রূপালী ব্যাংকের ‘ফামাক্যাশ’: সৌদি প্রবাসীদের টাকা যাবে স্বজনদের মোবাইল ফোনে

সৌদি আরব থেকে মোবাইল মেসেজের মাধ্যমে প্রবাসীদের টাকা বাংলাদেশের স্বজনদের কাছে পাঠানোর জন্য অনলাইন ব্যাংকিং শুরু করার কথা জানিয়েছে রূপালী ব্যাংক। এই পরিকল্পনায় নিজেদের মোবাইল থেকে ‘ফামাক্যাশ’ প্রোগ্রামের মাধ্যমে খুব সহজে প্রবাসীরা দেশে টাকা পাঠাতে পারবেন। ২৩ জানুয়ারি (বুধবার) রিয়াদের একটি হোটেলে রূপালী ব্যাংকের কর্মকর্তারা এই পরিকল্পনা তুলে ধরেন।

এসময় জানানো হয়, ‘ফামাক্যাশ’ প্রোগ্রামটি সৌদি আরবের কয়েকটি ব্যাংকের সঙ্গে যুক্ত হয়ে রূপালী ব্যাংকের মাধ্যমে দেশে প্রবাসীদের গন্তব্যস্থলে টাকা পৌঁছাবে। এজন্য খুব শিগগির সৌদি আরবে রূপালী ব্যাংকের শাখা খোলার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করেছেন তারা।

কর্মকর্তারা এই পরিকল্পনার ব্যাপারে বলেছেন, কর্মব্যস্ত বিদেশের মাটিতে বারবার ব্যাংকে না যেয়ে প্রবাসীরা ফামাক্যাশ এর মাধ্যমে যেমন ঘরে বসেই বৈধভাবে দেশে টাকা পাঠাতে পারবেন তেমনি তাদের আত্মীয়-স্বজনরা মোবাইলে মেসেজ পেয়ে নিকটস্থ এজেন্ট থেকে সহজেই টাকা তুলতে পারবেন।

ব্যাংকের কর্মকর্তারা আরও জানান, এজন্য বাংলাদেশে রূপালী ব্যাংক প্রায় ১ লাখ ২৫ হাজার এজেন্ট দিয়েছে, যার মাধ্যমে গ্রাম-গঞ্জ কিংবা শহরে প্রবাসীদের আত্মীয়রা মোবাইল মেসেজ পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে টাকা তুলে নিতে পারবেন।

প্রবাসীদের সঙ্গে রূপালী ব্যাংক কর্তৃপক্ষের এই মতবিনিময় সভায় উপস্থিত ছিলেন ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী মো. আতাউর রহমান প্রধান, ডিজিএম ও প্রধান রেমিট্যান্স কর্মকর্তা মো. ফয়েজ আলম, ‘ফামাক্যাশ’ সফ্টওয়্যার প্রোগ্রামের উদ্ভাবক ও প্রধান নির্বাহী ড. সাইফুল খন্দকার, জেনারেল ম্যানেজার শাখাওয়াত জাহান খান। সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন সৌদি আরবে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত গোলাম মসীহ্।

রিয়াদে আরব ন্যাশনাল ব্যাংকের রেমিট্যান্স শাখার কর্মকর্তা মোশাররফ হোসেনের সঞ্চালনায় সভায় সভাপতিত্ব করেন ডা. আরিফুর রহমান।

রূপালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী মো. আতাউর রহমান প্রধান জানান, রূপালী ব্যাংকের প্রত্যেকটি শাখা বর্তমানে অনলাইন করা হয়েছে। যে কারণে অন্যান্য ব্যাংক থেকে এর গ্রাহকদের টাকা লেনদেন খুবই সহজ।

রূপালী ব্যাংকে সাধারণ জনগণের শেয়ার দিন দিন বাড়ছে উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, সরকারের ঊর্ধ্বমুখী রিজার্ভে প্রবাসীদের অবদানই সবচেয়ে বেশি এবং দেশ-উন্নয়নে প্রবাসীদের রেমিট্যান্স প্রবাহ সবচেয়ে বড় ধরনের অর্থ জোগান দিচ্ছে।

রূপালী ব্যাংক-এর ‘সিওরক্যাশ’ নামে একটি প্রডাক্ট গ্রাহকদের কাছে ইতোমধ্যে চলমান আছে জানিয়ে আতাউর রহমান জানান, ‘ফামাক্যাশ’-এর সঙ্গে একটি চুক্তির মাধ্যমে এই মোবাইল ক্যাশ সার্ভিসটি চলমান থাকবে। এক্ষেত্রে প্রবাসীদের জন্য আমাদের তরফ থেকে বিশেষ সুবিধা দেওয়া হবে।

দেশে রূপালী ব্যাংকের ৫৬৯টি ব্রাঞ্চ-অফিস নিষ্ঠার সাথে কাজ করছে জানিয়ে এই ব্যাংক কর্মকর্তা আরও বলেন, ‘এছাড়া প্রবাসীদের জন্য রূপালী ব্যাংকের মাধ্যমে দেশে সহজ শর্তে বাড়ি তৈরিতে লোন, শিক্ষাসহায়তা উদ্যোগ, প্রবাসীদের সন্তানদের বিদেশে লেখাপড়ার ক্ষেত্রে ডলার অ্যাকাউন্ট, বিভিন্ন মেয়াদে লাখপতি-কোটিপতি স্কিম, প্রবাসীদের ব্যবসাসংক্রান্ত অর্থসহযোগিতা, বিভিন্ন মাত্রার ইনসেনটিভ সুবিধার ব্যবস্থা রয়েছে।’

‘ফামাক্যাশ’ সফ্টওয়্যারের উদ্ভাবক ও প্রধান নির্বাহী ড. সাইফুল খন্দকার বলেন, ‘ভারতবর্ষের বিভিন্ন ট্যালেন্টরা বর্তমানে মানি ট্রান্সফার নিয়ে ব্যাপক কাজ করে চলছেন। তাদের অবদানেই ফার্স্ট ওয়ার্ল্ডে দ্রুত এগুচ্ছে সফ্টওয়্যারভিত্তিক বিভিন্ন প্রোডাক্ট তৈরিতে। অথচ বিপুল সংখ্যক প্রতিভাবান তরুণ থাকা সত্ত্বেও বাংলাদেশ পিছিয়ে আছে। তবে সুখের কথা হচ্ছে, খুব শিগগির আমরা এগিয়ে যাবো।’

তিনি আরও জানান, ‘ফামাক্যাশ’ আমেরিকায় দিন দিন জনপ্রিয় হচ্ছে। অনেক বাংলাদেশি ট্যালেন্ট এই প্রফেশনে কাজ করছেন। বাংলাদেশিদের দ্বারা চলমান এই প্রোডাক্টটি শিগগির ফার্স্ট ওয়ার্ল্ডের অনেক দেশে ব্যবহার হবে।

এসময় রাষ্ট্রদূত গোলাম মসিহ্ রূপালী ব্যাংকের ‘ফামাক্যাশ’ অনলাইন সার্ভিস চালুর ক্ষেত্রে সহযোগিতা করার আশ্বাস দেন। এসময় তিনি প্রবাসীদের বৈধপথে ব্যাংকের মাধ্যমে দেশে টাকা পাঠানোর পরামর্শ দেন।

ডা. আরিফুর রহমান রূপালী ব্যাংকের অনলাইনে দেশে টাকা পাঠানোর বিষয়টিকে স্বাগত জানিয়ে প্রবাসীদের পক্ষ থেকে সার্বিক সহযোগিতা দেওয়ার কথা জানিয়েছেন।