#মিটু আন্দোলন: ‘সময় এসেছে প্রশ্ন তোলার, কথা বলার’





১১১যৌন নিপীড়কদের সতর্ক করে আবারও মানববন্ধন করলো #মিটু মুভমেন্ট-বাংলাদেশ। রবিবার (১৮ নভেম্বর) দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে দ্বিতীয়বারের মতো মানববন্ধন করে যৌন নিপীড়কদের সতর্ক করলেন নারীরা।

মানববন্ধনে মানবাধিকারকর্মী খুশি কবির বলেন, ‘পুরুষশাসিত সমাজে মেয়েদের ভোগ্যপণ্য হিসেবে মনে করা হয়। আমি পুরুষতন্ত্রের কথা বলছি। এই দেখার পিছনে অনেক কারণ আছে। আপনারা যদি ওয়াজ মাহফিল শোনেন, সেখানে দেখবেন নারীকে মানুষ হিসেবে দেখা হচ্ছে না। এখন সময় এসেছে আমাদের প্রশ্ন তোলার, কথা বলার। সমাজে আমাদের মানুষ হিসেবে গণ্য করেন, আমরাও আপনাদের মানুষ হিসেবে গণ্য করবো।’

বাংলাদেশ নারী সাংবাদিক কেন্দ্রের সভাপতি নাসিমুন আরা হক মিনু বলেন, ‘একজনের অনেক গুণ আছে, অনেক প্রতিভা আছে, সে জন্য তিনি শ্রদ্ধেয়। তাই বলে তার খারাপ আচরণ শ্রদ্ধেয় না। আমাদের সমাজ থেকে খারাপ আচরণগুলো দূর করতে হবে। যেমন অভিযোগ এসেছে ডিভিসির প্রণব সাহার বিরুদ্ধে। অভিযোগ করেছে সেমন্তী নামের এক ছাত্রী। তার ১৫ বছর বয়সের অভিজ্ঞতা আজ ১১ বছর পরে অনেক কষ্টে সে বলতে পেরেছে। এমনভাবে যে অভিযোগগুলো এসেছে, শুধু কি এরাই অপরাধী? এগুলো পথে পথে হচ্ছে, অফিসে অফিসে হচ্ছে, মাঠে মাঠে হচ্ছে। আমরা চাই নারীকে শ্রদ্ধা করুন, নিপীড়নকারীকে ঘৃণা করুন।’
বাংলা ট্রিবিউনের চিফ রিপোর্টার উদিসা ইসলাম বলেন, ‘১৯৯৮ সালে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ধর্ষণবিরোধী আন্দোলন হয়েছিল। গড়ে উঠেছিল ‘আমিও ধর্ষিতা’ আন্দোলন। সেই হাত ধরে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে যখন # মিটু আন্দোলন শুরু হয়েছে, সেটি বাংলাদেশে আছড়ে পড়েছে। যারা বিভিন্ন সময় নানাভাবে নির্যাতিত হয়েছেন, এমন নয়জন নারী মুখ খুলেছেন। আমরা মুখ খুলিনি, তার মানে এই নয় আমরা নির্যাতনের শিকার নই। বাংলাদেশের প্রত্যেক মেয়েকে জীবনে এ ধরনের নির্যাতনের শিকার হয়ে আসতে হয়। কিন্তু এই কথাগুলো কোথায় বলবে, সেই জায়গাটা খুঁজে পেতো না এতদিন। বর্তমানে সেই জায়গাটা তৈরি হয়েছে।’


বাংলা ভিশনের নিউজ এডিটর শারমিন রিনভী বলেন, ‘এতদিন পরে আইসব্রেক হতে চলেছে। এ আন্দোলন ছেলেদের বিরুদ্ধে নয়, এ আন্দোলন নিপীড়কের বিরুদ্ধে। আমাদের ভাই আছে, বাবা আছে, বন্ধু আছে, সবাই কিন্তু খারাপ নয়। যারা খারাপ তাদের বিচারের মুখোমুখি করার জন্য এই আন্দোলন।’
ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাধারণ সম্পাদক শুকুর আলী শুভ বলেন, ‘ক্ষুদ্র একটা গোষ্ঠী যৌন নিপীড়নের সঙ্গে সম্পৃক্ত, তাদের বিরুদ্ধে আমরা। এই ক্ষুদ্র গোষ্ঠীর যৌন নির্যাতনকে রুখে দিতে চাই, সমাজ থেকে বিতাড়িত করতে চাই। আমরা সকলে মিলে যদি এই যৌন নিপীড়কদের বিরুদ্ধে দাঁড়াই, তাহলে দেখবেন আগামীতে এই পৃথিবী বাসযোগ্য হবে।’
সংবাদকর্মী নাদিয়া শারমিন বলেন, ‘বাংলাদেশে এখন মেয়েরা মি টু আন্দোলনে মুখ খুলতে শুরু করেছে। আমরা মনে করি এর পাশাপাশি ছেলেদের মুখ খোলা উচিত। কারণ, #মি টুর শিকার শুধু নারীরা নন, পুরুষরাও।’
বাংলাদেশে #মি টু আন্দোলনের জেরে মুখ খোলা নয়জন নারীর একজন মুসফিকা লাইজু। তিনি মানববন্ধনে বলেন, ‘৩১ বছর পর আমি আমার কথা বলতে পেরেছি। কে আমার পক্ষে লিখলো বা লিখলো না, তা আমি ভাবিনি। এই মাঝ বয়সে এসে আমি ভেবেছি, যদি এই কষ্টটা মনের মধ্যে চাপা রেখে মারা যাই তবে আরেকটা অন্যায় করা হবে। বেঁচে থাকতে অন্যায় প্রশ্রয় দিতে পারি না। সেজন্যই আমি #মি টুতে এসেছি।’
মানববন্ধনে আরও যোগ দেন গীতিআরা নাসরিন, সাজেদা হক, সাদিয়া নাসরিন, অপরাজিতা সঙ্গীতা, শরীফা বুলবুল, শেখ মামুনুর রশিদ, মাইনুল আলম আলম প্রমুখ।