২১-২৭ এপ্রিল নারী ও শিশু অধিকার সংরক্ষণ সপ্তাহ পালনের ঘোষণা

আসাদ গেট এলাকায় উদীচী শিল্পীগোষ্ঠীর মানববন্ধননুসরাত জাহান রাফি হত্যার বিচার এবং নারী ও শিশু নির্যাতন বন্ধের দাবিতে আগামী ২১ থেকে ২৭ এপ্রিল নারী ও শিশু অধিকার সংরক্ষণ ও নির্যাতন বিরোধী সপ্তাহ পালনের ঘোষণা দিয়েছে বাংলাদেশ কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি)। শনিবার (১৩ এপ্রিল) সকালে রাজধানীর আসাদ গেট এলাকায় ‘বঙ্গভবন থেকে গণভবন’ শীর্ষক মানববন্ধন থেকে এ ঘোষণা দেন সিপিবি’র ঢাকা মহানগর সভাপতি মাজেদুল হক রুবেল।

মাজেদুল হক রুবেল বলেন, ‘দেশের সব শ্রেণি পেশার মানুষ, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, পেশাজীবী সংগঠন ও রাজনৈতিক সংগঠনকে ২১ থেকে ২৭ এপ্রিল পর্যন্ত নারী ও শিশু অধিকার সংরক্ষণ ও নির্যাতন বিরোধী সপ্তাহ পালনের আহ্বান জানাচ্ছি। সপ্তাহজুড়ে মানববন্ধন, বিক্ষোভ, আলোচনা ও প্রতিবাদ কর্মসূচি চলবে।’

বাংলাদেশ কমিউনিস্ট পার্টির এই নেতা বলেন, ‘যারা ধর্ষকদের স্বার্থ রক্ষা করতে চায় তাদেরও বিচারের আওতায় আনতে হবে। এরা সবাই অপরাধী। এদের বলয় ভেঙে দিতে হবে।’

বঙ্গভবন এলাকায় সিপিবি সভাপতি মোজাহেদুল ইসলাম সেলিম বলেন, ‘অপরাধীদের বিচার না হওয়ায় এই হত্যাকাণ্ড। অপরাধীরা জানে, সরকারি দলে থাকলে বিচার হয় না। শাসক দল এর সঙ্গে জড়িত। অপরাধীরা যখন যে দল ক্ষমতায় আসে, তাদের ছত্রছায়ায় অপরাধ করে। বর্তমান সরকার নির্বাচনের আগের দিন ভোট দিয়ে ক্ষমতায় এসেছে। যারা এই কাজে সহায়তা করেছে তাদের পুরস্কার আবাধে লুটপাট, হত্যা, ধর্ষণ।’

ধর্ষণ প্রতিরোধে মানববন্ধনমহিলা আইনজীবী সমিতি মানববন্ধনে সংহতি জানায়। সমিতির সদস্য ব্যারিস্টার নিশাত মাহমুদ তার বক্তব্যে বলেন, ‘সমাজকে সংঘবদ্ধ হয়ে প্রতিবাদ করতে হবে। সংঘবদ্ধ হওয়ার কোনও বিকল্প নেই।’

এ সময় সমাজকর্মী মাসুদা আলম বলেন, ‘আজ থেকে ৩০ বছর আগে আমাদের শিক্ষা জীবনে, মেয়ে বন্ধুদের পাশাপাশি ছেলে বন্ধুরাও আস্থাভাজন ছিল। কিন্তু আজকে দেখলাম, মেয়েরা তাদের মেয়ে সহপাঠীর শত্রু। নুসরাতকে তার বান্ধবী ডেকে নিয়েছিল। নারীদের আরও সংঘবদ্ধ হতে হবে।’

আনন্দদ্যুতি খেলাঘর আসরের সভাপতি লাবনী শবনম মুক্তি বলেন, ‘নুসরাতের মুখে আমার মেয়ের মুখ দেখতে পাই। দেশে বিচারহীনতার সংস্কৃতির কারণে আজ এমন পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। আমরা নুসরাত হত্যার বিচার না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাবো।

মানববন্ধনে ছিল— বাংলাদেশ কমিুনিস্ট পার্টি (সিপিবি) কাফরুল থানা; বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন, কাফরুল থানা; বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন, মোহাম্মদপুর আদাবর থানা, বাংলাদেশ নারী প্রগতি সংঘ; বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী, মোহাম্মদপুর শাখা; ঘাসফড়িং খেলাঘর আসর; ইঞ্জিনিয়ার্স অ্যান্ড আর্কিটেক্টস ফর এনভায়রনমেন্ট অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট ও আনন্দদ্যুতি খেলাঘর আসর।

যুব ইউনিয়নের মানববন্ধনএদিকে, রাজধানীর কাঁটাবনে মানববন্ধনের আয়োজন করে বাংলাদেশে যুব ইউনিয়ন। এ সময় বক্তরা বলেন, ‘দেশের চলমান আইনে ধর্ষকের দ্রুততম সময়ে কঠোর বিচার করা সম্ভব নয়। তাই নতুন আইন করে এর বিচার করতে হবে। ধর্ষণের শাস্তি মৃত্যুদণ্ড রেখে আইন করে তা দ্রুত কার্যকরের ব্যবস্থা করতে হবে।’

শাহবাগে মানববন্ধনের আয়োজন করে ছাত্র ইউনিয়ন, স্ত্রীরোগ ও ধাত্রীবিদ্যা বিশেষজ্ঞ সমিতি। মানববন্ধনের বক্তরা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে উদ্দেশ করে বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী, আর কতো মেয়ে ধর্ষণ হলে বলা যাবে এটা শেষ ধর্ষণ। আমরা আর কোনও ধর্ষণ দেখতে চায় না।’ এ সময় নুসরাতসহ অন্যদের ধর্ষণকারী ও হত্যাকারীর দ্রুত বিচার চান তারা।’

শাহবাগে মানববন্ধনের সময় নুসরাত হত্যায় অভিযুক্ত মাদ্রাসার অধ্যক্ষ সিরাজ উদ দৌলাকে রাস্তায় জনসম্মুখে পাথর নিক্ষেপ করে হত্যার দাবি জানান প্রতিবাদকারীরা।