‘পুলিশ ভাই আমার সন্তানদের এতিম হওয়া থেকে বাঁচাইছেন’

মিজানুর রহমান ভুইয়া‘আমার স্বামী তার মেডিক্যাল চেকআপ করাতে ঢাকায় এসেছিলেন। সায়েদাবাদ থেকে বাড্ডায় যাওয়ার সময় তাকে অজ্ঞান করে টাকা-পয়সা ও মোবাইলফোন নিয়ে গেছে। বাস থেকে নামিয়ে তাকে সড়কের পাশে ফেলে রাখা হয়। একজন পুলিশ ভাই আমার স্বামীকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করেন। তিনি আমার স্বামীকে বাঁচাইছেন। আমার সন্তানদের এতিম হওয়া থেকে বাঁচাইছেন। আমি ওই পুলিশ সদস্যকে ধন্যবাদ জানাই।’

বুধবার (১৬ জানুয়ারি) সন্ধ্যায় বাংলা ট্রিবিউনকে এসব কথা জানান অজ্ঞানপার্টির খপ্পরে পড়া মিজানুর রহমান ভুইয়ার (৩৫) স্ত্রী সানজিদা খানম। পুলিশের মাধ্যমে স্বামীর খবর শুনে কুমিল্লার মুরাদনগর থেকে রাজধানীর কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে ছুটে আসেন তিনি।

সানজিদা খানম জানান, মিজানুর রহমান ভুঁইয়া সৌদি আরব যাবেন। তাই মেডিক্যাল চেকআপ করাতে মঙ্গলবার (১৫ জানুয়ারি) কুমিল্লা থেকে ঢাকায় আসেন। সায়েদাবাদ বাসস্ট্যান্ড নেমে বাড্ডা যাওয়ার জন্য তুরাগ পরিবহনের একটি বাসে ওঠেন। আর ওই বাসের ভেতরেই ঘটে বিপত্তি। অজ্ঞানপার্টির খপ্পরে পড়ে লুট হয় সঙ্গে থাকা টাকা-পয়সা ও দুটি মোবাইল ফোন। এরপর অচেতন অবস্থায় তাকে সড়কের পাশে ফেলে রাখা হয়। মঙ্গলবার বিকালে ৪টার দিকে রাজধানীর নর্দ্দা বাসস্ট্যান্ড এলাকার প্রগতি সরণি সড়কের পাশ থেকে অচেতন অবস্থায় তাকে উদ্ধার করে গুলশান থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) মো. নুরুজ্জামান। এরপর তাকে রাজধানীর কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। বর্তমানে তিনি সেখানে চিকিৎসাধীন।

সানজিদা খানম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘দীর্ঘ ১৬ বছর যাবৎ আমার স্বামী সৌদি আরবের ছিলেন। সেখানে তার আকামা না হওয়াতে গত বছরের জুলাইতে তিনি দেশে ফিরে আসেন। আবারও তিনি সৌদি আরব যাওয়ার জন্য নতুন করে প্রোসেসিং শুরু করেন। সেই কাজেই কুমিল্লা থেকে ঢাকায় মেডিক্যাল চেকআপ করাতে এসেছিলেন।’

সানজিদা খানম বলেন, ‘মঙ্গলবার সকাল ১০টার দিকে আমার স্বামী (মিজানুর রহমান) বাসা থেকে বের হন। কুমিল্লা থেকে বাসে করে ঢাকার সায়দাবাদ আসেন। তারপর আমার সঙ্গে একবার মোবাইল ফোনে কথা হয়। সেখানে নেমে বাড্ডা যাওয়ার জন্য তুরাগ পরিবহন নামে একটি বাসে উঠেছিলেন বলে জানতে পারি। বাড্ডা গিয়ে ফোন দেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু দুপুরের পর থেকে তার (স্বামী) ফোন বন্ধ পাচ্ছিলাম। সন্ধ্যার কিছুক্ষণ পর কুমিল্লার মুরাদনগর থানার পুলিশ আমার বাসায় আসে। এসময় তাদের কাছ থেকে জানতে পারি, যে আমার স্বামী অচেতন অবস্থায় সড়কে পড়ে ছিল। তিনি হাসপাতালে ভর্তি আছেন।’

জানতে চাইলে গুলশান থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) মো. নুরুজ্জামান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আমি নর্দ্দা এলাকায় দায়িত্বরত ছিলাম। বিকাল ৪টার দিকে থানার মাধ্যমে খবর পাই যে প্রগতি সরণিতে কি ঝামেলা হচ্ছে। এরপর আমি দ্রুত নর্দ্দা বাসস্ট্যান্ডে গেলে দেখতে পাই একজন লোক সড়কের পাশে পড়ে আছেন এবং পথচারীরা তাকে ঘিরে দাঁড়িয়ে আছেন। সেখানে প্রথমেই ওই ব্যক্তির শ্বাস-প্রশ্বাস চেক করি এবং সচল থাকতে দেখি। তাকে দ্রুত কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যাই। সেখানে ভর্তি করা হয়। তখনও তিনি অচেতন ছিলেন। তবে ভাঙা-ভাঙাভাবে কথা বলছিলেন। পরে তার পকেটে দুটি পাসপোর্ট পাওয়া যায়। সেখানে তার নাম ঠিকানা দেখে আমাদের অফিসার ইনচার্জ আবু বকর সিদ্দিকী স্যারকে অবহিত করি। তিনি কুমিল্লার মুরাদনগর থানায় বিষয়টি জানান, তারা পরিবারের কাছে খবরটি পৌঁছায়।’

তবে, এ বিষয়ে ভুক্তভোগীর পরিবারের পক্ষ থেকে এখনও কোনও অভিযোগ করা হয়নি বলে এসআই মো. নুরুজ্জামান বাংলা ট্রিবিউনকে জানান।

মিজানুর রহমান ভুঁইয়া কুমিল্লার মুরাদনগর থানার পরমতলা গ্রামের আব্দুল সামাদ ভুঁইয়ার ছেলে। পরমতলা গ্রামের নিজ বাড়িতে তিন মেয়ে ও এক সন্তানসহ তার স্ত্রী সানজিদা থাকেন। সৌদিআরব থেকে ২০১৮ সালের জুলাই মাসে তিনি দেশে ফেরেন।