ঈদ কবে হবে তা নির্ভর করে চাঁদ দেখার ওপর। এ কারণে দেশে ধর্ম মন্ত্রণালয়ের অধীনে একটি জাতীয় চাঁদ দেখা কমিটি আছে। এই কমিটি একটি নীতিমালা অনুসরণ করে চাঁদ দেখার কাজ সম্পন্ন করে।
চাঁদ দেখার ওপর নির্ভর করে মুসলমানদের হিজরি বর্ষপঞ্জি গণনা। এ কারণে এতে মাস হয় ২৯ বা ৩০ দিনের। মাসের ২৯ দিনে চাঁদ দেখা গেলে মাসটি শেষ হয়ে যায়। আর ২৯ দিনে চাঁদ দেখা না গেলে মাসটি ৩০ দিন পূর্ণ করবে। পৃথিবীজুড়ে মুসলমানরা হিজরি বর্ষপঞ্জি অনুসারে ধর্মীয় দিবস ও উৎসব উদযাপন করেন।
রমজান মাস শেষে শাওয়াল মাসের ১ তারিখে ঈদুল ফিতর উদযাপন করা হয়। ফলে রমজান মাস শেষে শাওয়াল মাসের চাঁদ দেখার ওপর নির্ভর করে ঈদুল ফিতরের দিন।
সংশ্লিষ্টরা জানান, জাতীয় চাঁদ দেখা কমিটি একটি নীতমালা অনুসরণ করে চাঁদ দেখে হিজরি বর্ষপঞ্জির বিভিন্ন মাসের তারিখ ঘোষণা করে থাকে। বাংলা ট্রিবিউনকে এ নীতিমালার বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরেন জাতীয় চাঁদ দেখা কমিটি সদস্য কাজী নজরুল ইসলাম। তিনি ইসলামিক ফাউন্ডেশনের সচিব ও ভারপ্রাপ্ত মহাপরিচালকও।
কাজী নজরুল ইসলাম বলেন, ‘জেলা চাঁদ দেখা কমিটিগুলো নিজ নিজ জেলায় চাঁদ দেখার তথ্য সংগ্রহ ও বিশ্লেষণ করে। ৬৪টি জেলার তথ্য জাতীয় চাঁদ দেখা কমিটির কাছে আসে। সেই তথ্যের ভিত্তিতে বিশ্লেষণ করে চাঁদ দেখার তথ্য ঘোষণা করা হয়। দেশের ৪৩ জেলায় আবহাওয়া অধিদফতরের আধুনিক যন্ত্রপাতি রয়েছে। এসব যন্ত্রপাতির মাধ্যমে হালকা মেঘে চাঁদ ওঠার তথ্য পাওয়া যায়।’
তিনি বলেন, ‘নিজ এলাকায় গ্রহণযোগ্য ব্যক্তি যদি চাঁদ দেখার তথ্য জানান এবং সে তথ্যে দুজন সাক্ষী দেন তবে সেই তথ্য গ্রহণ করা হয়। জাতীয় চাঁদ দেখা কমিটিতে দেশের খ্যাতনামা আলেমরাও উপস্থিত থাকেন, তাদের মতামতও নেওয়া হয়।’
চাঁদ দেখার ধর্মীয় বিধান প্রসঙ্গে বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের সিনিয়র পেশ ইমাম হাফেজ মাওলানা মুহাম্মদ মিজানুর রহমান বলেন, ‘ধর্মীয় বিধান হচ্ছ একটি দেশের সীমানার মধ্যে কমপক্ষে ২ জন দীনদার, গ্রহণযোগ্য মানুষ চাঁদ দেখার তথ্য দিলে সেটি গ্রহণ করা যাবে। তবে অবশ্যই কাউকে না কাউকে নিজ চোখে চাঁদ দেখতে হবে।’
মাওলানা মুহাম্মদ মিজানুর রহমান নিজেও জাতীয় চাঁদ দেখা কমিটির সদস্য। তিনি বলেন, ‘এখন পর্যন্ত দেশের আলেমরা একমত যে, কমপক্ষে ২ জন ব্যক্তি লাগবে, যারা নিজ চোখে চাঁদ দেখেছেন।’
জাতীয় চাঁদ দেখা কমিটিতে আছেন বাংলাদেশ মহাকাশ গবেষণা ও দূর অনুধাবন প্রতিষ্ঠানের মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা এসএম মিজানুর রহমান। তিনি বলেন, ‘চাঁদ কখন উঠবে, কত সময় আকাশে থাকবে—এসব তথ্য আমরা জাতীয় চাঁদ দেখা কমিটিকে দিয়ে থাকে। কমিটি সে তথ্যসহ ধর্মীয় বিধান অনুসারে সিদ্ধান্ত দেয়। জ্যোতির্বিদ্যা অনুসারে আগে থেকে এসব তথ্য দেওয়া সম্ভব।’
উদাহরণ হিসেবে তিনি বলেন, ‘এবার আমরা বলেছিলাম ৪ মে বাংলাদেশের আকাশে বিকালে ৫টা ৫১ মিনিটে চাঁদ উঠবে। ৪৫ মিনিট স্থায়ী হয়ে ৭টা ৪১ মিনিট পর্যন্ত দৃশ্যমান হবে। একই সঙ্গে বাংলাদেশের কোন কোন এলাকা মেঘমুক্ত থাকবে, কোথায় চাঁদ দেখা যাওয়ার সম্ভাবনা থাকবে সেসব তথ্যও চাঁদ দেখা কমিটিকে জানাই। কিন্তু যেহেতু ধর্মীয় বিধান দুজন মানুষকে দেখতে হবে, তাই কেউ না দেখা পর্যন্ত চাঁদ দেখার ঘোষণা দেওয়া হয় না।’
বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে চাঁদ দেখায় বাধা আছে কিনা, জানতে চাইলে বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের সিনিয়র পেশ ইমাম হাফেজ মাওলানা মুহাম্মদ মিজানুর রহমান বলেন, ‘এখন পর্যন্ত দেশের আলেমরা দুজন ব্যক্তি চাঁদ দেখার সিদ্ধান্তে একমত রয়েছেন। বৈজ্ঞানিক প্রক্রিয়ায় চাঁদ দেখার তথ্য পাওয়া পর দুজন ব্যক্তি নিজ চোখ দেখলে সে তথ্য গ্রহণ করা যাবে। তবে কখনও যদি আলেমরা একমত হয়ে ফতোয়া দেন, বৈজ্ঞানিক প্রক্রিয়ায় চাঁদ দেখা যাবে, তখন সেটিও কার্যকর হতে পারে।’
প্রসঙ্গত, শুধু ঈদ নয়, বাংলাদেশে হিজরি বর্ষপঞ্জির প্রতিটি মাসের তারিখ নির্ধারণ করে জাতীয় চাঁদ দেখা কমিটি। এ কমিটির সদস্য সংখ্যা ১১ জন। পদাধিকার বলে ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী এ কমিটির সভাপতি।
চাঁদ দেখা কমিটির ১১ সদস্য ছাড়াও বিভিন্ন সময়ের সভায় দেশের খ্যাতনামা আলেমদের আমন্ত্রণ জানানো হয়। জাতীয় চাঁদ দেখা কমিটির মতো ৬৪ জেলায়ও চাঁদ দেখা কমিটি রয়েছে। সংশ্লিষ্ট জেলার জেলা প্রশাসক ওই কমিটির সভাপতি। কমিটির সদস্য সচিবের দায়িত্ব পালন করেন সেই জেলার ইসলামিক ফাউন্ডেশনের শীর্ষ কর্মকর্তা। এছাড়া, আবহাওয়া অধিদফতরের প্রতিনিধি, ইউএনও, জেলার বড় মাদ্রাসা ও কলেজের প্রিন্সিপাল ও তিন জন আলেম এ কমিটির সদস্য হিসেবে যুক্ত হন।