চলমান মাদকবিরোধী অভিযানে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে নিজেদের গ্রেফতার এড়াতে চিহ্নিত ও শীর্ষ মাদক বিক্রেতাদের অনেকেই গা-ঢাকা দিয়ে আছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর চোখ ফাঁকি দিয়ে নানা কৌশলে মাদক পাচারের চেষ্টা করছে তারা। এ কারণেই রাজধানীতে মাদকের স্পট না থাকলেও গোপনে মিলছে মাদকদ্রব্য। কারওয়ান বাজারে রেললাইন বস্তিতে ভাসমান মাদক বিক্রেতাদের আনা-গোনা এখনও রয়েছে। প্রশাসনের সহায়তায় এই বস্তির একটি অংশ ভেঙে দেওয়া হলেও সেখানে বন্ধ হয়নি মাদক বেচাকেনা। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতায় রাজধানীতে এক সময়ের চিহ্নিত মাদক স্পটগুলো ভেঙে দেওয়ার পরও মিলছে মাদকদ্রব্য।
শুক্রবার (১৯ অক্টোবর) কারওয়ান বাজার রেললাইন বস্তিতে গিয়ে দেখা যায়, রেললাইনে দাঁড়িয়ে কয়েকজন গাঁজা বিক্রি করছে। তেজগাঁওয়ের দক্ষিণ বেগুনবাড়ি এলাকায় রেললাইনের পাশে বিক্রি হচ্ছে গাঁজা। তবে পরিচিত মানুষ ছাড়া ইয়াবা বিক্রি করে না মাদক বিক্রেতারা। নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক গাঁজা বিক্রেতা জানায়, ‘এখন ইয়াবা চাইলেই পাওয়া যায় না। ট্যাকা (টাকা) দিলে এক ঘণ্টা পর আইনা দেওন যাইবো।’
গাঁজা কোথা থেকে কারওয়ান বাজারে আসে জানাতে চাইলে এই মাদক বিক্রেতা জানায়, ‘টঙ্গী রেলস্টেশন থেকে সিস্টেমে আসে। মাল লাগলে ওই পারে জানাই, ওরা সেখান থেকে লোক দিয়া ট্রেনে কইরা পাঠাইয়া দেয়।’ কীভাবে আনা হয় জানতে চাইলে জানায়, ‘কত পদ্ধতি আছে? লগে কইরা নিয়া ট্রেনে উঠলে ১০/১৫ মিনিট লাগে কারওয়ান বাজার আসতে।’
তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল থানার পরিদর্শক (অপারেশন) মোহাম্মদ কামাল উদ্দিন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘মাদকের বিরুদ্ধে আমাদের অভিযান অব্যাহত রয়েছে। প্রশাসনের সহায়তায় আমরা রেললাইন বস্তিটি ভেঙে দিয়েছি, কিন্তু এর ফলে ভাসমান মাদক বিক্রেতা বেড়ে গেছে। তাদের গ্রেফতার করে আইনের আওতায় আনতে আমাদের চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।’
বস্তির বাসিন্দা লাইলি বেগম বাংলা ট্রিবিউনকে জানান, ‘এই বস্তিতে আগেও পুলিশ অভিযান চালিয়েছে। এখানকার অনেক মাদক বিক্রেতাকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। অনেকেই আবার পালিয়ে গেছে। এখানে মাদক বেচাকেনা বন্ধ ছিল। কিন্তু বুলেট অন্য জায়গা থেকে ইয়াবা এনে ঘুরে ঘুরে বিক্রি করতো। প্রায়ই এই বস্তির বাসিন্দা রুবেলের ঘরে গিয়ে বুলেট নিজেও ইয়াবা খেতো।’
এদিকে ভাসানটেক এলাকায় মাদকের স্পট না থাকলেও ভ্রাম্যমাণ মাদক বিক্রেতা রয়েছে। ভাসানটেক মুক্তিযোদ্ধা মার্কেট সংলগ্ন এক নম্বর বস্তির (কুমিল্লাপট্টি) স্থানীয় বাসিন্দারা জানায়, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে নিজের গ্রেফতার এড়াতে আলোচিত মাদক চোরাকারবারি মোর্শেদা আত্মগোপনে রয়েছে। এলাকার মাদক কেনাবেচা দূর থেকে নিয়ন্ত্রণ করছে মোর্শেদা। তার সহযোগীরা গোপনে ভ্রাম্যমাণভাবে মাদক সরবরাহ ও বিক্রি করছে।
এ বিষয়ে ভাসানটেক থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মুন্সী ছাব্বির আহমেদ বাংলা ট্রিবিউনকে জানান, ‘মোর্শেদা তালিকাভুক্ত একজন মাদক চোরাকারবারি। সে আমাদের এলাকায় থাকে না। তবে ভাসানটেক থানায় তার বিরুদ্ধে একাধিক মামলা রয়েছে। কিন্তু ভাসানটেক থানা এলাকায় তাকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। মোর্শেদাকে গ্রেফতারের জন্য সর্বোচ্চ চেষ্টা চলছে।’
মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের ঢাকা মেট্রো উপ অঞ্চলের (উত্তর) সহকারী পরিচালন খোরশেদ আলম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘মাদকবিরোধী অভিযানের ফলে মাদকের সরবরাহ অনেকাংশে কমে গেছে। তবে একেবারে বন্ধ বলা যাবে না। মাদকদ্রব্য বিক্রি বন্ধে আমাদের নিয়মিত অভিযান অব্যাহত রয়েছে।’
প্রসঙ্গত, চলতি বছরের ৪ মে থেকে ১৭ অক্টেবর পর্যন্ত র্যাবের ৩ হাজার ৯০৮টি অভিযানে ৬ হাজার ৬৮৪ জন মাদক বিক্রেতা ও মাদকসেবীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এ সময় র্যাবের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে ৮৩ জন মাদক চোরাকারবারি নিহত হয়। এসব অভিযানে ৫৬ লাখ ৬৮ হাজার ১০০ পিস ইয়াবা, ২ হাজার ৩৯১ কেজি গাঁজা, ৫৩ হাজার ৬৫২ বোতল ফেনসিডিল, ১৫ কেজি ৮৫৭ গ্রাম হেরোইন, ৩০ হাজার ৩৮৬ বোতল বিদেশি মদ ও ১২ লাখ ৮৯ হাজার ৬৭৪ লিটার দেশি মদ উদ্ধার করা হয়।