ই-রেজিস্ট্রেশনের আওতায় আসছে ডায়াবেটিক রোগীরা, কমবে ভোগান্তি



ডায়াবেটিস পরীক্ষা (ইন্টারনেট থেকে সংগৃহীত ছবি)দেশের সব ডায়াবেটিক রোগীকে নিবন্ধনের আওতায় আনা হচ্ছে। এই ‘ইলেকট্রনিক রেজিস্ট্রেশন ফর ডায়াবেটিক পেসেন্ট’ (বিএনডিআর) শেষ হলে রোগীকে আর প্রেসক্রিপশন ও ফাইলপত্র নিয়ে ঘুরতে হবে না। চিকিৎসকও একসঙ্গে পেয়ে যাবেন রোগীর সব তথ্য। এতে চিকিৎসা সেবা ত্বরান্বিত হবে, কমবে ভোগান্তি। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বিষয়টি রোগী ও চিকিৎসক উভয়ের জন্যই উপকারী হবে।
ইন্টারন্যাশনাল ডায়াবেটিস ফাউন্ডেশনের হিসাব বলছে, বাংলাদেশে ডায়াবেটিসে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা প্রায় ৭০ লাখ। বলা হচ্ছে, বাংলাদেশের মানুষের খাদ্যাভাস ও জীবনাচরণ ডায়াবেটিক তৈরি করে। এখানকার বেশির ভাগ মানুষই তিন বেলা ভাত খায়। ফাস্টফুড পছন্দ করে। খেলাধুলা বা হাঁটার অভ্যাস কম। পরিবেশও নেই। এর প্রভাব স্বাভাবিকভাবেই পড়ছে।
ন্যাশনাল হেলথ কেয়ার নেটওয়ার্ক সূত্র জানায়, ২০১৬ সালের এপ্রিলে এই উদ্যোগ নেওয়া হয়। এরপর শুরু হয় সফ্টওয়্যার ডেভেলপমেন্ট। ২০১৮ সালে অক্টোবরে পাইলট প্রকল্পের আওতায় ইব্রাহীম জেনারেল হাসপাতাল, মীরপুর-এর রোগীদের ডাটা এন্ট্রির কাজ শুরু হয়। এরপর গত ডিসেম্বরে রাজধানীর টেকনিক্যালে অবস্থিত বিআইএইচএস হাসপাতালের রোগীদের ডাটা এন্ট্রি করা হয়। গত ৩ জানুয়ারি থেকে শান্তিনগর এক্সিকিউটিভ সেন্টারে এই ই-রেজিস্ট্রেশন কার্যক্রম শুরু হয়েছে। ঢাকার ডায়াবেটিক সমিতির ৩২টি সেন্টারের ডাটা এন্ট্রি হতে সময় লাগবে ছয় মাস। আর সারাদেশের ১৬০টি সেন্টারের সব রোগীর ই-রেজিস্ট্রেশন পদ্ধতি শেষ হতে সময় লাগবে দুই বছর।
এই প্রোজেক্টের স্টিয়ারিং কমিটির চেয়ারম্যান হচ্ছেন প্রফেসর ফারুক পাঠান। প্রোজেক্ট চেয়ারম্যান ডা. এম এ সামাদ এবং কো-অর্ডিনেটর ডা. বিশ্বজিৎ ভৌমিক।
ন্যাশনাল হেলথ কেয়ার নেটওয়ার্কের সহকারী পরিচালক (প্রকল্প) মো. কামরুজ্জমান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আগে আমরা কেস হিস্ট্রি ফর্ম ফিলআপ করতাম, কিন্তু এটি কোনও ডিজিটাল উপায়ে সংরক্ষণ করা হতো না। এখন তার যাবতীয় তথ্য আমরা একসঙ্গে করে রাখছি। যখন সবগুলো সেন্টারে এই ডাটা এন্ট্রি শেষ হবে তখন ওই রোগীকে আমরা নিজস্ব একটা আইডি নম্বর দেবো। এটি তার রেজিস্ট্রেশন নম্বর। এটি যদি সে শেয়ার করে তখন যেকোনও চিকিৎসক তার পোর্টালে ঢুকে তার সব হিস্ট্রি জানতে পারবেন।’
তিনি বলেন, ‘আমাদের এখন ফাইল করে সবকিছু সঙ্গে নিয়ে যেতে হয়। আমাদের অনেক রোগী এই প্রেসক্রিপশনের মূল্য কী সেটা অনেকেই বোঝে না। ফলে, তারা চিকিৎসকের কাছে খালি হাতে আসে। তখন চিকিৎসকের তাকে চিকিৎসা দিতে অসুবিধা হয়।’

আরেক কর্মকর্তা বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘রোগীর রিপোর্টের তথ্য ভালো নাকি খারাপ? তার ক্রিটিনিন লেভেল আছে কত? অন্যান্য ক্ষেত্রে তার কী অবস্থা তার সবগুলোই দেখা যাবে। একটা সময় আমরা রোগীকে ছেড়ে দেবো। তখন রোগী দেশের বাইরে গেলেও চিকিৎসক এই সফটওয়্যার থেকে তথ্য নিয়ে তার চিকিৎসা করতে পারবেন।’

ডাটা এন্ট্রি প্রসঙ্গে মো. কামরুজ্জামান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন ‘ফ্রন্ট ডেস্কের ইনফরমেশন ফ্রন্ট ডেস্কই এন্ট্রি দেয়, ল্যাবরেটরির ইনফরমেশন ল্যাবরেটরি নিজেই এন্ট্রি দেয়, নিউট্রিশনিস্টের কাছে যখন রোগী যান তখন সে নিজেই এন্ট্রি দিচ্ছেন, আবার চিকিৎসক যখন রোগীকে ওষুধ দিচ্ছেন তখন সে নিজেই তথ্য এন্ট্রি দিচ্ছেন। এভাবেই চালু থাকছে এন্ট্রি কার্যক্রম। কতজন মানুষের কিডনি ড্যামেজ হচ্ছে ডায়াবেটিকের জন্য, কতজন মানুষের চোখ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে ডায়াবেটিসের জন্য, হাড়ের ক্ষয় বা হৃদরোগ হচ্ছে কতজনের— এসব তথ্যও আমরা এই ই-রেজিস্ট্রেশনের মাধ্যমে পাবো।’

তিনি বলেন, ‘সরকারের যে ডিজিটালাইজেশনের উদ্যোগ। এটিও একটি ডিজিটালাইজেশনের উদ্যোগ। আমরা চাই গ্রামীণ জনপদের প্রত্যেক ডায়াবেটিক রোগী এই ডাটা থেকে সহযোগিতা পাক। পরিবারের কারো ডায়াবেটিক আছে কিনা, গর্ভবতী কেউ ডায়াবেটিকে আক্রান্ত কিনা— এই তথ্যগুলোও আমরা রাখবো। আমাদের দেশের কোথাও মোট কতজন ডায়াবেটিক রোগী আছে তার সঠিক তথ্য নেই। সারাদেশের ৬৩টি জেলায় আমাদের এক বা একাধিক হাসপাতাল আছে। যার আইডি থাকবে উনি যদি সিলেট থেকেও চিকিৎসা চান তার ওই আইডির আওতায় এই তথ্য পেয়ে যাবেন।’

বাংলাদেশ হেলথ রাইটস মুভমেন্টের প্রেসিডেন্ট ডা. রশীদ-ই-মাহবুব বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘রোগীরা একেক সময় একেক জায়গায় চিকিৎসা নেন। এক্ষেত্রে সবসময় তাদের ফাইল সঙ্গে থাকে না। যেহেতু রোগীর সব তথ্য আমাদের কাছে থাকছে, তখন যেকোনও সময় আমাদের কল সেন্টারে যোগাযোগ করে রোগী তার প্রয়োজনীয় সহযোগিতা পাবেন।’
তিনি বলেন, ‘এখন তো স্কাইপেতে বা অনলাইন সিস্টেমে চিকিৎসা চলে গেছে। সব রোগীর এখন ঢাকায় আসার প্রয়োজন নেই। এই সুবিধা রোগীরা গ্রাম থেকেই পাবেন।’