বাংলাদেশ ব্যাংকের ইতিহাস বইয়ে তথ্য গোপন: রিটকারী কাজী ইরতেজাকে তলব

সুপ্রিম কোর্ট

তথ্য গোপন করে বাংলাদেশ ব্যাংকের ইতিহাস গ্রন্থে ইতিহাস বিকৃতির অভিযোগ এনে রিট দায়ের করায় রিটকারী ড. কাজী ইরতেজা হাসানকে তলব করেছেন হাইকোর্ট। একইসঙ্গে আগামী ৩০ জুলাই তাকে সশরীরে হাজির হয়ে এ বিষয়ে ব্যাখ্যা দিতে নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।

বুধবার (১৯ জুন) বিচারপতি মো. আশফাকুল ইসলাম ও বিচারপতি মোহাম্মদ আলীর সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন।

আদালতে রিটের পক্ষে শুনানি করেন ব্যারিস্টার এ বি এম আলতাফ হোসেন। বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষে ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম ও ব্যারিস্টার আজমালুল হোসেন কিউসি। আর রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল আল আমিন সরকার।

পরে আল আমিন সরকার সাংবাদিকদের বলেন, ‘এর আগে বাংলাদেশ ব্যাংকের ইতিহাস গ্রন্থটি প্রকাশনার পরপরই এতে কতিপয় গুরুত্বপূর্ণ ব্যত্যয় পরিলক্ষিত হলে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর গ্রন্থটির বিতরণ বন্ধের নির্দেশ দেন এবং গ্রন্থটি রিভিউয়ের জন্য একজন ডেপুটি গভর্নরের নেতৃত্বে একটি রিভিউ কমিটি গঠন করেন। বাংলাদেশ ব্যাংকের নেওয়া ওইসব পদক্ষেপ গোপন করে ড.কাজী ইরতেজা হাসান রিটটি দায়ের করেন। তাই শুনানিকালে তথ্য গোপনের বিষয়টি বাংলাদেশ ব্যাংকের আইনজীবীরা তুলে ধরলে হাইকোর্ট বিষয়টির ব্যাখ্যা দিতে কাজী ইরতেজা হাসানকে তলব করেন।

প্রসঙ্গত,২০১৮ সালের ১৯ ফেব্রুয়ারি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ছবি অন্তর্ভুক্ত না করায় ইতিহাস বিকৃতি হয়েছে বলে প্রতিবেদন দাখিল করেছিল হাইকোর্টের নির্দেশে গঠিত তদন্ত কমিটি।

বইটি নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা হওয়ার পর বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে এক ব্যাখ্যায় বলা হয়— ‘বাংলাদেশ ব্যাংকের ইতিহাস’ গ্রন্থের পাণ্ডুলিপি তৈরি ও প্রকাশনার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয় ২০১৩ সালের জুন মাসে। এ বিষয়ে তখন উপদেষ্টা  ও সম্পাদনা কমিটি নামে দু’টি কমিটি গঠিত হয়। ওই দু’টি কমিটি পাণ্ডুলিপি চূড়ান্তের পর ২০১৭ সালের ডিসেম্বরে গ্রন্থটি প্রকাশিত হয়। প্রকাশনার পরপরই কতিপয় গুরুত্বপূর্ণ ব্যত্যয় ধরা পড়ে। তখন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর গ্রন্থটির বিতরণ বন্ধের নির্দেশ দেন এবং গ্রন্থটি রিভিউয়ের জন্য একজন ডেপুটি গভর্নরের নেতৃত্বে একটি রিভিউ কমিটি গঠনকরেন।

এর মধ্যে ড. কাজী এরতেজা হাসানের রিটের পর গত বছরের ২ অক্টোবর রুল জারি করে এ ঘটনা তদন্তে অর্থ সচিবকে একটি অনুসন্ধান কমিটি গঠন করতে নির্দেশ দেন হাইকোর্ট।

এ আদেশ অনুসারে অর্থ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (অর্থ বিভাগ) ড. মো. জাফর উদ্দীনকে আহ্বায়ক করে চার সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়।

কমিটির তদন্ত প্রতিবেদনের মতামত অংশে বলা হয়— ‘জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশ ব্যাংকের নামকরণ করেন। ...গ্রন্থটির দ্বিতীয় অধ্যায়ে মহান মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিবৃত রয়েছে। এ কারণে স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি হিসেবে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ছবি বাংলাদেশ ব্যাংকের ইতিহাস বইয়ে অন্তর্ভুক্ত করা অত্যাবশ্যক ছিল। ‘বঙ্গবন্ধুর ছবি খুঁজে পাওয়া যায়নি’—এ যুক্তিতে তার ছবি বইয়ে অন্তর্ভুক্ত না করার বিষয়টি অনাকাঙ্ক্ষিত ও অনভিপ্রেত। গ্রন্থটিতে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ছবি অন্তর্ভুক্ত না করায় ইতিহাস বিকৃত হয়েছে মর্মে কমিটি মনে করে।’

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়,‘গ্রন্থটিতে তদানিন্তন পকিস্তানের প্রেসিডেন্ট আইয়ুব খান এবং তদানিন্তন পূর্ব পাকিস্তানের গভর্নর মোনায়েম খানের ছবি সংযোজন না করা শ্রেয় ছিল এবং সেটি সবার ভুল মর্মে বইটির সম্পাদক স্বীকার করেন।