প্রাথমিক ও উপানুষ্ঠানিকের ৬৫ লাখ বই ছাপা হবে বিদেশে?

 

এনসিটিবিউপানুষ্ঠানিক শিক্ষা ব্যুরো ও প্রাথমিক বিদ্যালয়ের আপদকালীন মজুদের জন্য ৬৫ লাখ সংখ্যা বই ছাপতে দেশের মুদ্রণ প্রতিষ্ঠানে না দিয়ে বিদেশি প্রতিষ্ঠানকে দেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের (এনসিটিবি) বিরুদ্ধে। আর এ নিয়ে দেশীয় মুদ্রণ প্রতিষ্ঠান মালিকদের মধ্যে অসন্তোষ দেখা দিয়েছে। তারা প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতরের (ডিপিই) নির্দেশনা অনুযায়ী দেশের প্রতিষ্ঠাগুলোতেই বই ছাপার কাজ দেওয়ার দাবি জানান।

প্রসঙ্গত, বুধবার (১৪ নভেম্বর) মুদ্রণ প্রতিষ্ঠানের নেতারা এনসিটিবিতে যান। এনসিটিবি এমন সিদ্ধান্ত না বদলালে তারা মামলার পাশাপাশি চলমান বই মুদ্রণ কাজ বন্ধ করে দেওয়ার হুমকি দিয়েছেন বলে জানা গেছে।

এ প্রসঙ্গে মুদ্রণ প্রতিষ্ঠান সমিতির নেতাদের অভিযোগ, সরকারি ক্রয় আইন (পিপিআর) ও এনসিটিবির রীতি অনুসরণ না করেই এনসিটিবি টেন্ডার ছাড়াই বিদেশি প্রতিষ্ঠানকে বই ছাপার কাজ দিতে যাচ্ছে। তারা বলেন, ‘আমরা তা মেনে নেবো না। বই বিদেশে ছাপতে দেওয়া হলেই আমাদের কাছে যেসব বইয়ের কাজ রয়েছে, তা বন্ধ করে দেবো।’

এদিকে মুদ্রণ শিল্প সমিতির চেয়ারম্যান শহীদ সেরনিয়াবাত বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা ব্যুরোর জন্য ৩৩ লাখ এবং প্রাথমিক শিক্ষা স্তরের জন্য ৩২ লাখ বই ছাপাতে চায় এনসিটিবি। কিন্তু এনসিটিবির চেয়ারম্যান বিনা টেন্ডারে ওইসব বই বিদেশ থেকে ছাপতে চান। চেয়ারম্যানের যুক্তি দেখাচ্ছেন, বিদেশে বই ছাপালে খরচ কম হবে। কিন্তু বিদেশে বই ছাপার পরও সরকারকে আমদানি খরচ হিসেবে আরও ৩১ শতাংশ অর্থ ব্যয় করতে হয়। ওই হিসাব ধরলে ব্যয় আরও বেড়ে যায়। রহস্যজনক কারণে বিদেশে কাজ দিতে চাচ্ছেন এনসিটিবি চেয়ারম্যান।’ এই বিষয়ে আইনি পদক্ষেপের পাশাপাশি প্রয়োজনে বই সরবরাহ বন্ধ করে দেওয়ার হুমকি দেন শহীদ সেরিনিয়াবাত।

 

মুদ্রণ সমিতির সাবেক এক চেয়ারম্যান বলেন, ‘অতীতে যেসব প্রতিষ্ঠান আগে কাজ শেষ করেছে, তারাই বাড়তি বই ছাপার কাজ পেয়েছে। কিন্তু প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতরের নির্দেশনার দোহাই দিয়ে কাজ বিদেশে দেওয়ার পাঁয়তারা চলছে। অথচ সরকারি অর্থে ছাপানো এই বইয়ের ব্যাপারে অধিদফতরের নির্দেশনা দেওয়ার কথা নয়। রহস্যজনক কারণে এনসিটিবি বিদেশমুখী হতে চাচ্ছে।‘

জানতে চাইলে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতরের মহাপরিচালক ড. আবু হেনা মোস্তফা কামাল বলেন, ‘প্রাথমিক পর্যায়ের বইয়ের জন্য আমরা শুধু চাহিদা দেই। এনসিটিবি সেই চাহিদা অনুযায়ী আমাদের বই দিয়ে থাকে। আমরা ইনস্পেকশন করে থাকি। চাহিদা মতে সব বিষয় ঠিক থাকলে অর্থ পরিশোধ করা হয়। তাই পিপিআরের সব বিষয় দেখভাল এনসিটিবিই করে। তিনি বলেন, ‘যদি এনসিটিবির কারণে নির্ধারিত সময়ে পাঠ্যপুস্তক পেতে অনিশ্চয়তা দেখা দেয়, তবে আমার বিষয়টি মন্ত্রণালয়কে জানাবো।  সেখান থেকে যাবতীয় ব্যবস্থা নেবে।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে এনসিটিবির চেয়ারম্যান নারায়ণ চন্দ্র সাহা বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘মুদ্রণ প্রতিষ্ঠানের মালিকদের তথ্য ঠিক নয়। সরকারি ক্রয় আইন (পিপিআর) ও এনসিটিবির রীতি অনুসরণ করেই বই ছাপানো হবে।’ তিনি আরও বলেন, ‘আইনের মধ্যে থেকেই টেন্ডারের মাধ্যমেই কাজ নেওয়া হবে। নিয়মের ব্যত্যয় হবে না। প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতরের (ডিপিই) নির্দেশনা মতেই কাজ হবে।’