শিশুদের জন্য ‘কথা বলার সংস্কৃতি’ তৈরির পরামর্শ

a8e7e3b5c01c97e6b0b40851cc8a3441-5d2da829ee4f5

পরিবারের অনেক কথা বাইরে বলতে মানা করা হয় শিশুদের। আবার স্কুলের সব বিষয়ে পরিবারের সঙ্গে আলাপ করতে পারে না তারা। এর ফলে একটা বিভাজন সৃষ্টি হচ্ছে। পরিবার ও স্কুলে যে ভয়ের সংস্কৃতি আছে, তাতে খোলাসা করে কেউ কিছু বলতে চায় না। তাই কথা বলার সংস্কৃতি তৈরি করার পরামর্শ দিয়েছেন আলোচকরা।

মুন্নী সাহার সঞ্চালনায় মঙ্গলবার (১৬ জুলাই) বিকালে অনলাইন নিউজ পোর্টাল বাংলা ট্রিবিউনের আয়োজনে ‘নৈতিক অবক্ষয় ঠেকাতে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ভূমিকা’ শীর্ষক বৈঠকিতে এই পরামর্শ দেন বক্তারা। 

সুমন রহমান

বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ইউনিভার্সিটি অব লিবারেল আর্টস বাংলাদেশ (ইউল্যাব)-এর অধ্যাপক সুমন রহমান বলেন, ‘‘পরিবারের অনেক কথা বাইরে বলতে মানা করা হয়। আবার স্কুলে শিক্ষকরা বলে দেন যে, ‘এগুলা কিন্তু বাড়িতে বলতে পারবা না।’ ফলে একটা বিভাজন হয়ে যায়। আমরা যেটা করতে পারি, পলিসি লেভেলে স্কুল এবং পরিবারকে কথা বলার একটি টার্মের মধ্যে নিয়ে আসা। শিশু যদি পরিবারের কোনও বিষয় সম্পর্কে যদি জেনে থাকে কিংবা স্কুলে যদি স্টুডেন্ট অ্যাফেয়ার্স বডি করা যায়, তার সঙ্গে কথাগুলো যেনো শেয়ার করতে পারে। একইভাবে স্কুলের যে কোনও বিষয় সেটা শিক্ষক সম্পর্কিত হোক কিংবা না হোক তা বাড়িতে শেয়ার করা এবং পরিবার সেটা শুনবে। ফলে কথা না বলার সংস্কৃতি বদলানোর জন্য এই ধরনের একটি বিস্তৃত পর্যায়ে অ্যাডভোকেসি দরকার আছে।’   

জোবায়দা নাসরীন

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক জোবায়দা নাসরীন বলেন,  ‘আমাদের মধ্যে পরিবারে এবং স্কুলসহ সব জায়গায় ভয়ের সংস্কৃতিটা এখনও আছে যে, আমরা খোলাসা করে কিছু বলতে পারি না। এই ভয়ের সংস্কৃতির বাইরে কথা বলার সংস্কৃতি চালু করা জরুরি। সেটা পরিবারের হোক কিংবা স্কুলে হোক। নির্ভয়ে যে সামাজিক ব্যক্তিসত্তার উত্থান সেটিকে বহিঃপ্রকাশ করা, আমরা যে কথা বলার প্ল্যাটফর্ম তৈরি করতে চাই সেটাও কিন্তু একটি ক্ষেত্র তৈরি করতে পারে। কারণ আমার কাছে মনে হয় সামাজিকসত্তা হিসেবে মানুষের পরিপূর্ণ আবির্ভাব হওয়ার কথা, সেটা হচ্ছে না। সেই জায়গায় আমাদের ভয়ের সংস্কৃতিকে সরিয়ে কথা বলার সংস্কৃতি চালু রাখতে হবে।’

নাদিয়া রহমান

ইউল্যাবের সহকারী অধ্যাপক নাদিয়া রহমান বলেন, ‘আমাদের প্রযুক্তির ব্যবহার নিয়ন্ত্রণহীন, এখানে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। বিদেশে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে ওয়াইফাই সীমিত করে দেয়। তারা বেশ কিছু সুনির্দিষ্ট ওয়েবসাইট বন্ধ করে রাখে। আমরা যখন আমাদের বাচ্চাগুলোকে বড় করছি, অবক্ষয় যা হওয়ার হয়ে গেছে। এখন এটাকে ঠিক করার জন্য যা কিছু পুনর্গঠন করা লাগে, করা জরুরি। কারণ যখন কোনও কিছু ভেঙে যায় সেটাকে মেরামত করতে হয়। মেরামত করার জন্য আমার যে জায়গাগুলো যতটুকু বন্ধ করা দরকার, তা বন্ধ করতে হবে।’

উদিসা ইসলাম

এসময় বাংলা ট্রিবিউনের প্রধান প্রতিবেদক উদিসা ইসলাম বলেন, ‘‘আমরা সবাই সব জানি, তাই কোনও কথা শুনতে রাজি হই না। অভিভাবকদের শুনতে হবে এবং ‘আমি’ বলবো এই জায়গা যেমন নিশ্চিত করতে হবে, তেমনি অভিভাবকদেরও পারস্পারিক কথা বলতে হবে। মানুষ প্রকৃতির সঙ্গে সম্পর্কিত, প্রত্যেকটি জিনিসের একটি সুনির্দিষ্ট বয়স আছে। কেন বলা হয় যে ‘১৮ বছরের আগে এই কাজগুলো করেন না’। এটার তো নিশ্চয়ই একটা ব্যাখ্যা আছে। এটাকে ডিঙিয়ে আমরা যখন পার হচ্ছি, আমরা যখন বলছি ‘৭ বছর বয়সী ছেলে কম্পিউটার চালাতে পারে’- এতে কিন্তু আমরা অনেক পিছিয়ে যাচ্ছি। শিশুকে তার শৈশব দিতে হবে। এগুলা বাবা-মা’র দায়িত্ব। না হলে দেখবেন ৪০ বছর বয়সে যা করার কথা ছিল, সে তখন কিছু করার পাচ্ছে না।’

রাজধানীর পান্থপথে বাংলা ট্রিবিউন স্টুডিও থেকে এই বৈঠকি সরাসরি সম্প্রচার করেছে বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল এটিএন নিউজ। পাশাপাশি বাংলা ট্রিবিউনের ফেসবুক ও হোমপেজে লাইভ দেখা যায় এই আয়োজন।