কথিত ভারতীয় গুপ্তচরের পাশে দাঁড়ালেন প্রধানমন্ত্রী মোদি

নরেন্দ্র মোদি

ভারতের ইতিহাসে এই প্রথমবারের মতো বিদেশে গুপ্তচরবৃত্তির অভিযোগে মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত একজন ভারতীয় নাগরিকের হয়ে প্রকাশ্য বিবৃতি দিলেন প্রধানমন্ত্রী।

পাকিস্তানে আটক ভারতীয় নাগরিক কুলভূষণ যাদবের মৃত্যুদণ্ডাদেশ আবারও পর্যালোচনা করতে হবে এবং তার সঙ্গে দেখা করার জন্য ভারতকে ‘কনস্যুলার অ্যাকসেস’ দিতে হবে। দ্য হেগে অবস্থিত ইন্টারন্যাশনাল কোর্ট অব জাস্টিস (আইসিজে) এদিন এই মর্মে রায় ঘোষণা করার পরই প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি কুলভূষণের সমর্থনে টুইট করেন।

রায় ঘোষণার কিছুক্ষণ পরেই তিনি লেখেন, ‘আজকের রায়কে আমরা স্বাগত জানাই। সত্য ও ন্যায়ের জয় হয়েছে। আইসিজে-কে অভিনন্দন, আমি নিশ্চিত কুলভূষণ যাদব সুবিচার পাবেন।’

‘প্রত্যেক ভারতীয় নাগরিকের সুরক্ষা ও কল্যাণের জন্য আমাদের সরকার প্রতিনিয়ত কাজ করে যাবে’,লেখেন তিনি।

পর্যবেক্ষকরা বলছেন, গুপ্তচরবৃত্তির অভিযোগে একটি দেশের আদালত যাকে এর মধ্যেই মৃত্যুদণ্ড দিয়েছে– তার হয়ে প্রধানমন্ত্রীর এভাবে প্রকাশ্য সমর্থন জানানোর ঘটনা কার্যত নজিরবিহীন।

এর আগে সর্বজিৎ সিং নামে আরও এক ভারতীয় নাগরিককে চরবৃত্তির অভিযোগে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছিল পাকিস্তান। সর্বজিৎকে পাকিস্তান থেকে ছাড়িয়ে আনার চেষ্টা অবশ্য সফল হয়নি, তদানীন্তন প্রধানমন্ত্রীও তার হয়ে কোনও বিবৃতি দেননি।

পরে ২০১৩ সালের মে মাসে পাকিস্তানের রাহোর জেলেই সর্বজিৎ সিংয়ের মৃত্যু হয়।

বস্তুত, গোয়েন্দা বিভাগের কর্মকর্তারা একান্ত আলোচনায় স্বীকার করে থাকেন, বিদেশের মাটিতে কর্মরত কোনও চর ধরা পড়ে গেলে, তাকে বেমালুম অস্বীকার করে যাওয়াটাই বহু বছরের রেওয়াজ। এই থিমের ওপর ভিত্তি করে বলিউডে বহু সিনেমাও হয়েছে।

কিন্তু ভারতীয় সেনাবাহিনীর সাবেক সদস্য, কুলভূষণ যাদবের ক্ষেত্রে পুরো বিষয়টা সম্পূর্ণ একটা ভিন্ন মাত্রা পেয়েছে।

একজন কথিত গুপ্তচরকে কেন্দ্র করে দুই দেশ আইসিজে-র শরণাপন্ন হয়েছে, এমন ঘটনাও খুবই বিরল। আইসিজে-তে এই মামলাও চলেছে দীর্ঘ তিন বছরের বেশি সময় ধরে।

স্বভাবতই  বুধবারের (১৭ জুলাই) রায়কে ভারত তাদের বিরাট জয় বলেই মনে করছে। এর প্রধান কারণ, আইসিজে কুলভূষণ যাদবকে কনস্যুলার অ্যাকসেস দেওয়ার জন্য পাকিস্তানকে নির্দেশ দিয়েছে। এর ফলে পাকিস্তানের জেলে গিয়ে ভারতীয় দূতাবাসের কর্মকর্তারা কুলভূষণের সঙ্গে দেখা করতে পারবেন।

দ্বিতীয়ত, কুলভূষণের মৃত্যুদণ্ডও আপাতত স্থগিত করা গেছে। আইসিজে’র নির্দেশ অনুযায়ী পাকিস্তানের আদালতকে তার বিচারের প্রক্রিয়া আবারও নতুন করে সম্পাদন করতে হবে।

ভারতের সরকারি কর্মকর্তারা বলছেন, কুলভূষণ মামলায় তাদের সাফল্যের একটা বড় কারণ পাকিস্তান এটা প্রমাণ করতে পারেনি যে, ওই ভারতীয় নাগরিককে তারা পাকিস্তানের মাটি থেকেই আটক করেছে। ভারতের দাবি, ওই ব্যক্তি ইরানের চাবাহার বন্দরের কাছে নিজে ব্যবসার কাজে থাকতেন। সেখান থেকেই তাকে অপহরণ করে সীমান্ত পেরিয়ে পাকিস্তানে নিয়ে যাওয়া হয় এবং পাকিস্তানের হাতে তুলে দেওয়া হয়।

উল্টোদিকে পাকিস্তানের দাবি, কুলভূষণ যাদব ভারতীয় নৌবাহিনীরই একজন সার্ভিং অফিসার ছিলেন– যাকে তারা পাকিস্তানের মাটিতে চর হিসেবে ব্যবহার করেছিল। তিনি ধরা পড়ে যাওয়ার পরই তাকে যথাযথ বিচার প্রক্রিয়ার মাধ্যমে দণ্ডিত করা হয়েছে।

এখন এই মামলায় আন্তর্জাতিক আদালতের রায় আসার পর কুলভূষণ যাদবের শেষ পর্যন্ত কী পরিণতি হয়, তা অবশ্যই দেখার বিষয় হবে।

কিন্তু পর্যবেক্ষকরা বলছেন, প্রধানমন্ত্রী মোদি এরমধ্যেই কুলভূষণের সমর্থনে বিবৃতি দিয়ে বুঝিয়ে দিয়েছেন, তিনি এই ঘটনায় শেষ পর্যন্ত যেতে প্রস্তুত আছেন এবং পাকিস্তানের ওপর এ ব্যাপারে যতটা সম্ভব চাপ দিয়ে যাবেন।