পুলিশ হেফাজতে ‘কথিত বন্দুকযুদ্ধে’ ছাত্রদল নেতা মো. নুরুজ্জামান জনির মৃত্যুর ঘটনায় আওয়ামী লীগ নেতা সাবের হোসেন চৌধুরী, সাবেক ডিএমপি কমিশনার আসাদুজ্জামান মিয়াসহ ৬২ জনের বিরুদ্ধে ট্রাইব্যুনালে অভিযোগ দাখিল করা হয়েছে।
রবিবার (২৯ জুন) আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর কার্যালয়ে জনির বাবা ইয়াকুব আলী এ অভিযোগ দায়ের করেন।
জানা গেছে, ২০১৫ সালের ২০ জানুয়ারি খিলগাঁও এলাকায় পুলিশ হেফাজতে থাকা অবস্থায় কথিত বন্দুকযুদ্ধে নুরুজ্জামান জনি নিহত হন। এর প্রায় ১০ বছর পর ২০২৪ সালের ৩ সেপ্টেম্বর জনির বাবা ইয়াকুব আলীর দায়ের করা খিলগাঁও থানার মামলায় সাবের হোসেন চৌধুরীসহ ৬২ জনের নাম উল্লেখ করা হয়।
মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, ২০১৫ সালের ১৯ জানুযারি সকাল আনুমানিক ৮টা ১৫ মিনিটের দিকে নুরুজ্জামান জনি ও তার সহপাঠী মইনসহ ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে ছোট ভাই মনিরুজ্জামান হীরাকে দেখতে যান। কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে ফেরার পথে আসামিরা জনি ও মইনকে ডিবি পরিচয় দিয়ে অবৈধভাবে আটক করে অজ্ঞাত স্থানে নিয়ে নির্যাতন চালায়। পরে তাদের ডিবি ঢাকা মেট্রোপলিটন দক্ষিণ কার্যালয়ে নিয়েও নির্যাতন চালানো হয়।
তখন নুরুজ্জামান জনির সাত মাসের অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী মুনিয়া পারভিনসহ আত্মীয়স্বজনরা খিলগাঁও থানা, ডিবি দক্ষিণ অফিস, ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ অফিসসহ বিভিন্ন থানায় খোঁজ নেন। আসামিরা জনিকে আটক করেননি বলে জানান। দুদিন ধরে খোঁজাখুঁজির পরও জনির কোনও সন্ধান পাওয়া যায়নি।
এরপর ২০ জানুয়ারি রাত আনুমানিক ৩টা থেকে সাড়ে ৩টার দিকে খিলগাঁও থানার জোড়াপুকুর খেলার মাঠের আশপাশের মানুষজন চিৎকার শুনতে পান। নির্যাতিত ব্যক্তিটি ‘পানি পানি’ বলে চিৎকার ও ‘মা মা’ বলে আর্তনাদ করতে থাকেন।
ঘটনাস্থলের এলাকার পাশে সি-ব্লকের বাসিন্দা লাভলী বেগম ওই রাতের কান্নার শব্দ শুনেছেন বলে জানান। এ-ব্লকের বাসিন্দা সাইফুদ্দিনের স্ত্রী সানজিদা আক্তার সেতু জানান, রাত ৩টার দিকে ‘ও মাগো, মা, মা.. বাঁচাও’ বলে কয়েকবার চিৎকার শুনেছেন।
ভোর রাতে বাদীসহ সাক্ষী ও প্রতিবেশীরা খিলগাঁও থানার জোড়াপুকুর মাঠের দিকে গিয়ে পুলিশের উপস্থিতি দেখতে পান। আসামিরা বলেন, নুরুজ্জামান জনি পুলিশের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয়েছেন। তার মরদেহ ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হচ্ছে।
বাদী ও সাক্ষীরা ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল মর্গে যান এবং সেখানে গিয়ে দেখতে পান নুরুজ্জামানের বুকের বামে, ডান দিকে, দুই হাতের তালুতে ১৬টি গুলির চিহ্ন। তার পুরো শরীর গুলিতে ঝাঁঝরা করে ফেলেছে। শরীরের বিভিন্ন স্থানে মারাত্মক আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। উপস্থিত আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের জিজ্ঞাসা করলে তারা গালিগালাজ করেন। মরদেহ গ্রহণ না করলে মামলা দেওয়ার হুমকি দেন।