ব্রিটিশ পার্লামেন্টে সম্প্রতি অনুষ্ঠিত এক বিতর্কিত ভোটাভুটিতে ২৪ সপ্তাহের পর গর্ভপাতকে অপরাধমুক্ত করার একটি সংশোধনী বিল নিয়ে ব্রিটিশ মুসলিম ও বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত এমপিদের মধ্যে স্পষ্ট মতভেদ দেখা গেছে। এ মতপার্থক্য মূলত তাদের ব্যক্তিগত বিশ্বাস এবং সাংবিধানিক দায়িত্ব পালনের মধ্যকার সূক্ষ্ম দ্বন্দ্বকে সামনে নিয়ে এসেছে— বিশেষত যখন সংশোধনীটি ইসলামী মূল্যবোধের সঙ্গে সাংঘর্ষিক বলে বিবেচিত হয়।
ইসলামী শরিয়ত গর্ভপাতের বিষয়ে সাধারণত একটি কঠোর অবস্থান নেয়। ইসলামী আইন অনুযায়ী, গর্ভধারণের ১২০ দিন বা প্রায় ১৭ সপ্তাহ পার হলে গর্ভপাত স্পষ্টভাবে নিষিদ্ধ। সেই প্রেক্ষাপটে ২৪ সপ্তাহের পরও গর্ভপাতকে বৈধ করার এই সংশোধনী ইসলামী দৃষ্টিকোণে একটি বড় চ্যালেঞ্জ তৈরি করে। ধর্মীয় এই সাধারণ অবস্থান সত্ত্বেও ব্রিটেনের মুসলিম, বিশেষ করে বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত সংসদ সদস্যদের মধ্যে এ বিষয়ে অবস্থান একরকম ছিল না, যা একটি ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্রে সংসদীয় প্রতিনিধিদের বিশ্বাস এবং দায়িত্বের মধ্যে ভারসাম্য রক্ষার জটিলতা তুলে ধরে।
গর্ভপাত আইন সংশ্লিষ্ট সাম্প্রতিক বছরগুলোর গুরুত্বপূর্ণ ভোটে ব্রিটিশ মুসলিম এমপিদের অবস্থান ছিল ভিন্নতর। লেবার পার্টির আফসানা বেগম, রূপা হক, টিউলিপ সিদ্দিক, জারা সুলতানা এবং নওশাবাহ খান সাধারণত গর্ভপাত বৈধকরণের পক্ষে ভোট দিয়েছেন। তাদের এই অবস্থান নারীর অধিকার এবং চিকিৎসা-সংক্রান্ত স্বাধীনতার পক্ষে এক ধরনের নীতিগত সমর্থন হিসেবে বিবেচিত হয়েছে। এর বিপরীতে, লেবার পার্টিরই রুশনারা আলী এবং মোহাম্মদ ইয়াসিন, কনজারভেটিভ দলের সাকিব ভাট্টি, আর স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য আদনান হুসাইন, আইয়ুব খান ও ইকবাল মোহাম্মদ সংশোধনীটির বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছেন। তারা মূলত ধর্মীয় মূল্যবোধ ও নৈতিক উদ্বেগকে গুরুত্ব দিয়েছেন।
‘সহায়ক মৃত্যু’র বিষয়ও আলোচনায়
যদিও সংশোধনীটি ছিল গর্ভপাত সংক্রান্ত, তবে এ প্রসঙ্গে সহায়ক মৃত্যু বা চিকিৎসকের সহায়তায় আত্মহত্যার মতো ইস্যুগুলোও উঠে এসেছে আলোচনায়। ইসলামি শিক্ষায় আত্মহত্যা এবং সক্রিয় ইউথানাসিয়া স্পষ্টভাবে নিষিদ্ধ। জীবনকে সেখানে ঈশ্বরপ্রদত্ত পবিত্র উপহার হিসেবে বিবেচনা করা হয়, যার ইচ্ছাকৃত সমাপ্তির অধিকার কেবল সৃষ্টিকর্তার রয়েছে। সে কারণে ভবিষ্যতে যদি সহায়ক মৃত্যুর বিষয়ে কোনো বিল সংসদে ওঠে, তবে মুসলিম এমপিদের মধ্যে অনেক বেশি ঐক্য দেখা যেতে পারে।
সব মিলিয়ে গর্ভপাত বিল সংশোধনী নিয়ে ব্রিটিশ মুসলিম ও বাঙালি এমপিদের বিভিন্নমুখী অবস্থান এই সত্যকে সামনে আনে যে ‘মুসলিম’ কিংবা ‘বাংলাদেশি’ পরিচয়ে সবাই একমত নন। বরং জনপ্রতিনিধিদের অবস্থান নির্ধারিত হয় ব্যক্তিগত বিশ্বাস, ধর্মীয় মূল্যবোধ এবং সাংবিধানিক দায়িত্বের জটিল সমন্বয়ের ওপর। এটি একটি গণতান্ত্রিক ও ধর্মনিরপেক্ষ ব্যবস্থায় মতবিভেদ থাকা যে স্বাভাবিক— সেটিই স্পষ্ট করে।
