত নারী পারিবারিক আয়ে ভূমিকা রাখার পরও তার কোনও মূল্যায়ন হয় না।’

মাসুদা ফারুক রত্না বলেন, ‘আইনের পরিবর্তনের মাধ্যমে নারীর গৃহশ্রমের পাশাপাশি অবৈতনিক শ্রমকে স্বীকৃতি দিতে হবে। এই স্বীকৃতি তার সামাজিক মর্যাদা বৃদ্ধির পাশাপাশি অর্থনৈতিক স্বাবলম্বিতা ও ন্যায্যতা নিশ্চিত করবে।’