বাজারে নেই ইনফ্লুয়েঞ্জার ভ্যাকসিন ইনফ্লুভাক্স, বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে ভেক্সিগ্রিপটেট্রা

ইনফ্লুভাক্স ও ভেক্সিগ্রিপটেট্রা ওষুধের মোড়কদেশের বাজারে সরবরাহ নেই ইনফ্লুয়েঞ্জার ভ্যাকসিন ইনফ্লুভাক্স। একই ধরনের অন্য যে ভ্যাকসিনটি বাজারে পাওয়া যাচ্ছে সেটির নাম ভেক্সিগ্রিপটেট্রা। ভ্যাকসিন ইনফ্লুভাক্স এর দাম ৭শ টাকা এবং ভেক্সিগ্রিপটেট্রা ভ্যাকসিনের মূল্য ১ হাজার ১৩৫ টাকা। এই অবস্থায় ভ্যাকসিনটি কিনতে গিয়ে হয়রানির শিকার হচ্ছেন রোগী। তবে সিনিয়র চিকিৎসকেরা বলছেন, এই ভ্যাকসিনটি বয়স্কদের জন্য সহজপ্রাপ্য ও সাশ্রয়ী করা উচিত।
কল্যাণপুরের বাসিন্দা মো. সুমন প্রামাণিক বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, আমার দাদুর জন্য গত বছর এই ভ্যাকসিন দেন ঢাকা মেডিক্যালের রেসপিরেটরি মেডিসিন বিভাগের চিকিৎসক। তখন ভ্যাকসিনটি বিভিন্ন দোকানে খুঁজেও পাওয়া যায়নি। পরে বাধ্য হয়ে প্রায় দ্বিগুণ দাম দিয়ে অন্য একটি ভ্যাকসিন কিনেছি। একই অবস্থা আরেক রোগী আব্দুল হান্নানেরও। ঢাকা মেডিক্যালের রেসপিরেটরি মেডিসিন বিভাগের চিকিৎসকের দেওয়া এই ভ্যাকসিন সম্পর্কে তিনি বলেন, এই ভ্যাকসিনের দাম এখন হঠাৎ করে বেড়ে যাওয়ায় বিপদে পড়েছি।
শুধু রাজধানী ঢাকায় নয়, সারাদেশেই একই অবস্থা। রাজধানীর বিভিন্ন ফার্মেসির দোকানে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ভ্যাকসিনটির সরবরাহ এখন বন্ধ করেছে কোম্পানি। ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগের গেটের দুইপাশের ফার্মেসিগুলোতে এই ভ্যাকসিন নেই বলে জানান বিক্রেতারা।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) নিচে অবস্থিত ভিআইপি ড্রাগ হাউসের একজন বিক্রেতা বলেন, এখন সরবরাহ নাই তাই ভ্যাকসিনটি দোকানে নাই। ভাই ভাই ফার্মেসির একজন বিক্রেতা জানান, গত দুই তিন মাস ধরে এই ভ্যাকসিনটির সরবরাহ বন্ধ আছে। তবে আগামী জানুয়ারি মাসে ভ্যাকসিনটি সরবরাহের কথা রয়েছে।
জানা যায়, ভেক্সিগ্রিপটেট্রা ভ্যাকসিনটির গায়ে দাম লেখা রয়েছে ১ হাজার ১৩৫ টাকা। কিন্তু এটি কোনও দোকানে ১৪শ, কোথাও ১২শ আবার কেউবা ১১শ টাকায় বিক্রি করছেন। লাজ ফার্মা লিমিটেডের ম্যানেজার মো. আনোয়ার হোসেন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ইনফ্লুভেক্স ভ্যাকসিনটির বাজারে সরবরাহ নেই। এখন ভেক্সিগ্রিপটেট্রা এই ভ্যাকসিনটি পাওয়া যাচ্ছে।
শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক অধ্যাপক ডা. উত্তম কুমার বড়ুয়া বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, আমরা সব বয়স্ক মানুষকে ভ্যাকসিন দেওয়ার জন্য বলি না। ফার্মেসিতে যদি ভ্যাকসিন সরবারহ না থাকে তবে যেটি আছে সেটিই দিতে হবে। তবে আমরা সাধারণত শ্বাসকষ্টের রোগীদের দুই ধরনের ভ্যাকসিন দেই। যাদের শ্বাসকষ্ট থাকে তাদের ফুসফুসটা দুর্বল হয়ে যায়। ইমিউনিটি পাওয়ার (রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা) কমে যায় এ কারণে তাদের ভ্যাকসিন দিতে হয়। মার্কেটে দুই ধরনের ভ্যাকসিন পাওয়া যায়। একটা নিউমোনিয়ার জন্য নিউমোকক্কাল এবং ইনফ্লুয়েঞ্জার ভ্যাকসিন। নিউমোকক্কাল ভ্যাকসিনটা যখন কেউ হজে যান তখন তাকে দেই। অন্য ভ্যাকসিনটি শ্বাসকষ্টের রোগীদের দিতে বলি।
বাজারে সরবরাহের বিষয়ে ভ্যাকসিন সংশ্লিষ্ট ঔষধ প্রশাসন অধিদফতরের এক কর্মকর্তা বাংলা ট্রিবিউনকে নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ইনফ্লুভাক্স ভ্যাকসিনটি তো ইনসেপটা কোম্পানির ইনফ্লুয়েঞ্জার ভ্যাকসিন। এটি তো বাজারে আজকালের মধ্যে চলে আসার কথা। তিনি বলেন, ইনফ্লুয়েঞ্জার ভ্যাকসিন নিয়ে একটা সমস্যা হচ্ছে, প্রতিবছর বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (হু) এই ভাইরাসটার পরিবর্তনশীলতা নিয়ে কাজ করে। প্রতিবছর হু এই ভ্যাকসিনের একটা বা দুইটা উপাদান পরিবর্তন করে। এটার যে পরিবর্তনশীল ভাইরাস সেটা পরিবর্তন করে বিক্রি করে। এবার সম্ভবত হু’র এটি দিতে দেরি হয়েছে।
হু’র তালিকা অনুযায়ী, পুরো পৃথিবীকে দুটো অঞ্চলে ভাগ করা আছে। এই দুই অঞ্চলে আলাদাভাবে ভ্যাকসিনের উপাদানগুলো পরিবর্তন হয়। ভ্যাকসিনটি বাজারে এখন না থাকার এটা একটা কারণ হতে পারে। ভ্যাকসিনগুলো বাজারে যাওয়ার আগে আমাদের কাছ থেকে অনুমতি নিতে হয়। আমরা অনুমতি না দিলে তারা ভ্যাকসিন তৈরি বা বিক্রি করতে পারে না। সারা পৃথিবীতেই এই ব্যবস্থা।
বেশি দামে ভ্যাকসিন বিক্রি করা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, দাম পরিবর্তন করাটা খুবই খারাপ কথা। অনেক সময় কোনও দরকারি জিনিস বাজারে কম থাকলে তার দাম বাড়ে। কিন্তু ওষুধের ক্ষেত্রে আমরা এটা কোনও সময় গ্রহণ করি না। যেটা দাম থাকে সেই দামেই বিক্রি করতে হয়। কিন্তু এই ঘটনা সবসময় ঘটে না।
ভ্যাসকিন বাজারে সরবরাহ থাকা উচিত উল্লেখ করে বাংলাদেশ হেলথ রাইটস মুভমেন্টের প্রেসিডেন্ট ডা. রশীদ-ই-মাহবুব বলেন, ইনসেপ্টা কোম্পানি সম্ভবত একটি ভ্যাকসিন তৈরি করে। বেশির ভাগ ভ্যাকসিনই বাইরে থেকে আনতে হয়। ৬০ বছর বয়সের বেশি যারা শুধু তারাই এই ভ্যাকসিনটা নেয়। এই ভ্যাকসিনটা সিনিয়র সিটিজেনের জন্য সহজপ্রাপ্ত করা উচিত। আমরা আশা করি, এটার যে সঠিক মূল্য সেই দামে বিক্রি করলে জনবান্ধব চিকিৎসা ব্যবস্থা নিশ্চিত হয়।
এ বিষয়ে স্বাস্থ্য অধিদফতরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক এ এইচ এম এনায়েত হোসেন বলেন, ওষুধ এবং ভ্যাকসিনের বিষয়টি ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর তদারকি করে থাকে।